দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ রবিবার সকাল ৭টা থেকে শুরু হয়ে গেল কলকাতা পুরসভা নির্বাচন । সকাল সাতটার আগে থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষ। নির্বাচন হচ্ছে ইভিএম-এর সাহায্যে। ২১ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার ভোট গণনা কলকাতার। আজ, রবিবার ভোট হচ্ছে ১৬টি বরোর মোট ১৪৪টি ওয়ার্ডে। মোট বুথের সংখ্যা ৪ হাজার ৯৫৯। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে কলকাতা পুরভোটে সমস্ত বুথে সিসিটিভি রাখতে হয়েছে। ফলে পুরভোটের নিরিখে কিছুটা হলেও এবার বেনজির চিত্র কলকাতায়। সমস্ত বুথে সিসিটিভি-র ব্যবস্থা করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। সিসিটিভির পাশাপাশি সব বুথে থাকছে সশস্ত্র বাহিনীও।
রবিবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে কলকাতা পুরসভার ভোটগ্রহণ। ভোট শুরু হতেই উত্তেজনা ছড়াল ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে।
বেলেঘাটার বুথে বেঞ্চে উঠে সাদা কাগজে ঢাকা হচ্ছে সিসিটিভি! প্রকাশ্যে সেই ফুটেজ – ছবি: সংগৃহীত৷
সকাল সকাল সিপিএমের তরফ থেকে অভিযোগ এসেছিল। বেলেঘাটার ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে বুথের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে এল। সেখানে দেখা যাচ্ছে বেঞ্চের উপর উঠে একজন সাদা কাগজ এঁটে দিচ্ছেন সিসিটিভি ক্যামেরার গায়ে। অর্থাৎ ক্যামেরা ঢেকে দেওয়া হচ্ছে। এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে নজরদারি।
অভিযোগের তির তৃণমূলের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, কংগ্রেসের এজেন্টদেরও বসতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ নন্দনের। যদিও তৃণমূলের দাবি, তাদের বিরুদ্ধে তোলা সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা। এই ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী শচীনকুমার সিংহ।
বেলেঘাটার ৩৬ নং ওয়ার্ডের এক বুথ থেকে এমন ছবি প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল শুরু হয়ে গেছে। ওই চত্বর থেকে আগেই সিপিএম অভিযোগ করেছিল সিসিটিভি ঢাকার। অভিযোগের তির ছিল শাসকদলের দিকেই। তবে বুথের প্রিসাইডিং অফিসার নিজে সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন সিসিটিভি সচল রয়েছে প্রথম থেকেই। তবে ফুটেজ সামনে আসতেই নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ ও অবাধ ভোট সুনিশ্চিত করতে কলকাতার সমস্ত বুথেই সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কিন্তু সেই সিসিটিভিই যদি এভাবে আড়ালে চলে যায় তবে ভোটের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
বাগবাজারে সবুজ-গেরুয়া ধুন্ধুমার : নির্দল প্রার্থী নিজেই এজেন্ট হয়ে বসতে চান বুথে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বাগবাজারের পশুপতি বোস লেনে। সেখানে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ১০ নম্বর বুথে এদিন সকাল সকাল এজেন্ট হিসেবে বসতে যান নির্দল প্রার্থী নিজেই। কিন্তু প্রার্থীর নিজে এজেন্ট হওয়ার আইন নেই। তৃণমূল কর্মীরা তাঁকে বাধা দেন। শুরু হয় বচসা।
অভিযোগ এরপর সেখানে আসেন এলাকার বিজেপি প্রার্থী। তিনি ওই নির্দল প্রার্থীকেই এজেন্ট হিসেবে বসাতে চান। শুরু হয় তৃণমূল বিজেপি গোলমাল। বচসা ক্রমে হাতাহাতির পর্যায়ে পৌঁছে যায়।
প্রার্থী এজেন্ট হয়ে বসার প্রতিবাদে বুথের সামনেই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তৃণমূল কর্মীরা। পাল্টা আওয়াজ তোলে বিজেপিও।
প্রসঙ্গত, গত বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল আসন পেয়ে রাজ্যে তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। আর ২০০ আসনের স্বপ্ন দেখে মাত্র ৭৭ আসনেই থেমে যেতে হয়েছে বিজেপি-কে। বিধানসভার পর থেকে যে কয়েকটি উপনির্বাচনও হয়েছে রাজ্যে, তাতেও রীতিমতো পর্যুদস্ত হতে হয়েছে গেরুয়া শিবিরকে। এই পরিস্থিতিতে কলকাতা পুরভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল ও ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় বিজেপি। কিন্তু দুই বেঞ্চেই আদালত রাজ্য পুলিশের উপরই ভরসা দেখিয়েছে।
শাসক দল তৃণমূল অবশ্য শুধু উন্নয়নের উপর ভর করেই কলকাতা পুরসভার একচেটিয়া দখলে আত্মবিশ্বাসী। এক্ষেত্রে ২০১৫ সালে শেষ পুরভোটের ফলকেও এবার তাঁরা ছাপিয়ে যাবে বলে আশাবাদী ঘাসফুল শিবির। ২০১৫ কলকাতা পুরভোটে তৃণমূল একাই জিতেছিল ১১৪টি আসন। ২০১৫ সালে বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ৭টি আসন। এবারও রাজ্যে ভোটের শতাংশ গেরুয়া শিবির অনেকটা বাড়িয়ে নিলেও কলকাতা পুরসভায় খুব বেশি আসন পাওয়ার জায়গায় নেই বলেই মত রাজনৈতিক মহলের।
অপরদিকে, ২০১৫ সালে বামেরা পেয়েছিল ১৫টি আসন। কংগ্রেস পেয়েছিল ৫টি আসন। শেষ কলকাতা পুরভোটে অন্যান্যরা পেয়েছিল ৩টি আসন। সব মিলিয়ে এ বারের পুরভোটেও ফের সবুজ ঝড় কিনা, সেদিকেই তাকিয়ে রাজ্য রাজনীতির কুশীলবরা।