কোটা সংস্কার আন্দোলন সরকার ফেলার চেষ্টা, দাবি হাসিনা সরকারের, সরকারি হিসাবে নিহত অন্তত ১৪৭,পাশাপাশি বেসরকারি ভাবে আর একটি তালিকা মানবাধিকার কর্মীদের তরফে প্রকাশ করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে তালিকাটি করা হয়েছে।
দেশের সময় ওয়েব ডেস্ক: বাংলাদেশে কোটা বিরোধী আন্দোলনে পুলিশ ও ছাত্রলিগের সঙ্গে সংঘর্ষে কতজনের মৃত্যু হয়েছে? বেসরকারি নানা সূত্র থেকে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে সে দেশের প্রথমসারির সংবাদমাধ্যম ২১০জনের মারা যাওয়ার খবর দিয়েছে। অন্যদিকে, সরকারিভাবে জানানো হয়েছে মৃতের সংখ্যা ১৪৭। তবে সংখ্যা বাড়তে পারে বলে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছেন।
বেসরকারি মতে নিহত ২১০ জনের মধ্যে ১৫০ জনের পরিচয় জানা গিয়েছে। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, নিহতদের মধ্যে ১৯ জন আছেন যাদের বয়স ৪ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সির সংখ্যা ৯৮। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক কর্তা জানিয়েছেন, ওই দেশে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সিদের তরুণ বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
কোটা বিরোধী আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে সংগঠন। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় আওয়ামী লিগের ছাত্র সংগঠন ছাত্র লিগ বাদে প্রায় সব সংগঠন। সংঘর্ষের এক পবে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্র লিগের সঙ্গে বাকিদের সংঘর্ষ হয়েছিল। তাতে ছাত্র লিগেরও বেশ কয়েকজন নিহত হন। চট্টগ্রামে ছাত্র লিগের কিছু সমর্থককে ছয়তলা বাড়ির ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া হয়। অনেকের রক্তের শিরা কেটে দেওয়া হয়েছিল বলে আওয়ামী লিগের অভিযোগ। সব মিলিয়ে নিহত পড়ুয়ার সংখ্যা ৪৫। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে ছাত্র লিগের সমর্থকেরাও আছেন।
সরকারি হিসাবে দেখা যাচ্ছে ছাত্রদের আন্দোলন হলেও নিহতের তালিকায় তারা সংখ্যায় কম। মৃতদের মধ্যে হকার, রিরশচালক, পথচারী, সেলসম্যান, হোটেল কর্মচারী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আছেন। নিহত হন কর্তব্যরত চারজন পুলিশ ও চারজন সাংবাদিক। বেশিরভাগেরই মৃত্যু হয় গুলিতে। রাবার বুলেট এবং ছড়ড়া গুলি এবং ধারানো অস্ত্রের আঘাতে মৃত্যুর ঘটনাও আছে। পুলিশ নাকি অন্য কারও গুলিতে মৃত্যু হয়েছে সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে ময়না তদন্ত রিপোর্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশে চলতি সংঘর্ষ চলেছিল এ মাসের ১৬ থেকে ২১ তারিখ পর্যন্ত। সরকারিভাবে নিহত ১৪৭ জনের মধ্যে ৮৮জনই মারা গিয়েছেন ঢাকায়। নিহতদের মধ্যে দশ বছরের কম বয়সি চারটি শিশু আছে। সেই শিশুরা কেউ রাস্তার ধারে বাড়ির বারান্দায় খেলছিল, কেউ বাবা-মায়ের সঙ্গে রাস্তার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার ফের আশ্বাস দিয়েছেন, প্রতিটি মৃত্যুর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে এবং নিহতদের অসহায় পরিবারগুলিকে সরকার আর্থিক এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেবে।
বিরোধী বিএনপি-র ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল রবিবার অভিযোগ করেছে, মধ্যরাতে তাদের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে ঢুকে গণগ্রেফতার করা হচ্ছে। পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন করা হচ্ছে তাদের। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের একটি সংগঠন ইউট্যাব-ও বিভিন্ন পেশার মানুষকে ঢালাও গ্রেফতারের নিন্দা ও প্রতিবাদ করেছে।
২০ জুলাই ভোর থেকে কার্ফু জারির পাশাপাশি দেশের সর্বত্র সরকার সেনা মোতায়েন করার পরেই বাংলাদেশে অশান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ দিন সেনাবাহিনীর পক্ষে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, সমাজমাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা অভিযোগ প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু তাতে ক্ষান্ত না হয়ে সেনাবাহিনী দেশের শান্তিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে অসামরিক প্রশাসনকে সাহায্য করবে। নাশকতাকারীদের বিষয়ে মানুষকে সতর্ক করে সেনাবাহিনী বলেছে, আপাতত রাজপথেই থাকছে তারা।