দেশের সময় ওয়েবভেস্কঃ ভারত-পাক ম্যাচের লড়াই এমনই হয়। একপেশে ম্যাচের কোনও মজা নেই। ভারতের ১৮১ রানের বিনিময়ে পাকিস্তান করল শেষমেশ ১৮২/৫, এশিয়া কাপে হার ভারতের ৫ উইকেটে।
দুবাই-এ ফিরল টি-২০ বিশ্বকাপের স্মৃতি। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ। শেষ বল পর্যন্ত টানটান উত্তেজনা। প্রতি মোড়ে চমক। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের পারফেক্ট বিজ্ঞাপন। কিন্তু বিরাট কোহলি নয়, শেষ হাসি হাসলেন মহম্মদ রিজওয়ান।
রবিবার দুবাইয়ে বদলার ম্যাচে ভারতকে ৫ উইকেটে হারাল পাকিস্তান। নির্ধারিত ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৮১ রান তুলেছিল টিম ইন্ডিয়া। এক বল বাকি থাকতে জয়সূচক রানে পৌঁছে যায় বাবরের দল। ভারতের বিরুদ্ধে এই প্রথম এত বড় রান তাড়া করে জয় পেল পাকিস্তান। ৫১ বলে ৭১ রান করে ম্যাচের অ্যাঙ্করের ভূমিকা পালন করেন রিজওয়ান।
পায়ে চোট নিয়ে দাঁতে দাঁড় চেপে লড়াই চালান। তিনি আউট হওয়ার পর ম্যাচটা জেতার মতো জায়গায় ছিল ভারত। কিন্তু খলনায়ক আর্শদীপ সিং। বিষ্ণোইয়ের বলে শূন্যতে থাকা আসিফের সহজ ক্যাচ ফেলেন ভারতের জোরে বোলার। সেই মুহূর্তেই ভাগ্য গড়ে যায়। ম্যাচের শেষ ওভারে অবশ্য পাক ব্যাটারকে ফিরিয়ে কিছুটা প্রায়শ্চিত্ত করেন আর্শদীপ। কিন্তু সেটা যথেষ্ট ছিল না।
তখন দুই বলে ২ রান দরকার পাকিস্তানের। ১৯তম ওভারে ভুবনেশ্বরের মতো অভিজ্ঞ বোলারের ১৯ রান দেওয়া ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল মাত্র ৭ রান। অলরাউন্ড পারফরমেন্সের জন্য ম্যাচের সেরা মহম্মদ নওয়াজ। চটজলদি ৪২ রান করার পাশাপাশি সূর্যকুমারের উইকেট সহ তিনটে ক্যাচ নেন পাক অলরাউন্ডার।
আগের রবিবার ভারতের ‘গ্ল্যাডিয়েটর’ ছিলেন হার্দিক পাণ্ডিয়া। আজ টিম ইন্ডিয়ার ‘কিং’ হতে পারতেন বিরাট কোহলি।
৪৭ রানে তখন ব্যাট করছেন প্রাক্তন নেতা। হাসনাইনের ওভারের শেষ বলে ব্যাকহ্যান্ডে ছক্কা মেরে পৌঁছলেন অর্ধশতরানে। ৩৬ বলে ৫৩ রান বিরাটের। ফর্মে থাকা ব্যাটার ছাড়া এই শট খেলা সম্ভব নয়। কমেন্ট্রি বক্স থেকে ভেসে এল ওয়াসিম আক্রমের কণ্ঠস্বরে, ‘দ্য কিং ইজ ব্যাক।’ সত্যিই বিরাট প্রত্যাবর্তন। ফিরলেন ‘কিং কোহলি।’
উইকেটে একা দাঁড়িয়ে থেকে দলকে পৌঁছে দিলেন লড়াই করার মতো জায়গায়। ৪৪ বলে করেন ৬০ রান। তারমধ্যে রয়েছে ৪টে চার, ১টা ছয়। ভারতের ইনিংস শেষ হওয়ার দুই বল আগে রানআউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন বিরাট। আবার পুরোনো কোহলির একটা ঝলক দেখা গেল। ক্রিজে রাজার মতো চাল, শরীরীভাষায় আত্মবিশ্বাস ছুঁয়েছুঁয়ে পড়া, সবই মজুত ছিল রবিবাসরীয় সন্ধেয়।
