অর্পিতা বনিক, বনগাঁ: হাতে গোনা আর মাত্র দু’ মাস তারপরে দেবীর আগমন একটা বছরের অপেক্ষার পর দেবী উমা আসছেন তার বাপের বাড়ি। তারই জন্য চরম ব্যস্ততা লক্ষ্য করা যাচ্ছে পূজা উদ্যোক্তাদের মধ্যে। এই হাতে গোনা কয়েকটা দিনের মধ্যেই প্রতিমা তৈরির ব্যাস্ততায় মেতে উঠেছেন সকল মৃৎ শিল্পীরা। বনগাঁর কুমোর পাড়া সহ জেলায় জেলায় প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন মৃৎশিল্পীরাও।আর এই মৃৎশিল্পীর কথা বলতেই মাথায় আসে যাদের নাম কার্তিক পাল ,মুক্তি পাল গণেশ পাল ও সুধীর পাল এর মতো কিংবদন্তি মৃৎশিল্পীদের কথা।
এখানে নতুন প্রজন্মের এক ক্ষুদে প্রতিমা শিল্পীর কথা বলা হচ্ছে ৷ উত্তর ২৪পরগনার বনগাঁর এক চাষি পরিবারে জন্মেও তাঁর মনের অদম্য ইচ্ছায় ধীরে ধীরে মৃৎ শিল্পী হয়ে উঠছে এই স্কুল পড়ুয়া অরিন্ময় বাছার ৷
ছোট থেকেই পরিবারের সকলের সঙ্গে বাড়ির সামনে মন্ডপে দুর্গা পুজোর অঞ্জলি দিত এই উচ্চ মাধ্যমিক উর্ত্তীর্ণ ছাত্র অরিন্ময় ৷ ঠাকুরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত এই ভাবুক ক্ষুদে শিল্পী। মাঝেমাঝেই বাবার কাছে বায়না করত “কুমোরটুলি যাব, ঠাকুর বানানো দেখব” এবং তার বাবা তার সেই বায়না রাখতেন।মন দিয়ে সেখানে কীভাবে কারিগররা মা দুর্গাকে মৃন্ময়ী থেকে চিন্ময়ী রূপ দিচ্ছেন তা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখত অরিন্ময়। সেই থেকেই মাথায় ঢুকে ছিল যে নিজেই মূর্তি বানাবো এবার। তাই বাবা-মার বকুনি খেয়ে ও সে নিজের সেই স্বপ্ন সফল করার লক্ষ্যে ছুটছে৷ বনগাঁর নতুন গ্রামের বাসিন্দা চাঁপা বেড়িয়া হাই স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে উর্ত্তীর্ণ এই ছাত্র। দেখুন ভিডিও
অরিন্ময়ের মা জয়ন্তী দেবী জানালেন, বাড়িতে বসেই অরিন্মময় প্রতিমা তৈরীর কাজ করছে এবং তা শেষও হতে চলেছে। গতবছর তার বাড়ির পাশের ক্লাবের মন্ডপে পুজোতে তার তৈরি ঠাকুরকেও পুজো করা হয়েছিল। এ বছরও সেই মন্ডপে মা দুর্গার সঙ্গে তাঁর তৈরি করা মা দুর্গার প্রতিমা পুজো করা হবে। তার ইচ্ছা ভবিষ্যতে সে আরো ভালো করে প্রতিমা তৈরি করবে। তার এই বিরল প্রতিভায় তার পরিবারের সদস্যরা অত্যন্ত গর্বিত।
মুলিবাঁশের বেড়ার তৈরী তার পড়ার ঘরের এক পাশে বসেই এক ফুট এর দুর্গা প্রতিমা দিয়ে হাতে খড়ি অরিন্ময়ের ৷ এ বছর ১২ ফুটের দুর্গা মূর্তিতে তুলির টান দিতে দিতেই অরিন্ময় জানালো যে, সে যখন আরো ছোট ছিল তখন থেকেই তার ইচ্ছা ছিল সে প্রতিমা বানাবে। এর আগেও রাধা-কৃষ্ণ সরস্বতী , শিব,কালী ঠাকুরের প্রতিমাও বানিয়েছিল। এমনকি গত কয়েক বছর ধরেই দুর্গা ঠাকুরের মূর্তি বানিয়ে চলেছে সে। তবে সেক্ষেত্রে তার বাবা বিকাশ বাছার ও দাদা মৃন্ময় বাছার সাহায্য করেছিলেন এবং প্রতিমা তৈরীর সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে তাঁরাই সাহায্য করেছিলেন। আরন্ময়ের কথায় তাঁর নিজের ইচ্ছা পূরণেই সে দুৰ্গা গড়ছে এবারও৷