দেবন্বীতা চক্রবর্তীঃ বেনারসের দ্বাদশ্বমেধ ঘাট…দলে দলে ভক্ত গঙ্গাবক্ষ থেকে নৌকা থেকে উঠে আসছেন , ঘাটের ধারে শামিয়ানা খাটিয়ে চলছে মীরার ভজন ৷দূরে …অনেক দূর থেকে ভেসে আসছে পেল্লায় একটি বজরা ….তার ছাদে বসে আছেন কালো কোট আর সফেদ ধুতি পরিহিত বুককাঁপানো ভিলেন মগনলাল মেঘরাজ …..আসছেন মছলি বাবর দর্শনে ৷তিনি শামিয়ানার দিকে যাওয়ার আগেই তাকে তীব্র চোখে জরিপ করে নিচ্ছে ফেলুদা, তোপসে আর লালমোহন বাবু ৷
অসাধারন সিনেম্যাটোগ্রাফির সাথে এই চিরপরিচিত দৃশ্যটি সকলেরই মনে গেঁথে আছে যার জন্য তিনি হলেন অস্কার জয়ী পরিচালক সত্যজিৎ রায় ৷২রা মে তার ৯৮ তম জন্মদিনে তাঁকে স্মরণ করলেন তামাম সিনেমাপ্রেমী বাঙালির সাথে তাঁর সুযোগ্য পুত্র সন্দীপ রায় ৷ যার অক্লান্ত পরিশ্রমে সফল বাংলার চলচিত্র জগতে উজ্জ্বল হয়ে আছে কয়েকটি অসাধারন সিনেমা গুপি গাইন বাঘা বাইন, জয় বাবা ফেলুনাথ, সোনার কেল্লা, আগন্তুক, হীরক রাজার দেশে, চারুলতা, অপরাজিত, কাপুরুষ মহাপুরুষ , নায়ক ও পথের পাঁচালির মতো কিছু অমর সৃষ্টি ।
জন্মদিনটিতে মহারাজা কীভাবে কাটাতেন তাই নিয়ে সন্দীপ বাবু বলেন ” জন্ম দিনে বাবা বাঙালি খাবার খেতে বেশী পছন্দ করতেন , তার মধ্যে প্রধান হিসাবে থাকত পাঁঠার মাংস এবং দই । পরে ৭০ এর দশকে শারীরিক অসুস্থতার কারনে এই দিনে যাতে বেশি মানুষের আনাগোনা না হয় তাই ডাক্তারের কড়া নির্দেশে তিনি বাড়ি ছেড়ে বাইরে কাটিয়ে আসতেন ৷ যদিও এটি তার তীব্র অনিহার কারন ছিল ৷ ”
আর মাত্র দুই বছর পরেই তাঁর জন্ম শতবর্ষ হতে চলেছে তাই নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনার কথা কিছু আছে কিনা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান “শতবর্ষে তাঁর লেখা বা সিনেমা নিয়ে বড় কিছুর চিন্তা ভাবনা চলছে যেমন সেমিনার বা টকশো, কিছু বাঙলা ও ইংলিশ পাবলিকেশনের ইচ্ছাও আছে , তাছাড়াও রায় সোসাইটি থেকেও বিশেষ কিছু অনুষ্ঠান তো অবশ্যই থাকবে ৷” এবার সত্যজিৎ পুত্রের কাছে বাবার প্রিয় কাজ কোনটা প্রশ্ন করাতে তিনি হাসি হাসি মুখ করে জবাব দেন “গুপি গাইন বাঘা বাইনের প্রত্যেকটি ছবিই আমাদের সকলেরই প্রিয় , এই ধরনের ছবি পরে আর একটিও কোনোদিন তৈরী হয়নি , হওয়া সম্ভব ও নয়, সবচেয়ে বড় কথা এই ছবির মতো খাটতে বাবাকে আমি কোনো দিন ই দেখিনি, কস্টিউম, সেট ডিজাইন , সংলাপ, চরিত্র সব তিনি একা হাতে তৈরী করেছিলেন । কারন গল্প গুলো ছিল রূপকথার গল্প বাস্তবের সাথে যার কোনো মিল নেই ৷তাই গুপি গাইন বাঘা বাইনের ৫০ বছর উপলক্ষ্যে প্রর্দশনীর আয়োজন হয়েছিল ৷
ধান ক্ষেতের মাঝখানের আল দিয়ে একটি কিশোরী ও এক বালকের ছুটে যাওয়া …. দূরের ট্রেন লাইনের দিকে তাকিয়ে থাকা নিষ্পলক দুই জোড়া চোখ ….আর বৃষ্টিতে সপসপিয়ে ভিজে ওঠা শাড়ির আঁচল দিয়ে পরম মমতায় ছোট্ট ভাইটিকে নিজের কোলের কাছে টেনে রাখা…..এরকম অনেক অদ্বিতীয় দৃশ্য গুলির সৃষ্টিকর্তার জন্মদিনে বলতেই হয় ……” মহারাজা তোমারে সেলাম…”