দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দেশ জুড়ে শুক্রবার বিজয় দিবস পালিত হল । ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের বিজয়কে স্মরণ করছে দেশ। এই দিনে, সামরিক বীরদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করা হয়, এবং তাদেরকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। তাদের পরাজয়ের পর, জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজীর নেতৃত্বে পাকিস্তানি বাহিনী ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে। সংঘাতের অবসানের পরে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের পরিবর্তন করে। বিজয় দিবস ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর বিজয়কে স্মরণ করে।
১৬ ডিসেম্বর, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর বিজয়ের দিন ৷ সেই যুদ্ধের বিজয় স্মরণে বিজয় দিবস পালিত হয় প্রতি বছর।
ঐতিহ্যগতভাবে প্রতিবছর এই দিনটিকে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর বীর এবং মুক্তি-যোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধার চিহ্ন হিসেবে উদযাপন করে থাকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কম্যান্ড । এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ১৩ ডিসেম্বর থেকে চারদিন ব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ভারত ও বাংলাদেশের বীর সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজন করেছে ইস্টার্ন কম্যান্ড।
দেশকে রক্ষা করার জন্য জীবন বিসর্জন দেওয়া শহীদদের স্মরণ করা হয়। ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে ১৩ দিনের সংঘাত শেষ হয় ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে। এর ফলে একটি নতুন দেশ গঠিত হয় যা বাংলাদেশ নামে পরিচিত। দিনটি বাংলাদেশেও বিজয় দিবস নামে পরিচিত।
সাম্প্রতিক একটি ট্যুইটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ‘বিজয় দিবসের প্রাক্কালে আর্মি হাউসে ‘অ্যাট হোম’ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছি। ভারত আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর বীরত্বকে কখনই ভুলবে না যারা ১৯৭১ সালের যুদ্ধে জয়লাভ করেছিল’।
On the eve of Vijay Diwas, attended the 'At Home' reception at Army House. India will never forget the valour of our Armed Forces that led to the win in the 1971 war. pic.twitter.com/apG69cObzw
— Narendra Modi (@narendramodi) December 15, 2022
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ পান্ডে বিজয় দিবসের প্রাক্কালে আর্মি হাউসে অ্যাট হোম রিসেপশনে যোগ দিয়েছিলেন।
President Droupadi Murmu attended 'At Home' reception at Army House on the eve of Vijay Diwas. pic.twitter.com/xEX2Ld47ji
— President of India (@rashtrapatibhvn) December 15, 2022
রাজনাথ সিং একটি ট্যুইটে বলেন, ‘আজ, বিজয় দিবসে, দেশ ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর সাহস এবং আত্মত্যাগকে স্যালুট জানায়। ১৯৭১ সালের যুদ্ধ ছিল অমানবিকতার উপর মানবতার জয়, অসদাচরণ এবং অন্যায়ের উপর ন্যায়বিচার। ভারত তার সশস্ত্র বাহিনীর জন্য গর্বিত’।
Today, on Vijay Diwas, the Nation salutes the exemplary courage, bravery and sacrifice of India’s Armed Forces. The 1971 war was the triumph of humanity over inhumanity, virtue over misconduct and justice over injustice. India is proud of its Armed Forces.
— Rajnath Singh (@rajnathsingh) December 16, 2022
সেনাবাহিনীর প্রাক্তনরা, জনগণ, সশস্ত্র বাহিনী, রাজনীতিবিদ এবং সরকার এই যোদ্ধাদের আত্মত্যাগের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য তাঁদের শ্রদ্ধা জানায়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে, ১৩ দিনের সংঘাতের অবসান ঘটায়। বিজয় দিবস পাকিস্তানের হাত থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকেও উদযাপন করে।
এই বছর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বাংলাদেশি প্রতিনিধি দল এবং তাদের পরিবার, সেইসঙ্গে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন।
বৃহস্পতিবার ফোর্ট উইলিয়ামে তাঁদের সংবর্ধিত করা হয়। বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ থেকে ৬১ জনের প্রতিনিধি দল এসেছে ফোর্ট উইলিয়ামে। সপরিবারে এসেছেন ২৯ জন মুক্তিযোদ্ধা। তাঁদের নেতৃত্বে রয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্ণেল কাজি সাজ্জাদ আলি জহির। এসেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মরত ৬ অফিসার। তাঁদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল মাহবুবুর রশিদ। পূর্বাঞ্চলীয় সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আর পি কলিতা তাঁদের সম্মানিত করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা স্মৃতিচারণে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতীয় সেনাবাহিনীর সহযোগিতা এবং কীভাবে একে অপরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে পাকিস্তানের খান সেনাদের মোকাবিলা করেছিলেন, তা তুলে ধরেন। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করেন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্ণেল কাজি সাজ্জাদ আলি জহির, মহম্মদ আব্দুল হাই। অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় সেনা আধিকারিকদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কথা তুলে ধরেন অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল বিকেডি বাইজাল, ভাইস অ্যাডমিরাল বিমলেন্দু গুহ (অবসরপ্রাপ্ত), প্রবীণ সাংবাদিক অভিজিৎ দাশগুপ্ত।
বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে পূর্বাঞ্চলীয় সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আর পি কলিতার হাতে স্মারক তুলে দেওয়া হয়। পরে আরসিটিসি–তে মিলিটারি ট্যাটু প্রদর্শিত হয়। সেনাবাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে আগত মুক্তিযোদ্ধা, সাধারণ মানুষও সেনাবাহিনীর এই প্রদর্শন দেখেন। বায়ুসেনার ৩০টি যুদ্ধ বিমান ফোর্ট উইলিয়ামের ওপর দিয়ে উড়ে যায়। এর মধ্যে ছিল যুদ্ধ বিমান ধ্রুব, রুদ্র এবং চিতা। ১২ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে নেমে আসেন স্কাই ডাইভাররা। পাশাপাশি প্যারা মোটর এবং ঘোড় সওয়ার বাহিনীও কসরত প্রদর্শন করে। আর্মি ব্যান্ডের পাশাপাশি ছিল কেরলের মার্শাল আর্টসের প্রদর্শনও।
বিকেলে কলকাতার বাংলাদেশ উপ–দূতাবাসে তিনদিনের বিজয় উৎসবের উদ্বোধন করেন উপ–রাষ্ট্রদূত আন্দালিব ইলিয়াস। উৎসব চলবে শনিবার পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার উদ্বোধনী দিনে ‘বাংলাদেশ–ইন্ডিয়া রিলেশনশিপ ডিউরিং ৫১ ইয়ার্স পোষ্ট ভিক্টরি: পাস্ট, প্রেজেন্ট অ্যান্ড ফিউচার’ শীর্ষক আলোচনাচক্রের আয়োজন করা হয়। ছিলেন বাংলাদেশের ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, বাংলাদেশের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মহম্মদ শাহ আজম, সাংবাদিক মানস ঘোষ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে বাংলাদেশের এনআরবি ওয়ার্ল্ড ফ্রেন্ডশিপ ফোরাম ও বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ।