সুপ্রিম কোর্টে সাময়িক স্বস্তি রাজ্যের। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, নবম, দশম, একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস নেওয়ার জন্য আপাতত ‘টেন্টেড’ (অযোগ্য) তালিকায় নাম না-থাকা শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্কুলে পড়াতে পারবেন।
৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাকরি করতে পারবেন রাজ্যের ‘যোগ্য’ চাকরিহারা শিক্ষকরা, রায় ঘোষণা করে সাময়িক স্বস্তি দিল সুপ্রিম কোর্ট। ২৬ হাজার শিক্ষকদের মধ্যে যাঁদের ‘অযোগ্য’ বলে শনাক্ত করা গেছে, তাঁদের বাদ দিয়ে বাকিরা আপাতত চাকরিতে বহাল থাকবেন। এমনটাই রায় দিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না।
অর্থাৎ, এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে যোগ্য-অযোগ্য শনাক্ত না হওয়া শিক্ষকদের আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজ করার সুযোগ দিল সুপ্রিম কোর্ট। আদালত জানিয়েছে, ৩১ মে-র মধ্যে যোগ্যদের বাছাই করার নতুন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। ততদিন চাকরি করবেন সব শিক্ষক।
প্রসঙ্গত, গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি নিয়ে এখনও কোনও নির্দেশ নেই আদালতের। তবে পড়ুয়াদের শিক্ষা নিয়ে চিন্তা’র কারণে শিক্ষকদের বহাল রাখার এই রায় দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
এপ্রিল মাসের ৩ তারিখে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ বহাল রেখে সুপ্রিম কোর্ট এসএসসি মামলায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিলই করে। এই রায়ের ফলে চাকরিহারা শিক্ষকরা তো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েনই, তার উপর রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থাও যে সঙ্কটে পড়ে, তা বলাই বাহুল্য। তাই আপাতত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টায় সুপ্রিম কোর্টে বিশেষ আর্জি জানিয়েছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। তাঁদের সেই আবেদনেকই শুনানি হল সুপ্রিম কোর্টে।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরিহারা প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক–শিক্ষাকর্মীর (এঁদের মধ্যে ১৭ হাজার ২০৬ জনই শিক্ষক-শিক্ষিকা) নিয়োগ বাতিলের জেরে আদালতে মডিফিকেশন অ্যাপ্লিকেশন করেছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। এ দিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না জানান, শুধুমাত্র ‘যোগ্য’ শিক্ষকরাই আপাতত কাজ চালাতে পারবেন। পড়ুয়াদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই আদালতের এই সিদ্ধান্ত বলে জানান তিনি।
পর্ষদের আর্জি ছিল, যাঁরা ‘টেন্টেড’ বা ‘অযোগ্য হিসাবে চিহ্নিত’ নন, আপাতত তাঁদের চাকরি বহাল থাক। রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার কথা মাথায় রেখেই এই আবেদন করেন তাঁরা। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার বেঞ্চে তার শুনানি হল আজ।
তবে রাজ্যের জন্য বেশ কিছু শর্তও বেঁধে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শর্ত হলো, ৩১ মে-র মধ্যে শিক্ষক নিয়োগের নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে এবং ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে রাজ্যকে। ফলে চাকরিহারা যোগ্যদের পুরোপুরি স্বস্তি ফেরার জায়গা নেই বলে মনে করছেন আইনজীবীদের একাংশ। তবে যতদিন তাঁরা ক্লাস করাবেন, সেই সময়ের বেতন পেতে তাঁদের কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয় বলেও জানাচ্ছেন তাঁরা।
আদালত কী কী নির্দেশ দিয়েছে?
সুপ্রিম নির্দেশ: এক সপ্তাহের মধ্যে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে
ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়োগ শেষ করতে হবে
প্রথমে নতুন রুল ফ্রেম তৈরি করতে হবে
এরপর বিজ্ঞাপন দিতে হবে
৩১ মে-র মধ্যে নিয়োগের বিজ্ঞাপন দিতে হবে।
বিজ্ঞাপনের কপি সহ হলফনামা দিয়ে ৩১ মে-র মধ্যে কোর্টকে জানাতে হবে
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়োগ শেষ করতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মোতাবেক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যদি বিজ্ঞাপন দিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু না হয়, তাহলে রাজ্য সরকার-পর্ষদ প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সুপ্রিম কোর্ট। আর্থিক জরিমানা করা হতে পারে। কড়া নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।