দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে আজই সম্ভবত বিজেপি ছেড়ে ‘পুরনো দল তৃণমূলের পথে মুকুল রায় ও তাঁর ছেলে শুভ্রাংশু রায়। এমনই জল্পনা শুরু হয়েছে। অন্তত তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রের তেমনই দাবি। তৃণমূল ভবনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তৃণমূলের প্রথম সারির নেতাদের উপস্থিতিতে মুকুল এবং শুভ্রাংশুর রায়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা। সেখান থেকেই ঘোষণা হবে তাঁর ‘ঘর ওয়াপসি’র কথা।
তৃণমূল ভবনে যাচ্ছি। এদিন নিজের বাসভবন থেকে বেরিয়ে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন মুকুল রায়। সঙ্গে ছিলেন ছেলে শুভ্রাংশু রায়। এদিন তৃণমূল ভবনে এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুকুল রায়ের এই বক্তব্যে কার্যত স্পষ্ট তৃণমূলে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতির যোগ দেওয়ার কার্যত সময়ের অপেক্ষা।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তৃণমূল ছেড়েছিলেন মুকুল রায়৷ তার প্রায় পাঁচ মাস আগে থেকেই তৃণমূল ভবনে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি৷ ফলে প্রায় চার বছর পর তৃণমূল ভবনে পা রাখলেন মুকুল৷
যদিও মুকুল শিবির থেকে এখনও কিছু বলা হয়নি। ঠিক কেন বিজেপি ছাড়তে চলেছেন মুকুল রায়, তার কারণ যদিও তিনি নিজে এখনও জানাননি ঠিকই। কিন্তু মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ নেতা-কর্মীরা স্পষ্টভাবেই এই সিদ্ধান্তের কার্য-কারণ জানেন বলে মনে করছেন অনেকেই ।
উনিশের লোকসভা ভোটে বাংলায় ১৮টি আসন বিজেপিকে জেতানোর অন্যতম কারিগর ছিলেন এই মুকুল রায়। অমিত শাহ প্রকাশ্যে এই কথা স্বীকারও করেছিলেন জনসভায়।
অথচ দেখা গেল, যখন বাংলায় বিধানসভা ভোট হল, সেই মুকুল রায়কে তেমন ভাবে ব্যবহারই করল না বিজেপি। তুলনায় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেন অরবিন্দ মেনন, শিবপ্রকাশরা। এদিকে যে মুকুল রায় লোকসভা ভোটে বাংলায় বিজেপিকে ১৮টি আসন জেতানোর কারিগর, তিনি সল্টলেকের নিজের গেস্টহাউসে অনুগামীদের নিয়ে কার্যত বসে থাকলেন, কখন দিল্লি তাঁকে ডাকবে, ব্যবহার করবে। সেটা আর কখনওই হলনা বরং তাঁকে কলকাতার ওয়াররুম থেকে ঠেলে কৃষ্ণনগর উত্তরের প্রার্থী করে দেওয়া হয় একুশের বিধানসভা নির্বাচনে।
মুকুল রায়-ঘনিষ্ঠদের মধ্যে বনর্গাঁর এক নেতা বলছেন, দাদা কেবল একটা বিধানসভার বিধায়ক হওয়ার জন্য বিজেপি-তে যোগ দেননি। তাঁর প্রত্যাশা ছিল, তৃণমূলে থাকাকালীন যে ভূমিকা ও দায়িত্ব তিনি পালন করতেন, সেটাই করবেন বিজেপিতে যোগ দিয়েও। অবশ্য বিজেপি দীর্ঘ দিন অপেক্ষা করিয়ে মুকুল রায়কে সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির পদ দিয়েছিল। তবে সেই পদের বিশেষ কোন কার্যকরী ভূমিকা ছিল না ।
এই পরিস্থিতিতে, তাঁর পক্ষে কেবল একটি পদ নিয়ে বসে চুপ করে থাকাটা সময় অপচয় মাত্র। ফলে ভবিতব্য যা ছিল, তাই হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বেশকিছু দিন ধরেই মুকুল বিজেপি-র থেকে দূরত্ব বাড়াচ্ছিলেন। দলের বৈঠকেও যাননি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন বটে। কিন্তু তা-ও খানিকটা অনীহা নিয়েই। ভোটের আগে এবং পরে তাঁকে কোনও সাংগঠনিক ভূমিকায় সে ভাবে দেখাও যায়নি। বিধায়ক হয়েছেন বটে। কিন্তু শপথ নেওয়া ছাড়া অন্য কোনও ভূমিকায় তাঁকে দেখা যায়নি।
স্ত্রী-র অসুস্থতা নিয়ে তাঁর সঙ্গে বিজেপি-র দূরত্ব বাড়ছিল। মমতা ভোটের আগে থেকে মুকুল সম্পর্কে প্রকাশ্যেই সহানুভূতিশীল থেকেছেন। মুকুলও প্রচারে নেমে মমতা-বিরোধী একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। ফলে অতীতের ‘বৈরিতা’ অনেকটাই কমেছে। তার সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে সামগ্রিক ভাবে বিজেপি শিবিরের তরফে মুকুলের প্রতি ‘ঔদাসীন্য’। সব মিলিয়ে পদ্মশিবিরের খুব স্বচ্ছন্দে ছিলেন না মুকুল রায় ৷ এখন দেখার মুকুল আপাতত একাই তৃণমূলে ফিরে এলেন নাকি তাঁর অনুগামীরাও (পুত্র শুভ্রাংশু-সহ) দ্রুত ফিরবেন, সে প্রশ্নের নিষ্পত্তি কিভাবে হয়!