দেশের সময়ওয়েবডেস্কঃ পরপর দু’দিন দেশে করোনার সংক্রমণ নিম্নমুখী হল। টিকার গতি বাড়া এবং বিভিন্ন এলাকায় আংশিক বা পূর্ণ লকডাউন শুরু হতেই এই ফল মিলেছে বলে অনেকে মনে করছেন। গত ২৪ ঘণ্টার পরিসংখ্যান বলছে, সুস্থতার হারও সামান্য বেড়েছে দেশে। ফলে সবমিলিয়ে পরিস্থিতি যে খানিকটা আশাব্যঞ্জক, তা বলাই যায়। চিকিৎসক মহল বলছেন, আরও শক্তপোক্ত করে লাগু করতে হবে কোভিড বিধি। তবেই মিলবে সুফল। গা-ছাড়া দিলে তা বিপদ বাড়াতেই থাকবে।
আজ, মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৩ লক্ষ ৫৭ হাজার ২২৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর ফলে গোটা দেশে মোট করোনা আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ২ লক্ষ ৮২ হাজার ৮৩৩-এ। গতকাল এই দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা ছিল ৩.৬৮ লক্ষ। তার একদিন আগের ৪ লক্ষ ছুঁয়ে ফেলা সংক্রমণের নিরিখে এই ৬ শতাংশ পড়তির ট্রেন্ড স্বাস্থ্য ও চিকিৎসক মহলে আশার আলো দেখিয়েছে।
এদিন দৈনিক সংক্রমণ অনেকটাই কমেছে মহারাষ্ট্রেও। এদিন গত পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে দৈনিক কোভিড রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে কম বেড়েছে মুম্বইতে। তবে জুলাই ও আগস্টে সে রাজ্যে করোনার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও উদ্ধব সরকার জানিয়ে দিয়েছে, সমস্ত পরিস্থিতির জন্য তারা তৈরি।
পরিসংখ্যান বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনামুক্ত হয়েছেন ৩ লক্ষ ২০ হাজার ২৮৯ জন। এখনও পর্যন্ত দেশে ১ কোটি ৬৬ লক্ষ ১৩ হাজার ২৯২ জন করোনা থেকে মুক্ত হয়েছেন। টিকা পেয়েছেন ১৫ কোটি ৮৯ লক্ষেরও বেশি মানুষ।
অবশ্য সামান্য কমতি-পড়তির এই হিসেবে সার্বিক দুর্যোগের ছবিটা কিন্তু বদলাচ্ছে না। কারণ, টানা ১০ দিন হতে চলল।
সারা দেশে দৈনিক সংক্রমণ ৩ লক্ষের মাত্রা ছেড়ে নামছে না। এর মধ্যে রবিবার আক্রান্তের সংখ্যা নয়া রেকর্ড তৈরি করে। একদিনে সারা দেশে কোভিড সংক্রমণ ৪ লক্ষের গণ্ডি পেরিয়ে যায়। মারা যান ৩ হাজার ৬৮৯ জন। বেহাল স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর মধ্যে ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী এই গ্রাফ চিকিৎসক মহলে চিন্তার ভাঁজ বাড়িয়ে তুলেছে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশে নাজেহাল অবস্থা। দৈনিক সংক্রমণ খানিকটা স্বস্তি দিলও মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ উদ্বেগ বাড়াচ্ছে দেশে। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৫৭ হাজার ২৯ জন। একদিনে দেশে করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩ হাজার ৪৪৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভাইরাসকে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন ৩ লাখ ২০ হাজার ২৮৯ জন।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে জানা যাচ্ছে, দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২ কোটি ২ লাখ ৮২ হাজার ৮৩৩। মোট সুস্থ হয়েছেন ১ কোটি ৬৬ লাখ ১৩ হাজার ২৯২। মোট মৃতের সংখ্যা ২ লাখ ২২ হাজার ৪০৮। এই মুহূর্তে দেশে অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা ৩৪ লাখ ৪৭ হাজার ১৩৩।
বিশেষ করে রাজধানী দিল্লির কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ কাটছে না। অক্সিজেনের ঘাটতি দূর করতে এখনও সেখানকার বিভিন্ন হাসপাতাল সোশ্যাল মিডিয়ায় আবেদন জানাচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে দেশের শীর্ষ আদালত আজ মধ্যরাতের মধ্যে রাজধানীর সমস্ত কোভিড হাসপাতালে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছে।
পাশাপাশি কোভিড-বিধ্বস্ত রাজ্যগুলিকেও সতর্ক করেছে সুপ্রিম কোর্ট। গতকাল জারি হওয়া নির্দেশিকায় যে কোনও বড় সমাবেশ কিংবা জমায়েত বাতিল এবং প্রয়োজন পড়লে জনস্বার্থের কথা মাথায় রেখে লকডাউন ঘোষণার ছাড়পত্রও সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের উপর ছেড়ে দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
সেই মোতাবেক সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে কড়াকড়ি বাড়ানোর উপর জোর দিয়েছে ওড়িশা, পাঞ্জাবের মতো একাধিক রাজ্য। ওড়িশায় আপাতত দু’সপ্তাহ এবং হরিয়ানায় চলতি সপ্তাহজুড়ে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাঞ্জাবে কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট ছাড়া সড়ক কিংবা উড়ান— কোনও পথেই বাইরে থেকে আসা যাত্রীদের রাজ্যে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পাশাপাশি জিম, রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল সপ্তাহভর বন্ধ থাকবে বলে খবর।
এদিকে প্রশাসনিক নির্দেশিকা আঁটসাঁট করার পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর ক্ষেত্রেও রদবদল আনা হচ্ছে। রবিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে পর্যালোচনা কমিটির বৈঠক বসে। সেখানে জানানো হয়, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া করোনা রোগীদের দেখভালের নয়া ব্যবস্থা আনা জরুরি। যার ফলে এমবিবিএস-এর চূড়ান্ত বর্ষের পড়ুয়াদের বাধ্যতামূলকভাবে কোভিড ডিউটিতে যোগ দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে, বাংলায় করোনা পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়ংকর হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ফের মৃতের সংখ্যা ১০০ ছুঁই ছুঁই। নতুন করে আক্রান্ত সাড়ে ১৭ হাজারেরও বেশি। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনায়। সোমবার স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, শেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ হাজার ৫০১ জন। এই নিয়ে টানা ৬ দিন ধরে রাজ্যে দৈনিক আক্রান্তের পরিসংখ্যান ১৭ হাজার পার করল। অন্যদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনার কারণে মৃত্যু হয়েছে ৯৮ জনের। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ লক্ষ ৮০ হাজার ৮৯৪। শেষ ২৪ ঘণ্টায় টেস্টের জন্য জমা পড়েছে ৫৫ হাজার নমুনা।
কলকাতায় পরিস্থিতি মারাত্মক উদ্বেগজনক । গত ২৪ ঘণ্টায় শুধু কলকাতাতেই একদিনে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত ৩৯৯০ জন । কলকাতার পরেই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে উত্তর ২৪ পরগনা। এই জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ৯৬৫ এবং একদিনে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় শেষ ২৪ ঘণ্টায় ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে আক্রান্ত ৯৬২। হুগলিতে একদিনে আক্রান্ত ৮০৪। আলিপুরদুয়ার ও দার্জিলিঙে একদিনে ২জন করোনাক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে।