বিল থেকে আইন হয়েছিল ৪ বছর আগেই। তারপর চলছিল ধারা প্রস্তুত করা। সেসব কাজ নাকি এখন শেষ পর্যায়ে। আর তারপর আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগেই চালু হতে চলেছে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন।
দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, লোকসভা নির্বাচনের আগেই জারি হতে পারে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (Citizenship Amendment Act) বা সিএএ-র বিজ্ঞপ্তি। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন চালু করা নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। সংবাদসংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, লোকসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণার আগেই সিএএ নিয়ে বিজ্ঞপ্তি ঘোষণা হতে পারে। তৈরি করা হতে পারে সিএএ-র ধারা।
২০১৯ সালে কেন্দ্রের তরফে নয়া নাগরিকত্ব ও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রস্তাব আনা হয়। সিএএ বা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে বলা হয়, ২০১৫ সালের আগে পড়শি দেশ বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে আগত অ-মুসলিম অর্থাৎ হিন্দু, জৈন, খ্রিস্টান, পার্সি, বৌদ্ধ নাগরিকদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এই বিল নিয়ে বিস্তর বিতর্ক-প্রতিবাদও হয়। শেষ অবধি সংসদে পাশও হয়ে যায় এই বিল। আইনে পরিণত হলেও, সিএএ-র ধারাগুলি এখনও তৈরি হয়নি। এবার সেই ধারা নিয়েই কাজ শুরু করছে কেন্দ্র।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের মুখে একাধিকবারই শোনা গিয়েছে যে দ্রুত সিএএ কার্যকর করা হবে। এবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক আধিকারিক সূত্রেও জানা গেল, লোকসভা নির্বাচনের আগেই সিএএ নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি হতে পারে। লোকসভা নির্বাচনের আগেই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের ধারা তৈরি হয়ে যেতে পারে।
সিএএ নিয়ে বরাবরই কেন্দ্রের বিরোধিতা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছিলেন, “নাগরিক না হলে সকলে রেশন সহ অন্যান্য পরিষেবা পাচ্ছেন কীভাবে? নাগরিকত্ব নিয়ে সাধারণ মানুষদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মধ্য়ে বিভাজন তৈরির চেষ্টা চলছে। এটা তো করা উচিত নয়।”
সূত্রের খবর, ধারাগুলি ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত হয়ে গেছে। সিএএ-র অধীনে নাগরিকত্বের আবেদন করার জন্য একটি অনলাইন পোর্টালও তৈরি হয়ে গেছে। এই আইনের অধীনে নাগরিকত্বের আবেদন জানামতে গেলে আগে জানাতে হবে আবেদনকারী কত সালে তাঁরা বৈধ কাগজ ছাড়াও ভারতে ঢুকেছিলেন। তাঁদের কাছ থেকে কোনও নথি চাওয়া হবে না। যাঁরা ২০১৪ সালের পরে আবেদন করেছেন, তাঁদের আবেদন নতুন নিয়ম অনুসারে বিচার করা হবে। মূল আইনে ভারতে প্রবেশের নির্ধারিত সময়সীমা- যা ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল, তা সম্ভবত বাড়ানো হবে বলে জানা গেছে।
গত কয়েক বছর ধরে ভারতীয় জনতা পার্টির নেতারা বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং সমাবেশে সিএএ বাস্তবায়িত করার কথা একাধিকবার তুলে ধরেছেন এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে আইনটি শীঘ্রই কার্যকর হবে। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সফরে এসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, “দিদি প্রায়ই আমাদের উদ্বাস্তু ভাইদের সিএএ নিয়ে বিভ্রান্ত করেন। আমি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিচ্ছি যে সিএএ দেশের আইন এবং কেউ এটিকে আটকাতে পারবে না। সবাই নাগরিকত্ব পাবেন। এটা আমাদের দলের অঙ্গীকার।”
সিএএ-এর আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে একগুচ্ছ পিটিশন সুপ্রিম কোর্টে এখনও বিচারাধীন। গত অক্টোবরে এই আইনের পক্ষে কেন্দ্রীয় সরকার আদালতে একটি হলফনামা দাখিল করে জানায়, এই আইন সম্পূর্ণ বৈধ।