ছোট থেকেই পড়াশুনার প্রতি তেমন ঝোঁক ছিল না, তার বদলে ভালো লাগতো কাদামাটির দলা পাকিয়ে খেলা করে, দিনের বেশিরভাগ সময় কেটে যেত। গ্রামের বাড়ির নদীর ধারে৷কাদা মাটি নিয়ে খেলতে খেলতেই একদিন খেলার ছলেই গড়ে ফেলেন দেবী সরস্বতীর মূর্তি, স্কুলে সরস্বতী পুজোর আগে সেই মূর্তি নিয়ে গিয়ে দাবি করেন তার মূর্তির পুজো করবার জন্য, নিচু জাতের ছেলে হওয়ায় স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন তার মূর্তি স্কুলে পুজো করা সম্ভব নয়! স্কুল থেকে সেই মূর্তি নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় ভেবেছিলেন জীবনে আর কখনো মূর্তি করবেন না, বাড়ি ফিরে মায়ের কাছে খুলে বলেছিলেন গোটা ঘটনা ,নিচু জাতের ছেলে বলে তার মূর্তি আজ পুজো পেল না, সান্ত্বনা দিয়েছিলেন মা, উৎসাহ জুগিয়েছিলেন আরো ভালো করে মূর্তি গড়ার, সেই শুরু, জাত পাতের মিথ্যা কোন্দলে না জড়িয়ে শুরু করেন মূর্তি গড়া শেখার কাজ। গুরু প্রয়াত কালিপদ মণ্ডল এর কাছে মূর্তি গড়ার তালিম নিয়ে নিজেই হয়ে ওঠেন একজন স্বয়ংসম্পূর্ণ শিল্পী৷ মাঝে কেটে গেছে প্রায় 35 থেকে 40 বছর, সেদিনের সেই ছোট্ট ছেলেটি আজ বছর 55র ভগিরথ সরকার, বর্তমানে বনগাঁ মহকুমার এক পরিচিত প্রতিমা শিল্পী, শুধু বনগাঁ মহকুমা নয় বর্তমানে তার তৈরি প্রতিমা পাড়ি দিচ্ছে গোটা রাজ্যের পাশাপাশি বিদেশেও, তার তৈরি প্রতিমা স্কুলে পুজো পায়নি বলে অভিমানে স্কুল ছেড়ে দিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু বর্তমানে তার হাতে গড়া প্রতিমায় পূজিত হয় সেই স্কুলে, বর্তমান ঠিকানা বনগাঁ থানা এলাকার গোবরাপুর বাজারের কাছে, সেখানেই লোকের দান করা ছোট্ট এক চিলতে ঘর, সেই ঘরে বসেই নিরবে প্রতিমা তৈরি করে চলেন ভগিরথ বাবু ,প্রতিমা তৈরীর নেশায় মগ্ন এই শিল্পীর সংসার জীবন ভাল লাগেনি,ফলে বিয়ে থা করেন নি ৷
পরম মমতায় তার হাতে গড়া মূর্তি তে হাত বোলাতে বোলাতে শিল্পী বলেন এরাই আমার সব ,এরাই আমার সংসার, এ বছরও প্রায় আটটি দুর্গা প্রতিমা গড়েছেন শিল্পী৷তার দাবি জীবন জীবিকার জন্য নয় ,আমি মূর্তি গড়ি নিজের মনের খিদে মেটাবার জন্য৷ দেবী মূর্তির প্রতি তার এতটাই ভালোবাসা যে বিসর্জনের বাজনা সহ্য করতে পারেন না এই শিল্পী, সে কারণে দশমীর দিন নিজেকে ঘরেই বন্দী করে রাখেন, বিসর্জন পর্বঃ মিটে যাওয়ার পরদিন ভোরে উঠে ছুটে যান নদীর ধারে, জল থেকে তুলে আনেন আগেরদিন বিসর্জন হয়ে যাওয়া দেবীর কাঠামো গুলি, আবার শুরু হয় তার লড়াই, অত্যন্ত সহজ-সরল মনের এই মানুষটির একান্ত ইচ্ছা এই কাদা মাটি নিয়ে খেলতে খেলতেই অথবা দেবী মূর্তি গড়তে করতেই যেন মৃত্যু হয় তার।ছোটবেলায় প্রতিমা তৈরি নিয়ে আঘাত পাওয়া শিশু মনের যন্ত্রণা ভুলতে চান এভাবেই মূর্তি গড়ার মাধ্যমে ৷