দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ মহাকাশেও দীপাবলির উৎসব। কলকাতার আকাশে লিওনিড উল্কাবৃষ্টি দেখা যেতে পারে। আগামীকাল বিকেলের পর থেকেই আকাশে চোখ রাখলে আলোর ফুলকি ছুটতে দেখা যাবে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, লিওনিড উল্কাবৃষ্টি কম সময় থাকবে, কিন্তু আলোয় ভরিয়ে দেবে আকাশ। এক একটি উল্কাখণ্ডের গতি সেকেন্ডে ৭১ কিলোমিটার। প্রতি ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫টি উল্কার খণ্ড পৃথিবীর আকাশে আগুনে চেহারা নিয়ে ঝরে পড়বে।
আজ রাতের আকাশ সাজবে আলোর মালায়। আলোর ফুলফুরি ঝরে পড়বে ভারতের আকাশ থেকে। ফুলকি ছড়াতে ছড়াতে আকাশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছুটে বেড়াবে লিওনিড। পারসেড ফিরে গেছে। আলোর ঝর্না নিয়ে ফের হাজির হয়েছে ‘লিওনিড মেটিওর সাওয়ার’।
ধূমকেতু থেকে খসে পড়েছে লিওনিড উল্কা হল মহাকাশে ভেসে বেড়ানো নানারকম পাথরখণ্ড যারা পৃথিবীর অভিকর্ষজ বলের টানে ছুটে আসে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ধাক্কাধাক্কি হলে বায়ুর কণার সঙ্গে ওইসব মহাজাগতিক পাথর খণ্ডের ঘষা লেগে আগুন জ্বলে ওঠে। তাই মনে হয় আলোর ফুলকি ছড়াচ্ছে। একেই বলে উল্কাবৃষ্টি।
এইসব মহাজাগতিক পাথর খণ্ডেরা এমনি ভেসে বেড়ায় না, হয় কোনও গ্রহ বা নক্ষত্র থেকে খসে পড়ে, না হলে ধূমকেতুর অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে মহাকাশে ভাসতে থাকে। এরাই পরবর্তীকালে উল্কা হয়ে পৃথিবীর আকাশে আলো ছড়ায়। ধূমকেতুর শরীর তৈরি হয় মাথা (নিউক্লিয়াস) ও লেজ (টেইল) দিয়ে। এই মাথা বা লেজের অংশ যদি খসে পড়ে, তাহলে তার ছিন্ন অংশ মহাজাগতিক বস্তু হয়ে ঘুরে বেড়ায় মহাকাশে। লিওনিডের জন্মও হয়েছে একইভাবে। সে আবার ‘টেম্পল-টাটল’ নামক ধূমকেতুর অংশ। এই ধূমকেতু সুদূর কুইপার বেল্টের বাসিন্দা। প্রতি ৩৩ বছরে একবার করে সূর্যের চারদিকে পাক খেয়ে যায় এই ধূমকেতু। আর সূর্যকে প্রদক্ষিণের সময়েই প্রচণ্ড উত্তাপে ধূমকেতুর মাথার খানিকটা অংশ ছিটকে বেরিয়ে আসে তার শরীর থেকে। এই ছিন্নভিন্ন অংশগুলোই পরে উল্কা হয়ে পৃথিবীর টানে ছুটে যায়।
মহাকাশবিজ্ঞানীরা বলেন, মহাশূন্যে এক শীতলতম জায়গা আছে। এর দূরত্ব পৃথিবী থেকে প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি কিলোমিটার। সৌরমণ্ডলের বাইরে বলয়ের মতো সেই জায়গা প্রায়ে সাড়ে ৩০০ কোটি কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। একেই বলে কুইপার বেল্ট। এখানে ধুলো আর গ্যাসের ঘনত্ব খুব কম। পাথর আর বরফের টুকরোয় ভরা। বলা হয় প্লুটো আসলে এই কুইপার বেল্টের মধ্যেই রয়েছে। নিওওয়াইস ধূমকেতুও ছুটে এসেছিল ব্রহ্মাণ্ডের সেই গহীন এলাকা কুইপার বেল্ট বা ওরট ক্লাউড থেকে।
সেই ৬ নভেম্বর থেকেই দেখা যাচ্ছে লিওনিডকে। দীপাবলির সময় পৃথিবীর আরও কাছাকাছি উড়ে এসেছে সে। এবার পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে ঘেঁষাঘেঁষি করে উল্কাবৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়বে। এমপি বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়ামের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, ঔজ্জ্বল্য ও দৃশ্যমানতার নিরিখে লিওনিড উল্কাবৃষ্টির তুলনা হয় না। এর আগে পারসেডও মন ভরিয়ে দিয়ে গিয়েছে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের। নভেম্বরে লিওনিড ও ডিলেম্বরে জেমিনিড উল্কাবৃষ্টিরও সাক্ষ্মী হবে ভারতের আকাশ। সাধারণত উল্কাখণ্ডের পিছনে নক্ষত্রপুঞ্জ বা গ্যালাক্সি থাকে তার নাম অনুসারেই উল্কাবৃষ্টির নাম দেওয়া হয়। যেমন পারসেড উল্কাবৃষ্টির সময় তার পিছনে ছিল পারসিয়াস নক্ষত্রপুঞ্জ। লিওনিড ও জেমিনিডের সময় তাদের পিছনে থাকে যথাক্রমে লিও ও জেমিনি নক্ষপুঞ্জ। ডিসেম্বরের ৪-২০ তারিখে পৃথিবীর আশপাশে ঘুরঘুর করতে দেখা যাবে জেমিনিডকে। উল্কাবৃষ্টি দেখা যাবে ১৩-১৪ ডিসেম্বর। ওই মাসেই আরও এক অতিথির আগমন হচ্ছে পৃথিবীর আকাশে। এর নাম উরসিড। ১৭ তারিখের মধ্যেই পৃথিবীর টানে ছুটে আসবে। আলোর ঝর্না হয়ে ঝরে পড়বে ২১-২২ ডিসেম্বর।