দেশের সময়: কাশী বিশ্বনাথের পর আরও একটি জ্যোতির্লিঙ্গকে ঘিরে তৈরি করা হল করিডর। মঙ্গলবার বিকেলে মধ্য প্রদেশের উজ্জয়িনীতে দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম মহাকালেশ্বর মন্দিরের জন্য মহাকাল লোক করিডরের প্রথম ধাপের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
দীপাবলির আগেই নতুন রূপ পেল উজ্জয়িনীর মহাকালেশ্বর মন্দির। প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মধ্যপ্রদেশের এই মন্দিরের করিডর প্রকল্পের প্রথম দফার উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পাশাপাশি মহাকাল মন্দিরে পূজার্চনাও করেন তিনি।
৮৫০ কোটি টাকা খরচে তৈরি এই করিডর তৈরি করা হয়েছে পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য, এ কথাই বলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এতে গোটা মধ্য প্রদেশের পর্যটনই আরও সমৃদ্ধ হবে বলে জানান তিনি।
কার্তিক মেলা ময়দানে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ভাষণে মোদী বলেন, ‘‘ভারতের আধ্যাত্মিকতার কেন্দ্রে রয়েছে উজ্জয়িনী। এর প্রতিটি প্রান্তেই ইতিহাস ছড়িয়ে রয়েছে। বহু শতকের আধ্যাত্মিকতার (কেন্দ্রস্থল) এখন সংস্কার করা হচ্ছে।’’ মোদীর দাবি, কাশী বিশ্বনাথ করিডরের থেকেও আকারে ৪ গুণ বড় এটি।
মঙ্গলবার বিকেলে উজ্জয়নের মহাকাল মন্দিরের জন্য তৈরি নতুন করিডরের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পূজার্চনার মাধ্যমে, শঙ্খ-ঘণ্টাধ্বনিতে করিডরের প্রথম অংশের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর ওই করিডরের পথ ধরেই মহাকালেশ্বর মন্দিরে পুজো দেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মধ্য় প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান।
৯০০ মিটার দীর্ঘ এই করিডরের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “৮৫০ কোটি টাকা খরচে গঠিত এই মহাকাল লোক করিডরের ফলে পুণ্যার্থীদের মন্দিরে আসতে আরও সুবিধা হবে। এই করিডরেই বিশ্বমানের নানা আধুনিক পরিষেবার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতাও নিতে পারবেন পুণ্যার্থীরা।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “উজ্জয়নের প্রতিটি কোণা থেকে প্রতিফলিত হচ্ছে আধ্যাত্মিক শক্তি। বিগত কয়েক হাজার বছর ধরে উজ্জয়ন দেশের প্রতিটি কোণে সাহিত্য, জ্ঞান, মর্যাদা ও সমৃদ্ধি পৌঁছে দিয়েছে। উদ্ভাবনের সঙ্গেই জড়িত থাকে সংস্কার। কয়েক দশক দাসত্বে থেকে ভারতের যে ক্ষতি হয়েছে, তারই সংস্কার করছে আজ ভারত। বর্তমানে আমাদের দেশ হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকেই পুনর্স্থাপন করছে।”
In addition to the Shree Mahakaleshwar Temple, the #ShriMahakalLok is yet another reason why you all must visit Ujjain! pic.twitter.com/rCPupmwl1o
— Narendra Modi (@narendramodi) October 11, 2022
কী কী রয়েছে মহাকাল করিডরে?
প্রথম ধাপে ১ কিলোমিটার দীর্ঘ করিডর তৈরি করা হয়েছে, যার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
এই করিডরে শিবের তাণ্ডব রূপকে তুলে ধরা হয়েছে। ১০৮টি স্তম্ভে কারুকাজের মাধ্যমে শিবের তাণ্ডবের বিভিন্ন কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে।
তৈরি করা হয়েছে শিবের ২০০টি মূর্তি।
মন্দিরের পাশেও বসানো হয়েছেে ৯৩টি মূর্তি। শিব-পার্বতীর বিবাহের বিশালাকার এক মূর্তিও তৈরি করা হয়েছে।
প্রত্যেকটি মূর্তির গায়ে রয়েছে একটি কিউআর কোড। এই কোড স্ক্যান করলেই মোবাইলে দেখা যাবে শিবপূরাণের কাহিনি।
হিন্দুদের বিশ্বাস, যে বারোটি স্থানে জ্যোতির্লিঙ্গ রয়েছে তার মধ্যে একটি হল এই স্থান। মহাকালেশ্বর মন্দির করিডর উন্নয়ন প্রকল্পের প্রথম পর্বের আওতায় প্রায় ১ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি করিডর গড়ে তোলা হয়েছে। যাতে রয়েছে শিবের আনন্দ তাণ্ডব রূপের ১০৮টি কারুকাজ করা স্তম্ভ। এ ছাড়া, শিব এবং শক্তির দু’শোটি মূর্তি এবং ম্যিউরালে রয়েছে। মূল ফটক থেকে মন্দিরের মাঝে বসানো হয়েছে আরও ৯৩টি শিবের মূর্তি। রুদ্রসাগর হৃদের সামনে রাখা হয়েছে ১১১ ফুট উঁচু শিববিবাহ ম্যুরাল। মন্দিরের ‘মহাকাল লোক’ করিডরের সাতটি পাদদেশে সপ্তঋষির স্থাপত্য বসানো হয়েছে। প্রতিটি মূর্তি এবং ম্যুরালে রাখা কিউআর কোডের স্ক্যান করলেই দর্শনার্থীর মোবাইলে ফুটে উঠবে শিবপুরাণের কাহিনি।
এই মন্দির ঘিরে পর্যটনের প্রসারেরও যাবতীয় আয়োজন করা হয়েছে। রয়েছে বহুতল পার্কিং লট থেকে দোকানহাট, পার্ক, বৈদ্যুতিন গাড়ি-সহ নানা আধুনিক বন্দোবস্ত।