পুরী :জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা পালিত হবে আগামী ৭ জুলাই। সেদিন রথে চড়ে মাসি গুণ্ডিচার বাড়ি যাবেন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। প্রতি বছর রথযাত্রা উপলক্ষ্যে পুরীতে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার জন্য তিনটি পৃথক রথ প্রস্তুত করা হয়। অক্ষয় তৃতীয়া থেকে শুরু হয় রথ নির্মাণের কাজ।
শাস্ত্র অনুসারে বিষ্ণুর চার ধামের অন্য়তম হল পুরী। বাকি তিনটি ধাম হল বদ্রীনাথ, দ্বারকা ও রামেশ্বরম। প্রচণ্ড গরমে শান্তি পেতে জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমা তিথিতে ১০৮ কলসি জল ঢেলে স্নান করানো হয় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে এরপর জ্বর আসে তিন ভাই বোনের। সর্দি জ্বরের কারণে ১৫ দিন তাঁদের অন্য একটি কক্ষে আলাদা রাখা হয়। রাজবৈদ্যের দেওয়া পাঁচন খেয়ে তাঁরা সুস্থ হন। এরপর রথে চড়ে মাসির বাড়ি বেড়াতে যান জগন্নাথ,বলরাম ও সুভদ্রা। তাঁদের এই যাত্রাই রথযাত্রা নামে পরিচিত।
প্রতি বছর কাঠ কেটে নতুন রথ তৈরি করা হয়। অক্ষয় তৃতীয়া থেকে শুরু হয় রথ নির্মাণের কাজ। কোনও সাধারণ কুঠার দিয়ে এই কাঠ কাটা হয় না। প্রথা মেনে এই কাঠ কাটা হয়ে থাকে সোনার কুঠার দিয়ে।
প্রাচীন কাল থেকেই একই বিধি ও প্রথা মেনে পালিত হয়ে আসছে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা। এই রথযাত্রা উপলক্ষ্যে প্রাচীন কালে যে সব বিধি আচার পালন করা হত, আজও সেই সব বিধি আচার পালন করা হয়ে থাকে। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে জগন্নাথ দেব হলেন পুরীর রাজা। রাজার জন্য রথ নির্মাণের কাঠ তাই সোনার কুঠার দিয়েই কাটা হয়ে থাকে।
অক্ষয় তৃতীয় থেকে শুরু হয়ে পুরো ২ মাস সময় লাগে তিনটি রথ প্রস্তুত করতে। কোন গাছ রথ তৈরিতে ব্যবহার করা হবে, তা আগে চিহ্নিত করা হয়। নির্দিষ্ট গাছটি কাটার জন্য মন্দির কমিটিকে বন বিভাগের থেকে অনুমতি নিতে হয়। এরপর মন্দিরের প্রধান পুরোহিত জঙ্গলে যান এবং যে গাছ কাটা হবে, তার পুজো করেন। যে ছুতোর পরিবার বংশানুক্রমে রথযাত্রার জন্য গাছ কেটে আসছে, সেই পরিবারের সদস্য প্রথমে সোনার কুঠার জগন্নাথ দেবের পায়ে স্পর্শ করেন, তারপর জগন্নাথের আশীর্বাদ নিয়ে গাছ কাটেন।
রথ নির্মাণ করতে কোনও পেরেক বা কাটা কাঠ ব্যবহার করা যায় না। রথের কাঠ হতে হবে সোজা ও খাঁটি। রথ নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কারিগররা মন্দির চত্বরেই থাকেন এবং তাঁদেরও অনেক নিয়ম মেনে চলতে হয়। এই সময় কারিগরদের নিরামিষ খেতে হয় ও ব্রহ্মচর্য পালন করতে হয়। কোনও কারিগরের পরিবারের এই সময় কোনও অশুভ ঘটনা ঘটলে তাঁকে রথ তৈরির কাজ থেকে সরে আসতে হয়।