অর্পিতা বনিক – দেশের সময়: উত্তর২৪পরগনা জেলার বনগাঁয় বৃষ্টির জন্য চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করছেন পাটচাষিরা। এরই মধ্যে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। এ বছর পাটের ভালো দাম পেয়ে চাষিরা খুশি হলেও এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ জমির পাটই কেটে জাগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না পর্যাপ্ত বৃষ্টির জলের অভাবে।
বৃষ্টি না হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বনগাঁর পাট চাষিরা। ক্ষতির আশঙ্কা আছে ধান এবং সব্জি চাষেও। জেলা কৃষি দফতরের কর্তারা জানান, বৃষ্টি না হলে বড় ক্ষতি হবে। দেখুন ভিডিও
ছয়ঘরিয়া গ্রামের পাটচাষি বিমল বিশ্বাস বলেন, এ বছর দু’ই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। পাটের ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। কিন্তু জলের অভাবে পাট কেটে জাগ দিতে পারছি না। গ্রামের রাস্তারর উপরে ফেলে রেখেছি। স্যালোমেশিনে সেচ দিয়ে জল দিতে হবে। যা অনেক ব্যয়বহুল। ইছামতি নদীতেও তেমন জল নেই তার উপরে কচুরিপানা থাকায় সমস্যা আরও বেড়েছে৷
কিন্তু বৃষ্টির অভাবে এবং তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় পাটচাষে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন বিমলদের মতো বহু পাট চাষি৷।
বিমলের কথায়, “পাট চাষ খুব খারাপ অবস্থায় আছে। বৃষ্টির অভাবে পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। গাছ বাড়ছে না। দু’ বিঘা চাষ করতে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কী হবে বুঝতে পারছি না।”
শুধু বিমল নয়, গোটা উত্তর ২৪ পরগনায় পাট চাষে ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। বিভিন্ন খেতে পাটগাছ মরে যাচ্ছে। পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। রঙ হলুদ হতে শুরু করেছে। পাট বাড়ছে না। চাষিরা জানান, চৈত্রের শেষে পাট লাগানো হয়। শ্রাবণের শেষে পাট কাটার কথা ৷
কৃষক ও কৃষি বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, এবার আষাঢ় মাসে বৃষ্টি খুবই কম হওয়ায় এ অঞ্চলের ডোবা-নালা, খাল-বিলে জল জমেনি। এ কারণে পাট জাগ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনমতো জল না পেয়ে জমি থেকে পাট কাটতে পারছেন না কৃষক।
ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন গ্রামের অবস্থা প্রায় একই ধরনের। কৃষকরা জানান, এ বছর রোগবালাই খুব একটা না থাকায় পাটের ফলন খুব ভালো হয়েছে। আবার পাটের দামও গত বছরের চেয়ে বেশি হওয়ায় পাট চাষে লাভের আশা দেখছেন তারা। তবে তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় মাঠে কাছে ডোবা বা পুকুরে জলের অভাব রয়েছে৷
স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য পরিতোষ বিশ্বাস জানান,বৃষ্টি স্বল্পতায় পাট জাগ দেওয়া যাচ্ছে না। ভারিবর্ষণ না হলে খাল-বিলে জল জমবে না। সেক্ষেত্রে কৃষকদের সেচ দিয়ে জাগ দিতে হবে।
আরও এক চাষি বাদল রায় জানান, সেচের মাধ্যমে এক বিঘা জমিতে জল দিতে পারলে গাছ কিছুটা বাঁচানো সম্ভব। কিন্তু প্রতিদিন গড়ে ৪০০ টাকা খরচ করতে হবে। তা ছাড়া খেতে জল দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েকজনকে পাওয়া গেলেও তাঁদের মজুরি অনেক বেশি। যা বহু চাষির পক্ষে দেওয়া অসম্ভব।
জেলার এককৃষি অধিকর্তার কথায়, “ এ বছর দক্ষিণবঙ্গে কম বৃষ্টি হয়েছে। পাট বাড়ছে না। সব্জি শুকিয়ে যাচ্ছে। আমনের বীজতলা তৈরি করতেও সমস্যায় পড়ছেন চাষিরা। অন্য বছর রথের আগে বীজতলা তৈরি হয়ে যায়।”