দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ : শেষমেশ ত্রিপুরার আদালত থেকে জামিন পেলেন ধৃত ১৪ তৃণমূল নেতা। ৫০ হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ড জমা দিয়ে হয়েছে তাঁদের। এর পরে তাঁদের বিরুদ্ধে রুজু হওয়া অতিরিক্ত মামলা বন্ধ করে দিয়েছেন বিচারক। রবিবার বিকেল পর্যন্ত তৃণমূলের পক্ষে কলকাতা থেকে মোট আট জন আইনজীবী এবং ত্রিপুরার চার জন আইনজীবী আদালতে লড়াই করছিলেন। অবশেষে জয়ী হলেন তাঁরা।
উল্লেখ্য,গতকাল ত্রিপুরার আমবাসার ডুলাবাড়িতে দেবাংশুদের গাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছিল। ফেসবুক লাইভ করে দেবাংশু বলেন, তাঁর পিঠে কাচ গেঁথে রয়েছে। ওই লাইভেই দেখা যায়, রাস্তায় বসে পড়েছেন সুদীপ রাহা। তাঁরা মাথায় জল দিচ্ছেন টিএমসিপির প্রাক্তন রাজ্য সভানেত্রী জয়া দত্ত। সপ্তাহ খানেক আগেই এই তিন তরুণ নেতানেত্রী ট্রেনে ত্রিপুরা গিয়েছিলেন।
এসবের পরে শনিবার রাতভর থানার সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করে তৃণমূল। দেবাংশুদের গাড়িতে হামলার অভিযোগে নিরাপত্তার দাবি জানান ঘাসফুলের নেতা নেত্রীরা। খোয়াই থানার সামনে সারারাত চলে তাঁদের এই অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচি। এরপর আজ সকালে মহামারী আইনে ১৪ জন তৃণমূল যুবনেতাকে গ্রেফতার করে ত্রিপুরা পুলিশ।
গ্রেফতার করা হয় সুদীপ রাহা, দেবাংশু ভট্টাচার্য, জয়া দত্ত, তানিয়া পোদ্দার, মনোরঞ্জন দেবনাথ, শিবতনু সাহা, আশিসলাল সিং, রণবীর ভৌমিক, মেহেদি হাসান, স্বপন মিঁয়া, অমল ভৌমিক, সুমন মিঁয়া, সুরজিৎ সূত্রধর এবং দেব সরকারকে। তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৮ এবং ১৮৯৭-এর মহামারি আইনের তিনটি ধারায় মামলা রুজু করা হয়। ১৪ জনকেই আটক করে প্রথমে খোয়াই ধলাবিলের পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। রবিবার ভোরে তাঁদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় খোয়াই থানায়।
মহামারী আইন প্রয়োগ করে ত্রিপুরায় তৃণমূলের ১১ জন নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রবিবার তাঁদের মুক্তির দাবিতে খোয়াই থানায় উপস্থিত হন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ রাজ্য তৃণমূলের নেতৃবৃন্দ। থানার মধ্যেই আঙুল উঁচিয়ে ত্রিপুরা পুলিশের অফিসার ইনচার্জকে রীতিমতো শাসালেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
থানায় গিয়ে অবস্থান বিক্ষোভ করেছে তৃণমূল। সমস্যার সমাধান না হলে থানা থেকে তাঁরা নড়বেন না বলে দাবি করেন। এদিকে থানার বাইরেও তখন বিজেপি কর্মীদের জমায়েত হয়েছে বিস্তর। সেখান থেকে ‘গো-ব্যাক’ স্লোগানও উঠতে শোনা গিয়েছে। যে কারণে দেবাংশুদের গ্রেফতার করা হয়েছে ঠিক সেই একই কারণে কেন বিজেপি কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
অফিসার ইনচার্জের দিকে আঙুল তুলে কড়া গলায় বলেছেন, ‘আপনি অশোক স্তম্ভ কাঁধে নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলছেন, পদ্মফুল নিয়ে নয়। এটা মনে রাখবেন।’
পুলিশ তাঁদের বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করছে ঠিকই, কিন্তু ধৃতদের না ছেড়ে দিলে থানা থেকে সরবেন না বলে জানিয়েছিলেন অভিষেকরা।
এদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও থানায় ছিলেন কুণাল ঘোষ, দোলা সেন, ব্রাত্য বসু প্রমুখ। অভিষেকের কড়া ধমকের কোনও জবাব দিতে শোনা যায়নি ওসিকে।
অভিষেক থানায় বসে আরও প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন অফিসারের দিকে। তিনি অন্তত ৫০০ জন বাইরে দাঁড়িয়ে আছে কেন ওদের একজনকেও মহামারী আইনে গ্রেফতার করছেন না? স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কেন পদক্ষেপ করছেন না ওদের বিরুদ্ধে?
বিজেপির লোকদের ছেড়ে রাখবেন আর তৃণমূলের ছেলেরা মার খাবে এই দ্বিচারিতা চলতে পারে না, স্পষ্ট জানান ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ।
কোন অভিযোগের ভিত্তিতে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে, থানায় তার নথি দেখতে চান অভিষেক। পুলিশ আধিকারিকের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি অশোকস্তম্ভর মর্যাদা নিয়ে কথা বলুন, পদ্মফুলের নয়।’ গ্রেফতার সকলকে না ছাড়া পর্যন্ত প্রয়োজনে সারা দিন থানায় বসে থাকবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূলের দাবি, যদি থানা থেকে জামিন না দেওয়া হয়, তাহলে গ্রেফতার হওয়া কর্মীদের ওপর থেকে জামিন অযোগ্য ধারার মামলা অবিলম্বে তুলে নিতে হবে। শেষ পর্যন্ত বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরে জামিন মেলে ধৃত যুবনেতাদের।