Hilsa বন্ধ বাংলাদেশের মাছ আমদানি,বর্ষায় বাঙালির পাতে পদ্মার ইলিশ পড়বে কি? সীমান্ত বাণিজ্য স্বাভাবিক হবে কবে ?

0
111

সৃজিতা শীল,পার্থসারথি নন্দী, পেট্রাপোল: বাংলাদেশের অশান্তির প্রভাব পড়েছে এ পারের বাঙালির পাতে। ছাত্র আন্দোলনে বাংলাদেশে বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা। দেশজুড়ে জারি করা হয়েছে কার্ফু। তার প্রভাব পড়েছে হাওড়ার পাইকারি মাছ বাজারে। অন্যান্য অনেক মাছের মতো বন্ধ ইলিশ মাছ সরবরাহ। বনগাঁর পেট্রাপোল সীমান্ত বন্ধ থাকার ফলে পদ্মার ইলিশ মাছ আদৌ কবে এ দেশে এসে পৌঁছবে তা বলতে পারছেন না কেউ।

এপার বাংলায় বর্ষা নামলেও সেই অর্থে এখনও রাজ্যে আসেনি ইলিশ। কম ওজনের ছোট ইলিশ যেটুকু বাজারে উঠছে তাতেও আগুনের ছেঁকা। মাঝেমাঝে বৃষ্টি হলেও বঙ্গোপসাগরে জালে ধরা দেয়নি ইলিশ। বাংলাদেশের অস্থির পরিস্থিতিতে খুব তাড়াতাড়ি পদ্মার ইলিশ আসার সম্ভবনাও দেখছেন না মাছ ব্যবসায়ীরা।

বনগাঁর মাছ ব্যবসায়ী ( এক্সপোর্টার) রামপ্রসাদ বিশ্বাস  বলেন, ‘পদ্মার ইলিশ কবে এ দেশে আসবে, তা এই মুহুর্তে বলা সম্ভব নয়। বাজারে অনেকেই পদ্মার ইলিশের খোঁজ করছেন। কিন্তু সাপ্লাই দিতে পারছি না।’ বনগাঁর এক মাছ বিক্রেতা গো্পাল হালদার বলেন, ‘বর্ষার মরশুমে বা পুজোয় বাংলাদেশের ইলিশ না ঢুকলে ব্যবসা খারাপ যাবে।’

পেট্রাপোল স্থলবন্দরের শুল্ক দপ্তরের ক্লিয়ারিং এজেন্ট সংস্থার সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ইলিশ কবে আসবে আমাদের জানা নেই। আপাতত সেই লক্ষণও নেই। ওই দেশের যা পরিস্থিতি তা খুবই চিন্তার।’ আপাতত এ রাজ্যের ব্যবসায়ীরা তাকিয়ে আছেন কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। তার পরই ফের শুরু হতে পারে ব্যবসা।

গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ। ছাত্র আন্দোলনের জেরে পুলিশ, র‍্যাফ এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। এই পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে হাওড়া পাইকারি মাছ বাজারে। হাওড়া বাজারে যেখানে প্রতিদিন ১০০ টন ট্যাংরা, ভেটকি, পাবদা, পাঙাস, পমফ্রেটের মতো বিভিন্ন ধরনের মাছ বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা হতো তা গত তিন চার দিন পুরোপুরি বন্ধ।

ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদ জানিয়েছেন, ‘ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকায় ব্যাঙ্কের মাধ্যমে টাকা পেমেন্ট করা যাচ্ছে না। নতুন অর্ডারও দিতে পারছি না। আইনশৃঙ্খলার জন্য বাংলাদেশের গাড়ি এই রাজ্যে কম আসছে। ফলে আমরা সমস্যায় পড়েছি। প্রতিদিন গড়ে আড়াই কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে।’

তাঁর কথায়, ‘প্রতি বছর বর্ষাকালে বাংলাদেশ থেকে পদ্মার ইলিশ আমদানি করা হয়। এ বারও ইলিশ আমদানির জন্যে চিঠি লেখার কাজ শুরু হলেও ইলিশ পাওয়া যাবে কিনা তা এখনও নিশ্চিত নয়।’ তাঁর আশঙ্কা, এই রকম অশান্তি চললে ওপার বাংলার ইলিশ নাও ঢুকতে পারে।

বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের রবিবার রায়ের পরে দ্রুত সীমান্ত-বাণিজ্য স্বাভাবিক হতে পারে বলে আশা বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত নানা মহলের। তবে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর পেট্রাপোল দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে পণ্য রফতানি-আমদানির কাজ রবিবারও কার্যত বন্ধ ছিল । সোমবার সকালে গিয়ে দেখা গেল বন্দর দিয়ে মানুষের যাতায়াত প্রায় নেই। কার্যত মাছি তাড়াচ্ছেন এখানকার   মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রের কর্মীরা। কোন ক্রেতাদের দেখানেই চায়ের দোকান, ফলের দোকান, মিষ্টির দোকান গুলিতে । অটো বা যাত্রিবাহী গাড়ির চালকেরাও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বেকার বসে থাকছেন। কবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, সেই অপেক্ষায় রয়েছেন সকলে।

রবিবার পেট্রাপোল থেকে বাংলাদেশের বেনাপোল বন্দরে হাতেগোনা কয়েকটি পচনশীল পণ্য ভর্তি ট্রাক গিয়েছে। সাধারণ পণ্যের রফতানি বন্ধ ছিল। পাশাপাশি, পণ্য আমদানির কাজ বন্ধ ছিল। শনিবার সকাল ১০টার পর থেকে পণ্য রফতানি কার্যত বন্ধ। কেবলমাত্র পচনশীল পণ্যের কিছু ট্রাক বেনাপোলে ঢুকছে। ল্যান্ড পোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার পেট্রাপোলের ম্যানেজার কমলেশ সাইনি বলেন, ‘‘পেট্রাপোল বন্দর খোলা আছে। রবিবার পচনশীল পণ্যভর্তি ট্রাক বাংলাদেশে গিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে পণ্য নিয়ে আসা ট্রাক এ দিন পেট্রাপোল থেকে বেনাপোলে ফিরে যেতে শুরু করেছে। সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত এক প্রকার বন্ধই ছিল আমদানি রফতানির কাজ’’ ।

যদিও রবিবার বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট সে দেশের সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ ব্যবস্থা সংস্কার করতে বলায় পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হওয়ার আশা করছেন এ দেশের আমদানি-রফতানি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন মহল। আদালের রায়ের কথা জানতে পেরে পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আশা করছি, বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে ও দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। বাণিজ্যের কাজ স্বাভাবিক হবে। এরপরেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে বুঝতে হবে, অন্য কোনও কারণ আছে।’’ কার্তিক বাবুর কথায়, শনি এবং রবিবার বাণিজ্যে প্রভাব পড়ায় প্রায় ৩০০ কোটি বৈদেশিক মুদ্রা আয় কম হয়েছে। ক্লিয়ারিং এজেন্ট সংগঠন সূত্রে জানানো হয়েছে, এ দেশ থেকে পণ্য নিয়ে বেনাপোলে গিয়ে প্রায় ২৭১টি ট্রাক আটকে পড়েছে।

ছবি পার্থ সারথি নন্দী I

কার্তিক বলেন, ‘‘বেনাপোলের গুদামে জায়গা না থাকায় এবং গুদাম থেকে ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় পণ্য যেতে না পারায় ভারতীয় ট্রাকের পণ্য খালি করা যাচ্ছে না। ওই সব ট্রাকে থাকা ভারতীয় চালক ও খালাসিদের এ দেশে খেতে আসার অনুমতি দিয়েছে বিএসএফ। পণ্য দ্রুত খালি করতে ও দেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’’

Previous articleMadhya Pradesh দুই মহিলাকে জ্যান্ত পুঁতে দেওয়ার চেষ্টা মধ্যপ্রদেশে ! কেউ দাঁড়িয়ে দেখলেন, কেউ ভিডিয়ো করলেন
Next articleIncome Tax Budget 2024 বাজেটে আয়করে বড় ছাড় , ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, এক নজরে দেখুন নতুন কাঠামো

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here