Durga puja 2022: অন্যপুজো: অর্ধনারীশ্বর দুর্গা ও রূপান্তরকামীদের দুর্গা পুজো

0
1055

শম্পাগুহ মজুমদার, কলকাতা: এক অন্যরকম পুজোর গল্প। অর্ধনারীশ্বর দুর্গা হলেন হিন্দু দেবতা শিব ও তাঁর পত্নী দেবী পার্বতীর একটি সম্মিলিত রূপ। অর্ধনারীশ্বর মূর্তিটি দেহের ঠিক মাঝখান থেকে সমানভাবে অর্ধেক পুরুষ ও অর্ধেক নারীর মূর্তি রূপে বিভাজিত হন।

আমাদের সমাজে রূপান্তরকামী বা তৃতীয়লিঙ্গের মানুষেরা ব্রাত্য ও মানসিক নির্যাতনের শিকার। আমরা ভুলে যাই যে তারাও আমাদের মতন মানুষ। ঘরে বাইরে তাদের মানবাধিকার প্রতিনিয়ত লঙ্ঘিত হচ্ছে। নারী হিসাবে জন্মেও কেউ কেউ পুরুষ হয়ে বাঁচতে চান আবার লিঙ্গের বিচারে পুরুষ হলেও কেউবা নারী রূপে পরিচিত হতে চান। মানুষের রূপান্তরকামিতা যে পাপ বা অপরাধ নয়, সুপ্রিম কোর্টের স্বীকৃতি পাওয়ার পরও মানুষের এই ধারণার অবসান হয়নি।

দুর্গা পুজোর আনন্দ উৎসবে তারা অন্ধকারেই থাকতেন। সুযোগ পেতেন না আর সবার মতো উৎসবে অংশ নেওয়ার। এসব মানুষের ভাগ্যে জুটত বঞ্চনা, কটূক্তি আর হেনস্থা। তাদের বের করে দেওয়া হতো পূজামণ্ডপ থেকে। তবে এবার তৃতীয় লিঙ্গের এই মানুষেরা দেখিয়ে দিয়েছেন, আর পাঁচটা মানুষের মতোই পুজোর আনন্দে শামিল হওয়ার অধিকার তাদেরও আছে।

দক্ষিণ কলকাতার মুকুন্দুপুরের কাছে গরিমা গৃহে দুর্গাপুজোর উদ্যোক্তা রূপান্তরকামীরাই। ‘অর্ধনারীশ্বর দুর্গা’ প্রতিমাকেই তারা পুজো করবেন। পুজোর আড্ডা থেকে শুরু করে মজা, খাওয়াদাওয়া, ভোগ রান্না পুরোটা নিজেরা করেন। এই পুজোতে মা দুর্গা পূজিত হন বৈষ্ণব মতে। পুজোর কর্ণধার রঞ্জিতা সিনহা জানালেন যে, ওনারা বিশ্বাস করেন ওনাদের একই অঙ্গে অর্ধনারীশ্বর বা হরপার্বতীই বিরাজ করেন। গত পাঁচ বছর ধরে এই পুজো হয়ে আসছে।

তারা মাতৃপ্রতিমাকে বিসর্জন দেওয়াতে বিশ্বাস করেন না । পুরোনো মূর্তিতো অধিষ্টিত আছেনই সঙ্গে নতুন প্রতিমার পুজো হচ্ছে ধুমধাম সহকারে। পুরনো আর নতুন দুটি প্রতিমাই রাখা হবে গরিমা গৃহেই। পথশিশু থেকে শুরু করে অ্যাসিড আক্রান্ত, সকলে আনন্দ করেন এই পুজোয়।

পথশিশুদের নিয়ে এখানে অনুষ্ঠিত হয় কুমারী পুজো। চতুর্থীর দিন বিশিষ্ট অতিথিরা উদ্বোধন করেছেন বন্ধন আয়োজিত এই পুজো। সংগঠনের সম্পাদক রঞ্জিতা সিনহা গোটা দেশে রূপান্তরদের আন্দোলনে একটা পরিচিত নাম।

আয়োজনটি হচ্ছে মূলত তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায়। রূপান্তরিতদের এই পুজোকে সর্বজনীন স্বীকৃতি দিতে রাজ্য সরকারের কাছে তারা আবেদন করেছেন। রাজ্যের তরফে ৫০ হাজার টাকা অনুদান পেয়েছেন।

ইতিমধ্যে একাধিক রাষ্ট্রের দূত এবং বিশিষ্টরা পুজো দেখে গিয়েছেন। প্রত্যেকে অভিভূত। পুজোতে পৌরোহিত্য করবেন অব্রাহ্মণ পরিবারের রূপান্তরকামী মানুষ বৈশালী। মা দুর্গা আমাদের সব বিপদ থেকে রক্ষা করেন, আসলে তিনি কোনো মানব মানবীর মাধ্যমে সবার মঙ্গল করে থাকেন।

গরিমা গৃহে এইরকম এক মানবী হলেন রঞ্জিত সিনহা। তিনি উচ্চ শিক্ষিত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়েও নিজে রূপান্তরিত নারী এবং সমাজ ও পরিবার থেকে বিতাড়িত ছেলেমেয়েদের তিনি মা। বুকদিয়ে আগলে রেখেছেন তাঁর এই সন্তানদের। নানা ভাবে চেষ্টা করে চলেছেন তাদের অর্থনৈতিক ভাবে সক্ষম করতে। তাই তিনিই গরিমা গৃহের মা দুগ্গা।

Previous articleDurga puja 2022: নবমীর রাতে শহরের রাস্তায় জনস্রোত, কলকাতা থেকে বনগাঁ বেশি ভিড় কোন পুজোয়,জানাচ্ছে দেশের সময়
Next articleDurga puja 2022: টাকিতে ভাঙা পরিবার জুড়ে দিল মা দুর্গা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here