দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শনিবার ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়েছিল শহর কলকাতা সহ বিভিন্ন জেলা৷
সকাল থেকে সারাদিন গ্রীষ্মের তাপের পরে ঠিক সন্ধের মুখে সাড়ে ৫টা নাগাদ ঝড়বৃষ্টি শুরু হয় বনগাঁতেও। শিল পড়েছে কিছু এলাকায়। রাস্তাঘাট ফাঁপ্রবল ঝড়বৃষ্টিতে ফাঁকা হয়ে যায়। বাটা মোড় এলাকায় যশোর রোডের দু’ধারের শিরিষ গাছের মৃত শুকনো ডাল ভেঙে পড়ে রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে যায়৷ প্রায় ১২ ঘন্টা বিদ্যুৎবিহীন থাকে গোটা বনগাঁ শহর৷প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে শনিবার বিকেলে ফিরে এল দু’বছর আগে আমপানের স্মৃতি।
বিকেলে কালবৈশাখী শুরু হলে, বিকেল সওয়া পাঁচটা নাগাদ ঝড়ের কবলে পড়ে উল্টে যায় একটি নৌকা। তাতে মোট পাঁচ জন সওয়ার ছিলেন।জানা গিয়েছে, রবিবার পুষ্পেন, সৌরদীপদের রোয়িং প্রতিযোগিতা ছিল। সেই জন্য শনিবার বিকেলে তারা অনুশীলন করছিল। তার মাঝেই ঝড় আসায় বিপত্তি।
রবীন্দ্র সরোবরে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। রোয়িং করার সময় কালবৈশাখীর কবলে পড়ে মৃত্যু দুই কিশোরের। বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ এই ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে সরোবরে পৌঁছন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম এবং নগরপাল বিনীত গোয়েল। পুলিশ সূত্রে খবর, বিকেল সওয়া পাঁচটা নাগাদ ঝড়ের মধ্যে নৌকার নিয়ন্ত্রণ হারায় সওয়ার পাঁচ কিশোর। তিন জন সাঁতরে পাড়ে আসতে পারলেও দু’জনের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা দল সাড়ে তিন ঘণ্টা খোঁজাখুঁজির পর দু’জনের দেহ উদ্ধার করে।
১৪ বছরের পুষ্পেন সাধুখাঁ নামে এক কিশোরকে নিকটবর্তী বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। অন্য কিশোর সৌরদীপ চট্টোপাধ্যায়কে এসএসকেএম হাসপাতালে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখানে রবীন্দ্র সরোবর প্রায় ২০ ফুট গভীর।
মৃত সৌরদীপ দক্ষিণ কলকাতার সাউথ পয়েন্ট স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। তার বাড়ি সরোবর সংলগ্ন রাজা বসন্ত রায় রোডে।
জেলাগুলিতেও ভারী বৃষ্টিপাত হয়। প্রাণ গিয়েছে তিন জনের। শনিবার সন্ধে নামতেই শুরু হয় কালবৈশাখী। সঙ্গে শুরু হয় তুমুল ঝড়বৃষ্টি। আর তার জেরেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে বাড়ির মাটির দেওয়াল। তাতে চাপা পড়ে মৃত্যু হয় গৃহবধূর। মৃতার নাম নমিতা মণ্ডল (৪৬)। শনিবার সন্ধেয় ঘটনাটি ঘটেছে বসিরহাটের সন্দেশখালি থানা এলাকার খুলনা গ্রাম পঞ্চায়েতের হাটগাছা গ্রামে। ঝড়ের সময় বছর ৪৬-এর নমিতা মণ্ডল বাড়ির বারান্দায় বসেছিলেন। সেই সময় হঠাৎই মাটির দেওয়াল ভেঙে পড়ে আর তাতেই চাপা পড়ে মৃত্যু হয় নমিতার। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর জখম হন মৃতার স্বামী প্রশান্ত মণ্ডলও। স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে এসে ওই দম্পতিকে উদ্ধার করে সন্দেশখালি গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
আজ রবিবার কেমন থাকবে শহরের আবহাওয়া? কী জানাচ্ছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর? হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, মঙ্গলবার পর্যন্ত কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে বৃষ্টিপাত চলবে। রবিবার সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্যোগের কালো মেঘ আরও ঘনাবে। এদিন কলকাতাতেও ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
আজ দক্ষিণবঙ্গের সমস্ত জেলাগুলিতেই ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব-পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনাতে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে বৃষ্টিপাতের সঙ্গে সঙ্গে আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তিও বাড়বে। গতকালের থেকে আজ বৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে বলেই জানা যাচ্ছে।
আজও কলকাতায় রয়েছে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা। এদিন বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি হতে পারে। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দুর্যোগ বাড়বে। রবিবার শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকতে পারে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকতে পারে ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন সকালে কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস যা স্বাভাবিকের থেকে ৫ ডিগ্রি কম এবং গতকাল শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
দক্ষিণবঙ্গের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গেও রয়েছে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা। আলিপুরদুয়ার, কোচবিহারে রয়েছে ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কতা। এছাড়াও অন্যান্য জেলাতেই বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা। সোমবার থেকে উত্তরবঙ্গে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমবে।
বুধবার থেকে পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হবে। দক্ষিণবঙ্গে কমবে বৃষ্টিপাত, জানাচ্ছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। এই বছর সময়ের আগেই রাজ্যে প্রবেশ করতে পারে বর্ষা। দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ আন্দামান সাগর এবং দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পেরিয়ে ক্রমশ অগ্রসর হচ্ছে। ছয়দিন আগেই আন্দামান সাগরে প্রবেশ করেছে মৌসুমী বায়ু। বর্তমানে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দক্ষিণ আরব সাগর, দক্ষিণ মালদ্বীপ সহ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে বেশিরভাগ অংশ এবং পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এ প্রবেশ করেছে।
এছাড়াও মায়ানমার সংলগ্ন সাগরে তৈরি হয়েছে নিম্নচাপ। যা ক্রমশ সরে থাইল্যান্ড ও মায়ানমার সংলগ্ন এলাকায় শক্তি হারাতে পারে। এছাড়াও কর্নাটকে অবস্থান করছে একটি ঘূর্ণাবর্ত।