পার্থসারথি নন্দী, বনগাঁ: ১০৮টি পুরসভার (দার্জিলিং ছাড়া) নির্বাচনের জন্য তৃণমূলের প্রার্থিতালিকা প্রকাশ করা হয় শুক্রবার বিকেলে। পরিস্থিতি ঘোরালো হয় তার পরেই।
তৃণমূলের ‘অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ’ এবং ‘মিডিয়া গ্রুপে’ বিশদ প্রার্থিতালিকা প্রকাশিত হয়। তার পরেই রাজ্যের নানা জায়গা থেকে বিক্ষোভ, অবরোধ, প্রতিবাদের খবর আসতে থাকে। একাধিক নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ-বিধায়ক তাঁদের অসন্তোষের কথা জানাতে থাকেন দলের উপরতলায়। এর পর রাতেই প্রার্থিতালিকা প্রকাশে বিভ্রান্তি স্বীকার করে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব জানায়, চূড়ান্ত তালিকা জেলা সভাপতিদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও রাজ্য জুড়ে কর্মীদের ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি। শুক্রবার রাত থেকেই তার রেশ রয়েগেছে বনগাঁ পুরসভা এলাকায়।
রবিবার সকালে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে কপালে ঠাকুরদালান থেকে কপালে চন্দনের ফোঁটা লাগিয়ে তৃণমূল প্রার্থী গোপাল শেঠ তথা বনগাঁ পুরসভার পুর প্রশাসক তাঁর শতাধিক কর্মী সমর্থকদের কে সঙ্গে নিয়ে পুর নিবার্চনের প্রচারে পা রাখলেন ৩ নং ওয়ার্ড এলাকায়৷
গোপাল বাবুর মিছিল যখন ফুলতলা কলোনী ক্লাব অতিক্রম করছে ঠিক সেই মুহূর্তে স্থানীয় বাসিন্দা রাজেশ সমাদ্দার নিজেকে তৃণমূলকর্মী হিসাবে পরিচয় দিয়ে বললেন,গোপাল শেঠের সঙ্গে কোন স্থানীয় মানুষনেই পুরসভার ২২টি ওয়ার্ড থেকে লোক ভাঁড়া করে নিয়ে এসে ওয়ার্ডে প্রচার শুরু করল৷ পাশাপাশি তিনি আরও জানান শঙ্কর আঢ্য এই ওয়ার্ডের প্রকৃত দাবিদার তিনি টিকিট পেলে সব তৃণমূল কর্মীরা প্রচারে বেড়তেন৷ ফের প্রকাশ্যে এলো তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব৷
এটাই লাখ টাকার প্রশ্ন ? বনগাঁ কি তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বর আঁতুড়ঘর?
‘দলে দ্বন্দ্ব নয়’, বুধবার নেতাজি ইনডোরে তৃণমূলের চেয়ারপার্সন নির্বাচনে , চেয়ারপার্সনের চেয়ারে পুনর্নির্বাচিত হয়ে এই বার্তা দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
বিজেপি নেতা দেবদাস মন্ডল বলেন, গোটা বাংলাতেই তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব প্রকট ,তবে বনগাঁ তার আঁতুড় ঘর৷ ২২টি ওয়ার্ডেই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সুনামী হয়ে গেছে অনেক আগেই এখন অনেকেই কলার ভেলায় ভেসে বিজেপি-র ডাঙ্গায় ওঠার চেষ্টা করছেন৷ এবারের পুরোভোটে ২২-এ- ২২ টি আসন পাবে বিজেপি৷ একুশের বিধান সভার নির্বাচনে মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁরা বিজেপি-র সঙ্গেই আছেন৷
প্রসঙ্গত, ২০২২ পৌরসভা নির্বাচনে বনগাঁয় শঙ্কর ও গোপালের নিজ নিজ অনুগামীরা ভোটের ময়দানে একে অপরের পাশে দাঁড়াবে না বলেই অনেক আগেই তা অনুমান করেছিলেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ। বাস্তবিকই দেখা গেল, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এড়াতে প্রার্থী তালিকায় শঙ্করের নামই নেই। ৩ নং ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী করা হয়েছে পুর প্রশাসক গোপাল শেঠকে৷
শঙ্করকে প্রার্থী করা না হলেও তাঁর স্ত্রী জ্যোৎস্না আঢ্য লড়বেন ৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে৷ টিকিট না পেয়ে শঙ্কর বলেন, দল যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে , তা আমার কাছে শিরোধার্য৷ আমি ১১ বছর শহর তৃণমূলের সভাপতি ছিলাম ৷ কিন্তু প্রার্থী বাছাই করা নিয়ে আমার পরামর্শ কেউ নেননি৷
এর পরই বিরোধ অব্যহত হয় । বিক্ষোভ দেখান শঙ্কর অনুগামীরা। যদিও, এই ঘটনায় শঙ্করের প্রতিক্রিয়া ওনারা কোন অনুগামী নয়,কর্মী সকলেই বিভিন্ন ওয়ার্ডের কর্মী সমর্থক ৷বনগাঁর ২২টি ওয়ার্ডের কয়েক হাজার মানুষ বিক্ষোভ মিছিল করেছেন সেটা শুধু আমি টিকিট পাইনি বলে নয় , প্রতিটি ওয়ার্ডের প্রার্থী তালিকা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে বলে এটা হচ্ছে৷
শনিবার যশোর রোডের কাছে অবরোধ করেন তৃণমূল কর্মীরা। তাঁদের দাবি, বনগাঁ পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী ‘বহিরাগত’ দিলীপ দাসকে সরিয়ে প্রাক্তন কাউন্সিলর প্রশান্ত বালা অথবা তাঁর স্ত্রী কবিতা বালাকে প্রার্থী করতে হবে। এছাড়া ১নং ,১৭ নং এবং ১৯ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী বদলের দাবিতে কার্যত উত্তাল হয়ে উঠেছে বনগাঁ ৷
এদিকে ৩ নং ওয়ার্ডে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী গোপাল শেঠের নেতৃত্বে দেওয়াল লিখন শুরু করে শনিবার বিকালে৷ রবিবার সকালে কর্মী সমর্থকদেরকে নিয়ে প্রথম দিনের নির্বাচনী প্রচারে বেড়িয়ে গোপাল শেঠ বলেন, আজ খুব মন খারাপের দিন , আমি ভাষা হারিয়েছি, অত্যন্ত দয়ালু ও আদরের লতাদিদি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। কোকিলকণ্ঠীর প্রয়ানে শোকের ছায়া গোটা ভারত তথা পৃথিবী জুড়ে৷ তারপর বললেন- আমার জন্মস্থান বনগাঁ-
আমার পিতৃ পরিচয় ঈশ্বর ভূপেন্দ্র নাথ শেঠ, আমার প্রিয় দিদির নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আমাদের দলের নাম তৃণমূল কংগ্রেস , এটাই আমাদের গোষ্ঠী এখানে কোন দ্বন্দ্ব নেই আছে শুধুভালবাসা।আমাদের দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশির্ব্বাদ ও নিদের্শকে মাথায় রেখে দুয়ারে দুয়ারে প্রচার শুরু করেছি ৷