দেশের সময়, কলকাতা: শারদ উৎসবের আমেজে গা ভাসিয়েছে শহর কলকাতা। আর তার সঙ্গেই মিশছে সাম্বার ছন্দ। বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার রোনাল্ডিনহো রয়েছেন শহরে। প্রতিদিনই তাঁকে ভালবাসা উজাড় করে দিচ্ছেন মানুষ।
একাধিক পুজো মণ্ডপ উদ্বোধন করে ফেলেছেন। যোগ দিয়েছেন স্পনসরদের বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানেও। কিন্তু এতটা প্রাণখোলা মেজাজে পাওয়া যায়নি রোনাল্ডিনহোকে।
যা দেখা গেল মঙ্গলবার দুপুরে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যেন মিশে গেলেন ম্যাজিশিয়ান। একাধিক পোজে তাঁদের মোবাইলবন্দি হলেন। স্টেজে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে নিজের মোবাইলে ধরে রাখলেন তাঁকে নিয়ে উন্মাদনার মুহূর্তগুলো। তুললেন বেশ কয়েকটি সেলফিও।
সকাল এগারোটায় আসার কথা ছিল। সেটা এক ঘন্টা পিছল। তাতে অবশ্য ধৈর্যের বাঁধ ভাঙেনি উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রী এবং তাঁদের অভিভাবকদের। শাকিরার ওয়াকা ওয়াকা, রিকি মার্টিনের লা কোপা ডে লা ভিদা গানে তখন গমগম করছে কলেজ প্রাঙ্গণ। অপেক্ষার প্রহর গোনা চলছে। তারমধ্যেই এক ছাত্রীর মা, মহুয়া দাস নামক এক মধ্যবয়সী মহিলাকে মঞ্চ থেকে কিছুটা দূরে মাঠেই একা একাই নাচতে দেখা যায়। সাম্বার তালে তখন আচ্ছন্ন সকলে।
ঘড়ির কাঁটায় ঠিক বারোটা। কলেজ প্রাঙ্গণে পা রাখলেন বিশ্বকাপজয়ী তারকা। পরনে কালো ব্যাগি বারমুডা, কালো গোল গলা টি শার্ট, কালো জুতো। মাথায় ট্রেডমার্ক সেই কালো টুপি এবং চোখে চশমা। মাঠের মাঝে ব়্যাম্পের আদলে গড়া নীল কার্পেটে মোড়া স্টেজ। দু’হাত নাড়তে নাড়তে স্টেজে উঠলেন বিশ্বফুটবলের অন্যতম সেরা তারকা।
সঙ্গে ছিলেন ক্রীড়া উদ্যোগপতি শতদ্রু দত্ত এবং রোনাল্ডিনহোর ম্যানেজার। ব্রাজিলীয় তারকাকে স্বাগত জানান সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের প্রিন্সিপাল রেভারেন্ড ড. ডমিনিক স্যাভিও। ছিলেন বাকি ফাদাররাও। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কলেজের অ্যালুমনাই অ্যাসোসিয়েশনের সচিব ফিরদাউসুল হাসান সহ বাকিরা। ঘড়ি ধরে ঠিক ২৫ মিনিট কলেজে কাটান রোনাল্ডিনহো।
উত্তরীয়, ফুলের স্তবক এবং জার্সি দিয়ে কিংবদন্তিকে বরণ করে নেওয়া হয়। এছাড়াও কলেজের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় হাতে আঁকা তাঁর একটি ছবি এবং স্মারক। স্পনসরদের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় সোনার বুট ঝোলানো সোনার চেন।
আতিথেয়তায় মুগ্ধ ফুটবলের ম্যাজিশিয়ান। রোনাল্ডিনহো বলেন, ‘এত সুন্দর আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ। আমি খুব খুশি। অনেক ধন্যবাদ সবাইকে। আমি আপনাদের ভালবাসি।’ মঞ্চের দু’ধারে সারি সারি ছাত্র-ছাত্রী। সকলেরই হাতে মোবাইল। মহার্ঘ্য মুহূর্ত বন্দি করতে তৈরি।
কলেজের বিল্ডিংয়ের তিনদিক ছাত্রী-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকায় ঠাসা। সকলের উদ্দেশে দু’হাত নাড়তে নাড়তে ব়্যাম্পে হাঁটলেন। বেশ কয়েকবার বুকে হাত রেখে বাও ডাউন করে অভিবাদন গ্রহণ করতে দেখা যায়। তাঁর হাত স্পর্শ করার সুযোগ পান কয়েকজন। হাত মেলাতে মেলাতে মঞ্চ ছাড়েন। অনুষ্ঠানের শেষলগ্নে এল মাহেন্দ্রক্ষণ। গোলে শট মারলেন রোনাল্ডিনহো। দীর্ঘ অপেক্ষা সার্থক। ঝটিকা সফরে মন জিতে নিলেন জাভেরিয়ানদের।
মঙ্গলবার দুপুরে ডায়মন্ড হারবার এফসির আয়োজনে রোনাল্ডিনহো গিয়েছিলেন বাটা স্টেডিয়ামে। তাঁকে সেখানে ক্লাবের পক্ষ থেকে সংবর্ধিত করা হয়। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ক্লাবের অন্যতম কর্ণধার এবং রাজ্যের সংসদ অভিষেক ব্যানার্জি। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসু। ব্রাজিলিয়ান ম্যাজিশিয়ানকে একঝলক দেখতে ভিড় করে এসেছিলেন প্রচুর মানুষ।
অনুষ্ঠানে একটি প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ডায়মন্ড হারবার এফসি এবং শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব। এই ম্যাচের আগে দু’দলের ফুটবলারদের সঙ্গে মাঠে গিয়ে পরিচিত হন রোনাল্ডিনহো। ম্যাচে ১-০ গোলে জিতে যায় ডায়মন্ড হারবার এফসি। মঞ্চ থেকে প্রথমার্ধের খেলা দেখেন রোনাল্ডিনহো। এই অনুষ্ঠান ছাড়াও সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের একটি অনুষ্ঠানে এবং কলকাতা পুলিশের ফ্রেন্ডশিপ কাপের অনুষ্ঠানে মঙ্গলবার উপস্থিত ছিলেন তিনি। সেখানেও তাঁকে নিয়ে উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো। বুধবার কলকাতা ছাড়ছেন এই ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার।