দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বৃহস্পতিবার যখন নন্দীগ্রাম সহ ৩০টি আসনে দ্বিতীয় দফার ভোট গ্রহণ চলছে, তখন দুপুর ৩টে নাগাদ দক্ষিণ ২৪ পরগনায় জনসভা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ঘটনাচক্রে ঠিক সেই সময়েই নন্দীগ্রামের বয়ালে বুথে বসে রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুথের বাইরে খণ্ডযুদ্ধের পরিস্থিতি বিজেপি-তৃণমূলে।
পরিস্থিতি যখন এমনই তখন এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে সরাসরি টিপ্পনি কেটে বলেন, বাংলার ভোটের জনমত সমীক্ষা বা বুথ ফেরত সমীক্ষা যদি কেউ জানতে চান তা হলে তাঁকে খুব একটা পরিশ্রম করতে হবে না। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “দিদিকে দেখুন তা হলেই সব বুঝে যাবেন। দিদিই ওপিনিয়ন পোল, দিদিই এক্সিট পোল। ওনার চোখ মুখ হাব ভাবেই তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। প্রাথমিক ট্রেন্ডে দেখা গিয়েছিল, ভবানীপুর ছেড়ে নন্দীগ্রামে চলে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবার নন্দীগ্রামে গিয়ে বুঝলেন ভুল করেছেন”।
এদিনের সভার শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলায় জোরদার পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। আসল পরিবর্তন। প্রথম দফাতেই দমদার ভোট হয়েছে। তাতে বোঝা যাচ্ছে বিজেপি ২০০-র বেশি আসনে জিততে চলেছে।
এদিন নন্দীগ্রামে যে উত্তেজনা ছড়িয়েছে তা নিয়ে অবশ্য প্রধানমন্ত্রী কোনও মন্তব্য করেননি। তবে তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দৃশ্যত ঘাবড়ে গিয়েছেন। ঘাবড়ে গিয়েছেন বলেই তিনি তিন দিন ধরে একটা আসনেই পড়ে রয়েছেন। ইভিএমকে তিনি আগেই গালমন্দ করছেন। এখন নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে দোষারোপ করছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কথায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ঘাবড়ে গিয়েছেন সেটাই এখন বাংলার ভোটে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, প্রধানমন্ত্রীর কৌশল পরিষ্কার। প্রথম দুই দফার ভোটের পর থেকেই বিজেপি হাওয়া তুলে দিয়েছে যে তারা জিতছে। তার মাধ্যমে তৃণমূলের মনোবল ভেঙে দিতে চেয়েছেন তাঁরা। প্রধানমন্ত্রী এদিন মমতাকে টিপ্পনি করে সেই কৌশলেই আরও অক্সিজেন দিতে চেয়েছেন। যাতে গোটা বাংলায় এই ধারণা তৈরি হয়ে যায় যে ক্রমশই পিছিয়ে পড়ছে তৃণমূল। এগোচ্ছে বিজেপি।
বাংলায় চলছে হাইভোল্টেজ দ্বিতীয় দফার নির্বাচন। একদিকে যখন নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোট লুঠের অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। অন্যদিকে তখন বঙ্গ সফরে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর বিধানসভায় নির্বাচনী সভা বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাকে বাংলার ছেলেমেয়েদের হত্যার হিসেব দিতেই হবে। রক্তের খেলার হিসেব দিতেই হবে। বাংলায় রক্তের খেলা চলবে না।’ পাশাপাশি তাঁর কটাক্ষ, ‘দিদি বলছেন কুল কুল। তৃণমূল কুল নয়, বাংলার মানুষের জন্য শূল।’
বাংলায় আসল পরিবর্তন কেবল এক মাসের অপেক্ষা।’ পাশাপাশি তাঁর সংযোজন, ‘গোটা বাংলা যা করবে, নন্দীগ্রাম তা আজই দেখিয়ে দিয়েছে।’ মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের হার নিশ্চিত বলেই মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি, সহয়োগীতার জন্য অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের চিঠি লেখা নিয়েও মমতাকে কটাক্ষ করেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘১০ বছর যদি ঠিকভাবে কাজ করতেন তাহলে কী আৎ অন্য দলের কাছে সাহায্য চাইতে হত?’
জয়নগরের জনসভা থেকে বাংলাদেশ সফর নিয়ে পালটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করেন মোদী। তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে গিয়ে যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরে পুজো দিয়েছি। এটা নিয়েও দিদির আপত্তি। আমি ওড়াকান্দিতে গিয়ে দেশের জন্য আশীর্বাদ চেয়েছি এটা দেখেও দিদির রাগ হয়েছে। কালীর মন্দিরে যাওয়া কি ভুল? হরিচাঁদ ঠাকুরকে প্রণাম করা কি ভুল? প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর।’
জয়নগরের সভায় শিল্প নিয়েও একগুচ্ছ আশ্বাস দেন নমো। তাঁর কথায়, ‘বিজেপি এলে বাংলা শিল্পের মাঠ হয়ে উঠবে। আমফানে সাহায্য করার বদলে আপনাদের লুটে নিয়েছে দিদি। কেন্দ্রের টাকা মানুষের বদলে তৃণমূলের দফতরে গিয়েছে। এই দুর্নীতির অন্য নাম হল ‘খেলা হবে।’ দিদি বাংলার খেলার মাঠ ছিল, আছে, থাকবে। বিজেপি-র জন্য বাংলা উন্নয়নের মাঠ হয়ে উঠবে। বাংলা শিক্ষার মাঠ হয়ে উঠবে।’
এদিন প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ তৃণমূলের তোলাবাজি সকলের বাঁচা কষ্টকর করে তুলেছে। সব জায়গায় কাটমানি। গরিবের থালাতেও কাটমানি।’ সবশেষে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লাইন ধার করে মোদী বলেন, ‘নাই নাই ভয় হবে হবে জয়। আপনারাই পদ্মফুল ফোটাবেন।’