সৌম্যদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দননগর: এবারে আর সাম্প্রতিক ঘটনা বা হিন্দি হিট সিনেমা নয়। মণ্ডপে মণ্ডপে আলোকসজ্জায় ফুটে উঠবে করোনা যুদ্ধের বিভিন্ন ছবি। শুধু তাই নয়, এই মারণ রোগের সঙ্গে লড়াই করে সুস্থ থাকার নানা স্বাস্থ্যবিধি। করোনা অতিমারী নিয়ে তাঁদের শিল্পে মন্দা তো ছিলই। সংক্রমণের আতঙ্কে পুজো নিয়ে শুরু থেকেই ছিল অনিশ্চয়তা। তাই প্রত্যেক বছর পুজোর আগে যা বায়না হয় এই বছর তার অর্ধেকও হয়নি। গত সাত মাস প্রায় ঘরে বসেই কাটাতে হয়েছে চন্দননগরের আলোক শিল্পীদের।
পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছিল, যে রুজি রুটি টিকিয়ে রাখতে অনেকেই সবজি, মাছ, মাংস, মুদিখানা–দ্রব্য বিক্রি করে সংসার চালাতে বাধ্য হয়েছিলেন। ফের সুযোগ মিলতেই সেই শিল্পীসত্ত্বা আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। কলকাতার বেশ কয়েকটি নামী পুজোর অর্ডার এসেছে চন্দননগরে। তাই এখন নাওয়া–খাওয়ার জো নেই। আবার সেই আগের মতোই। অর্ডার আসায় শেষ মুহূর্তে কাজের ব্যস্ততা চরমে চন্দননগরের আলোক শিল্পীদের কারখানায়। প্রত্যেক বছর সাম্প্রতিক ঘটনার ওপর থিম করে আলো হয় চন্দননগরে৷
২০২০ সালের শুরুটা ভাল হলেও, করোনা পর্ব শুরু হতেই সব কিছু ওলট–পালট হয়ে যায়। বলিউডে একাধিক অভিনেতার মৃত্যু হয় তবে সবকিছুর ওপরে সেই করোনা। আর তাই করোনার সঙ্গে লড়াইকে থিম হিসাবে তুলে ধরেছেন চন্দননগরের আলোক শিল্পীরা। করোনা যোদ্ধাদের কুর্নিশ জানাতে আলোকসজ্জা চন্দননগরের আলোক শিল্পীদের। আলোক শিল্পে চন্দননগরের নাম জগৎজোড়া। দুর্গা পুজোয় এখানকার আলোকসজ্জা পাড়ি দেয় দেশের বিভিন্ন রাজ্যে।
করোনা–আবহে এবছর পুজোয় ভিন রাজ্য থেকে আলোকসজ্জার কোনও বরাত আসেনি। কলকাতার অনেক পুজো কমিটি আড়ম্বর কমাতে আলোর বাজেটে কাটছাঁট করেছে ঠিকই। তবুও এত টানাটানির মধ্যেও কয়েকটি পুজোয় আলোকসজ্জা যাচ্ছে চন্দননগর থেকে। আর সেই আলোর থিমে উঠে এসেছে করোনা যোদ্ধাদের লড়াইয়ের কাহিনি।
আলোকসজ্জার মাধ্যমে মানুষের কাছে একটা বার্তা দিতে চান আলোকশিল্পীরা। যে সমস্ত মানুষ করোনার সঙ্গে লড়াই করছেন, অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাদের কুর্নিশ জানানোর এটাই সঠিক সময়। ডাক্তার, নার্স, পুলিশ, দমকল কর্মী থেকে শুরু করে সংবাদ মাধ্যম যারা করোনাকালে নিজেদের উৎসর্গ করেছেন মানুষের সেবায়। যোদ্ধাদের কুর্নিশ জানানোর পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করার বার্তাও রয়েছে এই বছরের আলোকসজ্জায়।