দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃ নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস খুনের মামলায় বিজেপির রানাঘাট দক্ষিণের জেলা সভাপতি জগন্নাথ সরকারকে তলব করল সিআইডি। জানা গেছে আজ সকালে তাঁকে ভবানীভবনে ডেকে পাঠানো হয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তাঁকে।
গোয়েন্দাদের দাবি, এই হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত অভিজিৎ পুন্ডারিকে খুনের ঠিক আগে বেশ কয়েকবার জগন্নাথবাবু ফোন করেছিলেন। গোয়েন্দারা জানান, অভিজিতের মোবাইল ফোনের কললিস্ট ঘেঁটেই এই তথ্য হাতে এসেছে তাঁদের। তারপরেই জগন্নাথবাবুকে জেরা করার সিদ্ধান্ত নেয় সিআইডি। এই খুনের মামলায় অন্য় অভিযুক্তের সঙ্গে জগন্নাথবাবুকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে সিআইডি।
৯ ফেব্রুয়ারি সরস্বতী পুজোর সন্ধেবেলা নিজের বিধানসভা এলাকার ফুলবাড়িতে একটি পুজোমণ্ডপে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসকে (৪০) গুলি করে দুষ্কৃতীরা। শক্তিনগর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। হাঁসখালি ব্লকের বগুলার ফুলবাড়ি এলাকায় বড় বাজেটের ওই সরস্বতী পুজোর উদ্বোধন করতে গেছিলেন সত্যজিৎবাবু। অনুষ্ঠান চলাকালীনই তাঁর উপর হামলা করে দুষ্কৃতীরা। ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই তীব্র উত্তেজনা ছড়ায় গোটা এলাকায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
বিধায়ক খুনের ঘটনায় ইতিমধ্যেই পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের নাম সুজিত মণ্ডল, কার্তিক মণ্ডল, কালীপদ মণ্ডল, নির্মল ঘোষ ও অভিজিৎ পুন্ডারি। অভিজিৎই সে দিন বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল বলে পুলিশের অভিযোগ। ঘটনার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছিল সে। অবশেষে ডেবরায় রাধামোহনপুর থেকে গ্রেফতার করা হয় তাকে। ধরা পরার পর জেরায় অভিজিৎ দাবি করেছিল পার্টিগত দিক থেকে তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। মামলার জট খুলতে এ বার স্থানীয় বিজেপি নেতাকে তলব করল সিআইডি।
খুনের পরেই রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে ওঠে। পরের দিনই এলাকায় যান তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সত্যজিৎবাবুর স্ত্রীকে ফোন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল জেলা নেতৃত্ব এবং জেলার পর্যবেক্ষক পার্থ চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, খুনের নেপথ্যে মুকুল রায়ের হাত রয়েছে। থানায় যে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল, তাতেও মুকুলবাবুর বিরুদ্ধে স্পষ্ট অভিযোগ জানানো হয়।
তার পরেই নদিয়ার জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তকে আইনি নোটিস পাঠানোর পাশাপাশি কলকাতা হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেন মুকুলবাবু। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। এই মামলাতেই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হলেও ৭ মার্চ পর্যন্ত তাঁকে গ্রেফতার করা যাবে না। তবে জেরার জন্য ডাকা হলে যেতে হবে তাঁকে।