হেমন্ত নষ্কর,দক্ষিণ২৪ পরগনা: লকডাউনে দূষণ কমেছে সর্বত্র। সাগরে, নদীতে জাহাজ, ট্রলার না চলায় সেখানেও প্রকৃতি বাদলেছে৷ মৌসুমি হাওয়ার প্রভাবে ঝমাঝম নেমেছে বৃষ্টি। এমন মনোরম পরিবেশে ঝাঁক বেঁধে ছুটে আসে ইলিশ। আদর্শ এই পরিবেশে তাই এবার অতিরিক্ত ইলিশ ধরা পড়বে এমন আশা নিয়ে লক্ষাধিক মৎস্যজীবী সোমবার সাগরে অভিযানে গেলেন।
বিভিন্ন সময়ে নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে হয় মৎস্যজীবীদের। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনা মহামারি। সংক্রমণ, ঠেকাতে মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজারের ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব রেখে চলা আর যাত্রা শুরুর আগে ট্রলার স্যানিটাইজ করা। সাগরে দীর্ঘ অপেক্ষার পর ইলিশের ঝাঁক কোথায় বুঝে জাল ফেলবেন তাঁরা। ঘণ্টা ৫-৬ অপেক্ষার পর জালে পড়বে ইলিশ।
জলে খেলিয়ে তুলে ট্রলারে বরফের চাদরে মুড়ে ডায়মন্ড হারবারের সব থেকে বড় নিলাম কেন্দ্র নগেন্দ্র বাজার আড়তে আনা হয়। সেখান থেকে সাগরের রুপোলি ইলিশ স্থানীয় বাজার ঘুরে তা ছড়িয়ে যাবে কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন বাজার গুলিতে।
রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা জানিয়েছেন, মৎস্যজীবীরা যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজার ব্যবহার করেন তার জন্য জেলা পরিষদকে নজরদারি করতে বলা হয়েছে।
ওয়েস্টবেঙ্গল ইউনাইটেড ফিশারমেন অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম–সচিব বিজন মাইতি জানান, সোমবার সাগর, কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জ, কুলতলি, ডায়মন্ড হারবার থেকে সাড়ে ৩ হাজার ট্রলার গভীর সমুদ্রে ‘ইলিশ অভিযান’–এ রওনা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১ লক্ষ মৎস্যজীবী। তিনি আরও জানান , গত বছর ১২–১৩ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ উঠেছিল।
এবার সমুদ্রে দূষণ কম। আশা করছি এ মরশুমে ২৪–২৫ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ উঠবে। সাগরে যাওয়া থেকে ইলিশ ধরে আসা— সব মিলিয়ে কম পক্ষে ৫ থেকে ৬ দিনের ধাক্কা। মৎস্যজীবীরা পর্যাপ্ত পানীয় জল, খাবার, বরফ, ভাল জাল, অয়্যারলেস সেট নিয়ে গেছেন। দিন দশেকের মধ্যে বাজারে ইলিশ পাওয়া যাবে। বিজন বাবু বলেন, সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী ২৩ সেন্টিমিটার এমন দৈর্ঘ্যের খোকা ইলিশ ধরা যাবে না।
এবার ইলিশের দাম কেমন হতে পারে? বিজনবাবুর কথায়, ‘গত বছর পাইকারি দর ছিল সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি। আকারের ওপর নির্ভর করে দামও কমে, বাড়ে। এবার পুবালি হাওয়ায় বেশি ধরা পড়লে আমবাঙালির পাতে কম দামে ইলিশ দেওয়া যাবে।’সুন্দরবনে ৫ লক্ষাধিক মৎস্যজীবী রয়েছেন।নিলামের সময় সকলকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।