দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ এখনও সেভাবে জাঁকিয়ে বসেনি শীত। রাত ও ভোরেরদিকে কিছুটা শীতের আমেজে মজে বাংলা। আর এই শীতের মরসুমের গোড়াতেই সুন্দরবনে মিলল বাঘের দর্শন । একটা দুটো নয়, চারটে বাঘের দেখা পেয়ে হাসি ফুটল পর্যটকদের মুখে।
সুন্দরবন মানেই নদীনালা ঘেরা ম্যানগ্রোভের জঙ্গল। সঙ্গে সুন্দরী, গরাণ, গেঁওর সারি। প্রকৃতি যেন এখানে অন্য রূপে মেলে ধরেছে নিজেকে। কিন্তু সুন্দরবনের মূল আকর্ষণ নিঃসন্দেহে রয়্য়াল বেঙ্গল টাইগার। দেশ বিদেশ থেকে মানুষ আসেন সেই টানেই।
সোমবার দুপুরে সুন্দরবনের ব্যাঘ্র প্রকল্পের সজনেখালি রেঞ্জ অফিসের চোরাগাজি খালি জঙ্গলের কাছে একটি চরের ওপর বসে রোদ পোয়াচ্ছিল চারটি বাঘ। তাদের মধ্যে দুটি পূর্ণবয়স্ক ও দুটি বাচ্চা। সেইসময় নদীর ওপর দিয়ে যাওয়া একটি জলযান থেকে পর্যটকেরা সেই বাঘের পরিবারকে ক্যামেরাবন্দি করেন।
স্থানীয় সূত্রে খবর, এদিন পর্যটকদের নিয়ে সুন্দরবনের নানা স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছিল বিভিন্ন বোট। সাধারণত বাঘের দর্শনের জন্যই ভিড় করেন পর্যটকেরা। কিন্তু সোমবার এভাবে শাবক-সহ বাঘিনী দর্শন হবে তা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। বন দফতর সূত্রেও খবর, এ সত্যিই এক বিরল ঘটনা।
সুন্দরবনে বাঘ দেখতে পাওয়া নতুন ঘটনা নয়। পর্যটকেরা জঙ্গলভ্রমণে এসে প্রায়ই দক্ষিণরায়ের দর্শন পান। কিন্তু একসঙ্গে বাঘিনী ও তার বাচ্চাদের জলকেলি দেখার দৃশ্য বিরল। শেষ কবে এমন দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি হয়েছে, তা মনে করতে পারছেন না গাইড থেকে বন দফতরের আধিকারিকরা।
শীতের প্রাকমরসুমে মনোরম আবহাওয়ায় শুরু হয়েছে সুন্দরবন ভ্রমণ। সোমবার সুন্দরবনের জঙ্গলে ভিড় ছিল সরকারি ছুটি উপলক্ষে। সকাল থেকেই কয়েকটি বোট পর্যটকদের নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল বাঘের দর্শনের জন্য। তবে হঠাৎ করে দু’জোড়া দর্শন পেয়ে খুশি সকলেই।
এ বিষয়ে এক ভ্রমণ সংস্থার পক্ষে অনিল মিস্ত্রী জানান, “আমরাই প্রথম চারটি বাঘকে একসঙ্গে দেখতে পাই। এটি সত্যিই একটি বিরলতম দৃশ্য। প্রায় দু-আড়াই ঘণ্টা ধরে বাঘগুলিকে নদীতে সাঁতরাতে দেখা যায়।” পর্যটকদের কথায়, এদিন বাঘিনীটি তার বাচ্চাদের সাঁতার শেখাতেই নিয়ে এসেছিল খাঁড়ির ধারে।
এ বিষয়ে ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর তাপস দাস বলেন, “চারটি বাঘকে একসঙ্গে দেখা গেছে সজনেখালি রেঞ্জ অফিসের চোরাগাজি খালি জঙ্গলে। এটা থেকে প্রমাণ হয় সুন্দরবনের জঙ্গলে বাঘ বাড়ছে।”
উল্লেখ্য, দিন দু’য়েক আগে সুন্দরবনের দোবাকি জঙ্গলে জোড়া বাঘের মারামারি এবং নদীর পাড়ে বসে থাকার দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন পর্যটকরা। জোড়া বাঘের দর্শন পেয়ে খুশি ছিলেন যাদবপুরের থেকে আসা ১৭ জন পর্যটক। এদিন দু’জোড়া বাঘের দর্শন মিলল।
সুন্দরবনের মত জায়গাকে পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে ইতিমধ্যেই নানা উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। গেস্ট হাউজ, পরিবেশবান্ধব হোটেল, প্যাকেজ ট্যুরের পাশাপাশি বেড়েছে লঞ্চ পরিষেবা। সুন্দরবন ভারত তথা এশিয়ার বৃহৎ ম্যানগ্রোভ জঙ্গল। সেই জঙ্গলেই বাঘের বাস। শেষ ব্যাঘ্র সুমারি বলছে এই মুহূর্তে সুন্দরবনে ৪০০-র বেশি বাঘ রয়েছে। প্রতি চার বছর অন্তর এই গণনা হয়। তিন মাস ধরে সুমারি চলে। গত বছর ডিসেম্বরে এই ব্যাঘ্র সুমারি হয়। সোমবার ছানাদের নিয়ে বাঘ বাঘিনীর সাক্ষাৎ মেলার পর সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বাড়ছে এমন ধারণা আরও জোরাল হল।