দেশের সময়, বনগাঁ: এনআরসি এবং ক্যা–র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আজ বনগাঁ ও রানাঘাটে জনসভা করতে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা থেকে হেলিকপ্টারে তিনি প্রথমে আসবেন উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁয়। বনগাঁ স্টেডিয়ামে এর জন্য বড় মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে।
বক্তব্য শেষে মমতা যাবেন নদিয়ার রানাঘাট বিধানসভার অন্তর্গত হবিবপুরে। সেখানেও তিনি একই ধরনের প্রতিবাদসভা করবেন। হবিবপুরে ছাতিমতলার মাঠে এই সভা হবে। সেখান থেকে তিনি যাবেন নদিয়ার কৃষ্ণনগরে। বুধবার কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজের মাঠে রয়েছে দলের কর্মিসভা। তাতে যোগ দেবেন তৃণমূল নেত্রী। ওইদিনই বিকেলেই কৃষ্ণনগর রবীন্দ্র ভবনে প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠক করবেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর জনসভা সফল করতে গত তিনদিন ধরে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের বিধানসভা এলাকায় বুথ স্তর থেকে পুরসভা পর্যন্ত পথসভা করছেন তৃণমূল নেতারা। সেখানে সাধারণ মানুষকে তাঁরা বলছেন, বিজেপি–র ভুল বার্তায় কান দেবেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকতে আপনাদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। আপনাদের ভরসা দিতে এবং আপনাদের এ ব্যাপারে কী করণীয়, সেই বার্তা দিতে এই জনসভার আয়োজন করা হয়েছে।
তৃণমূল নেতাদের আশা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য শুনতে মঙ্গলবার বনগাঁ স্টেডিয়াম উপচে পড়বে ভিড়। সভায় উপস্থিত হতে কোনও মানুষকে যাতে সমস্যায়
পড়তে না হয়, পুলিশকে সেই বিষয়টি নজর দেওয়ার জন্য দলের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। বনগাঁয় মুখ্যমন্ত্রীর জনসভার সভাস্থল ঘুরে দেখেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি হেলিপ্যাড এবং মঞ্চ প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেন। তিনি বলেন, ‘বাংলার মানুষ এনআরসি, ক্যা চাইছেন না। তাঁরা নতুন করে কোনও ফর্ম পূরণ করতে চান না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতক্ষণ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন, ততক্ষণ এই রাজ্যের মানুষ নিশ্চিন্তে থাকবেন। বিজেপি নেতারা বনগাঁ স্টেডিয়ামে এসে নেত্রীর জনসভা দেখে যাক, সেখানে কত মানুষ এনআরসি, ক্যা–এর বিরোধিতায় শামিল হন। মানুষের ভিড় দেখে চমকে যাবেন বিজেপি নেতারা।’
অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর সফর ঘিরে নদিয়া জেলায় আলোড়ন তৈরি হয়েছে। কৃষ্ণনগর ও চাকদা পুরসভার বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এ ছাড়া নবদ্বীপ, শান্তিপুর, তাহেরপুর, বীরনগর, রানাঘাট, কল্যাণী ও গয়েশপুর পুরসভার বোর্ডের মেয়াদও মে মাসে শেষ হবে। ফলে এই জেলার ৯টি পুরসভায় নির্বাচন আসন্ন বলেই মনে করা হচ্ছে। নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনও ঘোষণা না হলেও প্রশাসনিক তৎপরতা শুরু গেছে। সেই প্রেক্ষাপটে মুখ্যমন্ত্রীর এই সফর এবং জনসভা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
সোমবারএনআরসি, ক্যা এর সমর্থনে বনগাঁ শহরে বিশাল মিছিল করে বিজেপি। মিছিলের নেতৃত্ব দেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়। উপস্থিত ছিলেন শান্তনু ঠাকুর, সব্যসাচী দত্ত, বিশ্বজিৎ দাস, জেলা সহ-সভাপতি দেবদাস মন্ডল সহ জেলা ও স্থানীয় বিভিন্ন স্তরের নেতা, কর্মীরা। এদিন বনগাঁর হাসপাতাল কালিবাড়ী এলাকা থেকে শুরু হয় এই মিছিল। এরপর চাকদা রোড, রায় ব্রিজ, মতিগঞ্জ, রাখালদাস সেতু, যশোর রোড হয়ে স্টেশন রোডে মিছিল শেষ হয়। মিছিলে বিজেপির মহিলা কর্মী, সমর্থকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত।
মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষকে ডঙ্কা বাজাতে বাজাতে মিছিলে হাঁটতে দেখা যায়। ছিল রনপাও। গোটা মিছিলটার ছবি তুলে ধরতে ড্রোনের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছিল। বিজেপির দাবি, এনআরসি এবং ক্যা কে সমর্থন জানিয়ে হাজার হাজার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন।
আজ মঙ্গলবার বনগাঁয় এনআরসি বিরোধী জনসভা করবেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সভা ঘিরে প্রস্তুতিও চোখে পড়ার মতো । ব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখতে বনগাঁ স্টেডিয়ামে হাজির রয়েছেন তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-নেত্রীরা। পুলিশের বিভিন্ন আধিকারিকরাও ইতিমধ্যে উপস্থিত হয়েছেন বনগাঁতে।
সোমবার মিছিল শেষে মুকুল রায় সাংবাদিকদের বলেন, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বাংলা দখল করছেই বিজেপি। বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ১৭০ টি আসন পাবে। নাগরিকত্ব আইন সংশোধন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারতে যারা বসবাস করছেন তাদের কারোরই নাগরিকত্ব যাবে না। বরং যারা এখনো নাগরিকত্ব পাননি তারা নাগরিকত্ব পাবেন।
এই প্রসঙ্গে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, দিলীপ ঘোষের মতো মুকুল রায়ও বদ্ধ উন্মাদ হয়ে গেছেন। বিজেপি তিনটির বেশি আসন এই রাজ্য থেকে বিধানসভা নির্বাচনে পাবে না। মঙ্গলবারের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভায় বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত পাঁচটি বিধানসভা থেকে যে পরিমাণ মানুষ আসবেন তাতে বিজেপি নেতারা চমকে যাবেন। ওদের মতো নদীয়া থেকে আমাদের ভাড়া করে লোক আনতে হবে না।