এশিয়া কাপের প্রথম দুই ম্যাচে নায়ক ছিলেন হার্দিক পাণ্ডিয়া এবং সূর্যকুমার যাদব। এই দু’জনকেই টার্গেট করেছিল পাকিস্তান। দ্রুত ফিরিয়েও দেন সূর্য (১৩) এবং হার্দিককে (০)। রানের খাতাই খুলতে পারেননি আগের পাকিস্তান ম্যাচের হিরো। ব্যর্থ ঋষভ পন্থ (১৪) এবং দীপক হুডাও (১৬)। শুরুতে রোহিত শর্মা এবং কেএল রাহুল ছাড়া কেউই রান পায়নি। দুই ওপেনারই ২৮ রানে আউট হন। একা দলকে টানেন কোহলি। অথচ ভারতের শুরুটা দারুণ হয়েছিল।
টসে জিতে রোহিতদের ব্যাট করতে পাঠান বাবর আজম। প্রথম ওভার থেকেই আক্রমণাত্মক মনোভাব স্পষ্ট করে দেন ভারতের নেতা। তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দেন রাহুল। মনে হয়েছিল অনায়াসেই ২০০ রানের গণ্ডি পেরিয়ে যাবে টিম ইন্ডিয়া। ৪.২ ওভারে ৫০ রান তুলে ফেলে ভারত।
পাওয়ার প্লের শেষে ১ উইকেট হারিয়ে ভারতের রান ছিল ৬২। ১০ ওভার পর ৩ উইকেট হারিয়ে ৯৩ রান তোলে টিম ইন্ডিয়া। ১০০ রানে পৌঁছতে লাগে ১০.৫ ওভার। কিন্তু তার পরের ওভারগুলোয় একাধিক উইকেট হারানোয় রানের গতি মন্থর হয়ে যায়।
ম্যাচে ফেরে পাকিস্তান। জোড়া উইকেট নেন শাদাব। ১৫০ রান পার করতে ১৭.১ ওভার অপেক্ষা করতে হয় টিম ইন্ডিয়াকে। শেষদিকে পাকিস্তানের জঘন্য ফিল্ডিংয়ের জন্য ৭ উইকেটের বিনিময়ে ১৮১ রানে শেষ করে ভারত।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভাল হয়নি পাকিস্তানের। আবার ব্যর্থ বাবর আজম। ৩.৪ ওভারে দলের ২২ রানে ফিরে যান পাক অধিনায়ক। ব্যক্তিগত সংগ্রহ মাত্র ১৪ রান। বিষ্ণোইয়ের বলে রোহিতের হাতে ধরা পড়েন বাবর। রান পাননি ফাকার জামানও (১৫)। কিন্তু রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন মহম্মদ রিজওয়ান। টি-২০ বিশ্বকাপে রোহিতদের থেকে ম্যাচ কেড়ে নিয়েছিলেন তিনিই।
এদিন উইকেটকিপিং করার সময় ডান পায়ে চোট পান রিজওয়ান। সেই নিয়েই দুর্দান্ত ব্যাট করলেন। ৩৭ রানে অর্ধশতরান সম্পূর্ণ করেন। চার নম্বরে মহম্মদ নওয়াজকে নামানো বাবরের মাস্টারস্ট্রোক। এটাই পাকিস্তানের ইনিংসের ভীত গড়ে দেয়। তৃতীয় উইকেটে ৭৩ রান যোগ করে এই জুটি। ২০ বলে ৪২ রান করে আউট হন নওয়াজ। জুটি ভাঙেন ভুবনেশ্বর। ১৩৬ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় পাকিস্তান। ১৬.৫ ওভারে রিজওয়ানের আউট ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট হতে পারত ।
বলের পেস বদলে পাক ওপেনারকে ফাঁদে ফেলেন হার্দিক। ৫১ বলে ৭১ রান করে আউট হন রিজওয়ান। লড়াকু ইনিংসে রয়েছে ৬টি চার এবং ২টি ছক্কা। কিন্তু সেই ফায়দা তুলতে পারেনি রোহিতরা। নিজেদের ভুলে ম্যাচ হাতছাড়া হয় ভারতের।
পাক দলের ব্যাটসম্যানরা অনেক অঙ্ক কষে এগিয়েছেন। তার মধ্যে রিজওয়ানের ব্যাটিং ও ভারতীয় দলের ফিল্ডিং এই ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।