বিজেপির সব প্ল্যান ভেস্তে দেব। ওরা এবার আর কিছুতেই ক্ষমতায় আসবে না। শনিবার আসানসোলের কুলটির জনসভা থেকে জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে দু’দফার ভোটের পর তাঁর গলায় প্রত্যয়ের সুর। বললেন, বিজেপি শুধু মিথ্যে কথা বলে। তৃণমূল কাজ করছে, ওরা শুধু প্রচার করছে। বিজেপি করলে বেল, আর তৃণমূল করলে জেল। এসব চলবে না। তৃণমূল সুপ্রিমোর হুঙ্কার, বাংলায় কিছু ঘটলেই এনআইএ, এনএসজি পাঠিয়ে দিচ্ছে। আর উত্তরপ্রদেশে? সেখানকার রিপোর্ট বের হচ্ছে না কেন? প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করে মমতার আক্রমণ, সন্দেশখালি নিয়ে প্ল্যান করলেন আর মণিপুর নিয়ে কী করলেন?
মমতা বলেন, সন্দেশখালিতে যেন যুদ্ধ চলছে, কী প্রমাণ আছে, ওরা বোমা নিয়ে যায়নি? তাঁর প্রশ্ন, মণিপুরে আগুন জ্বলছে আর প্রধানমন্ত্রী কী করছেন? মমতার তোপ, দুই দফার ভোটের পরেই ঘাবড়ে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেটা বোঝা যাচ্ছে।
বিজেপি কোনওভাবে জিততে পারবে না। ওরা দুশো পেরবে না। এসএসসির চাকরি বাতিল নিয়ে এদিনও বিজেপিকে নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, চাকরি তো দেয় না। কিন্তু চাকরি কেড়ে নেয়। এরা চাকরিখেকো। যাদের চাকরি বাতিল হয়েছে, তাদের পাশে দাঁড়াব আমি এবং আমার সরকার। প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করে মমতা বলেন, শুক্রবার মোদী বলেছেন, বাংলায় তৃণমূলের জন্য উন্নয়ন থেমে গিয়েছে। উনি জানেন না, ভারতের জিডিপি ৮.৮৭ শতাংশ। আর বাংলায় ১১.৮৪ শতাংশ। মমতার দাবি, আগে মোদী পদত্যাগ করুন। তার পর এসব বলুন। আশঙ্কা প্রকাশ করে মমতার দাবি, বিজেপি থাকলে ভোট মিটে গেলেই গ্যাসের দাম বাড়বে। আমরা যা বলি, তাই করি। আমরা যা দেব বলি, তাই দিই। বিজেপি করে না। আমরা বাংলা জুড়ে উন্নয়ন করছি। গোটা বিশ্বে বাংলা এগিয়ে।
মমতা বলেন, আমরা অনেক বাড়ি তৈরি করে দিয়েছি। এগারো লক্ষ বাড়ির তালিকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। আমরা ওদের দয়া চাই না। সবার বাড়ি করে দেব। ডিসেম্বর মাসে ৬০ হাজার টাকা দেব। কয়েক মাসের মধ্যে আরও ৬০ হাজার দেব। আপনারা বাড়ি বানিয়ে নেবেন। মমতার তোপ, ওষুধের দাম বাড়িয়েছে বিজেপি সরকার। প্রেশার, সুগারের ওষুধের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলে মোদীর দাম কমেছে।
সন্দেশখালিতে সিবিআই-এনএসজি হানা নিয়ে সরব মুখ্যমন্ত্রী এদিন ভিড়ে ঠাসা জনসভা থেকে বলেন, বাংলায় চকোলেট বোমা ফাটলেও তৎপর হয়ে ওঠে সিবিআই, এনআইএ, এনএসজির মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি। শুক্রবার সন্দেশখালি থেকে যে অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধারের কথা সিবিআই জানিয়েছে, তা আদৌ ওখান থেকে পাওয়া গিয়েছে কি না, সে বিষয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।
আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তথা অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিন্হার হয়ে প্রচারের জনসভা থেকে সন্দেশখালিতে সিবিআই-এনএসজি অভিযান নিয়ে সরব হয়ে মমতা বলেন, ‘‘কেন মিথ্যা কথা বলে বিজেপি? কেন এখানে চকোলেট বোমা ফাটলেও সিবিআই, এনআইএ, এনএসজির দরকার পড়ে? এরপরই তাঁর সংযোজন, যেন যুদ্ধ চলছে। পুরোটাই একতরফাভাবে হয়। রাজ্য পুলিশকে কিছু জানানো হয় না। কেউ জানে না কোথা থেকে কী পাওয়া গিয়েছে। হয়তো ওরাই গাড়ি থেকে নিয়ে এসে দেখিয়েছে। কোনও প্রমাণ নেই।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার সন্দেশখালিতে হানা দিয়েছিল সিবিআই। সেখানে প্রচুর অস্ত্র এবং বোমা মজুত রয়েছে, এমন খবর পেয়ে শাহজাহান শেখের এক ঘনিষ্ঠের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। মাটি খুঁড়ে প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র ও বোমা মেলে। পরে সেখানে পৌঁছয় এনএসজি। অস্ত্র খুঁজে বার করতে নিয়ে আসা হয় স্বয়ংক্রিয় রোবট। সন্দেশখালিতে তল্লাশি চালিয়ে বহু অস্ত্রশস্ত্র এবং কার্তুজ উদ্ধার করে সিবিআই। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, পুলিশের ব্যবহারের রিভলভার। উদ্ধার হয়েছে কার্তুজ, দেশি বোমা। সিবিআইয়ের জারি করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়েছে, অস্ত্রের পাশাপাশি উদ্ধার হয়েছে নথি। পাওয়া গিয়েছে জেলবন্দি তৃণমূল নেতা শাহজাহানের সচিত্র পরিচয়পত্র। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় শাসকদল তৃণমূলকে আক্রমণ করেছে বিজেপি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এদিন পাল্টা বিজেপিকে নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
শনিবার উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদে এক বিজেপি নেতার বাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তৃণমূলের অভিযোগ, মজুত করা বোমা থেকেই এই বিস্ফোরণ। সেই ঘটনা নিয়েও এদিন বিজেপিকে আক্রমণ করেছেন মমতা। তাঁর অভিযোগ, বোমাবাজি করে ভোটে জিততে চাইছে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এখানে আসার আগে শুনলাম এক বিজেপি নেতার বাড়িতে বোমা মজুত রয়েছে। ভাবছে বোমা মেরে ভোটে জিতে যাবে।
মমতা বলেন, আগেরবার টাকা ছড়িয়ে লোকসভা ভোটে জিতেছিলেন আসানসোলের বিজেপি প্রার্থী। এবারও টাকা ছড়ানোর চেষ্টা করা হবে। টাকা দিতে এলেই আগে ১৫ লক্ষ চাইবেন। বিজেপিকে আক্রমণ করার পাশাপাশি মমতার প্রতিশ্রুতি, আসানসোল এবং সংলগ্ন এলাকায় শিল্প হলে বাংলার এক লক্ষ ছেলেমেয়ের চাকরি হবে। শুনছি, এখানকার কয়লাখনি বিক্রির চক্রান্ত চলছে। মমতার কটাক্ষ, এখান থেকে কর তুলে নিয়ে গেলেও আমরা সুবিধা পাই না। রেশন বাবদ ১২ হাজার কোটি টাকা দেয়নি কেন্দ্র। এত মিথ্যাবাদী প্রধানমন্ত্রী আমি আগে দেখিনি। শুধু বাংলাকে বদনাম করার চেষ্টা করেন। বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্র সিং আলুওয়ালিয়ার উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘আপনিও তো শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ। যখন শিখ পুলিশকর্মীকে ‘খলিস্তানি’ বললেন একজন গদ্দার, তখন কেন চুপ ছিলেন?
এদিন দুর্গাপুর থেকে হেলিকপ্টারে চড়তে গিয়ে চোট পান মুখ্যমন্ত্রী। তবে সামলে নিয়ে সভাস্থলে পৌঁছন। আজ মালদহে প্রচার রয়েছে তাঁর।