পার্থ সারথি নন্দী,বনগাঁ:পেট্রাপোল বন্দর এলাকা দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াতের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে গত শুক্রবার রাত থেকে। চলবে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। তার জেরেই বন্দর এলাকার অর্থনীতি কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। পেট্রাপোল স্থল বন্দরের উপরে জীবিকার জন্য নির্ভরশীল কয়েক হাজার মানুষ।যাতায়াতের উপরে নিষেধাজ্ঞার জেরে রোজগারে টান পড়েছে তাঁদের।
পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এন্ড স্টাফ ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী জানান,বনগাঁ মহকুমায় শিল্প-কারখানা বলতে তেমন কিছুই নেই,এই স্থল বন্দরের উপরেই নির্ভর করে এলাকায় গড়ে উঠেছে হোটেল, পরিবহণ ,মুদ্রা বিনিময় ব্যবসা।
নিষেধাজ্ঞার জেরে সে সব ব্যাবসা প্রায় বন্ধ হতে বসেছে যাত্রী আসা যাওয়া কমে যাওয়ায়৷ ফলে করোনার আতঙ্কের জেরে স্থল বন্দর এলাকার অর্থনীতি কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে।
স্থানীয় এক ব্যাবসায়ী প্রদীপ দে জানান গত ১৩মার্চ থেকেই বিশেষ ভাবে প্রভাব পরেছে এই সীমান্তে,ওপার বাংলা থেকে কোন ব্যাবসায়ী আসছেন না,ফোন বা ইন্টারনেট ব্যাবস্থাই এক মাত্র যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে৷টেলি ফোনে সে দেশের ব্যাবসায়ীরা জানাচ্ছেন সীমান্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরাও আর্থিক ভাবে ক্ষতির মূখে পড়েছেন৷
বাংলাদেশ কুষ্টিয়া চেম্বার অফ কমার্সের পরিচালক সইফুল আলম টেলিফোনে দেশের সময় কে জানান, আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এর জন্মশতবর্ষে তাঁকে বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপণ করছে গোটা বাংলাদেশের মানুষ। সকলের মনে একটা ভয় তাড়াকরে বেড়াচ্ছে করোনা ৷ আতঙ্ক এতটাই যে বাংলাদেশ সরকার সীমান্ত সীল করে দিয়েছে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষার স্বার্থে৷ পাশাপাশি এর প্রভাবও ব্যাবসা বানিজ্যতে, চরমে পৌঁছবে বলে আমার মত। এখনই ক্ষতির মুখ দেখতে শুরু করেছে ভারত-বাংলাদেশের পণ্য আমদানি-রফতানি কারকেরা।এভাবে বেনাপোল-পেট্রাপোল সহ দু’দেশের অন্যান্য বন্দরগুলিও যদি কর্মী অভাবে বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে আগামী দিনে উভয় দেশের অর্থনৈতিক মান চিত্রটাই বদলে যাবে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই৷
অভিবাসন দফতরের আধিকারিক জয়ন্ত বিশ্বাস জানিয়েছেন, এখন কেবলমাত্র ভারতে থাকা বাংলাদেশিরা দেশে ফিরতে পারছেন। বাংলাদেশ থেকে নতুন করে কাউকে এ দেশে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। একই ভাবে যে সব ভারতীয় বাংলাদেশে রয়েছেন, একমাত্র তাঁদেরই দেশে ফিরতে দেওয়া হচ্ছে। নতুন করে কোনও ভারতীয়কে বাংলাদেশে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।
স্থানীয় পরিবহণ সংস্থার কর্মী দীপক ঘোষ জানান পেট্রাপোল থেকে কলকাতা পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য বন্দরে রয়েছে বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার বাস পরিষেবা। সেই ব্যবসাও ধুঁকছে । এখন কলকাতা থেকে সারা দিনে কয়েকজন বাংলাদেশি দেশে ফিরবেন বলে আসছেন। যাত্রীর অভাবে কোনও বাস পেট্রাপোল থেকে কলকাতা যাচ্ছে না। বন্দরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রায় সব বাস।
হতাশ হয়েছেন বাস মালিকেরাও। যাত্রীদের মালপত্র বহন করতে বন্দরে রয়েছেন বিভিন্ন সংগঠনের শতাধিক শ্রমিক (কুলি)। যাত্রীদের অভাবে তাঁররাও কাজ হারিয়েছেন। এমনই এক জন শ্রমিক বিজয় বিশ্বাস বলেন, ‘‘কী ভাবে সংসার চলবে জানি না কোন উপার্জন নেই এই মুহুর্তে।
বাস ছাড়া ছোট যাত্রী নিয়ে কলকাতা যাতায়াত করে যে সমস্ত গাড়ি ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে সারি বদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে দেখে মনে হতেপারে কোন বড় মোটর গ্যারেজ। বন্দর থেকে বনগাঁ স্টেশন পর্যন্ত রয়েছে অটো পরিষেবা। দীনেশ রায় নামে এক অটো চালক জানান, সারা দিনে যাত্রী নিয়ে ১৪ বার যাতায়াত করতাম। এখন যাচ্ছি কোন রকমে২ বার যাচ্ছি । তা-ও অটোতে স্থানীয় যাত্রী থাকছে বেশি।
বন্দর এলাকায় প্রায় ২৫০টি মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র রয়েছে। যাত্রীর অভাবে ব্যবসা কার্যত বন্ধ। মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রের এক মালিক আজগার আলী শেখের কথায় , ‘‘এ ভাবে কয়েক দিন চললে বেকার হয়ে যাবে বহু মানুষ। রুটিরুজি প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে।মুদ্রাবিনিময় কেন্দ্রগুলি খোলা থাকলেও অর্থ বিনিময় করার জন্য কোনও যাত্রী নেই। এক কথায় জন শূন্য সীমান্তএলাকা।
আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ছুটি থাকায় দু’দেশের মধ্যে পণ্য আমদানি কাজ বন্ধ আছে তবে-রফতানির কাজের জন্য শুল্ক বিভাগ খোলা রয়েছে পেট্রাপোল সীমান্তে।
এদিন সকালে সীমান্তে গিয়ে দেখা গেল, বন্দরে আসা লোকজনের মুখে বেশির ভাগ অংশেরই মুখে মাস্ক নেই৷কেন নেই জানতে চাইলে সাফ কথা তাঁর পেটে দানাপানির ব্যাবস্থা নেই, অত দামের মাস্ক জুটবে কি ভাবে৷
বোঝাই যাচ্ছে পেট্রাপোল বন্দরের সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা করোনা ভাইরাসের থেকেও রুজি -রুটি হারানোর ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন।