প্রশান্ত কিশোর প্রথম থেকেই এনআরসি ও সিএএ এর বিরুদ্ধে।তিনি চেয়েছিলেন নিতীশ কেন্দ্রীয় সরকারের এই নীতির সর্বাত্মক বিরোধিতা করুন।কিন্তু বিহারে বিজেপির জোট সঙ্গি হিসেবে নিতীশের পক্ষে এ বিষয়ে প্রশান্ত কিশোরের সিদ্ধান্ত পুরোপুরি মানা সম্ভব হয় নি।বিরোধের শুরু সেখান থেকেই।প্রশান্ত কিশোর একজন পেশাদার ভোট কুশলী হিসেবে স্বীকৃত।
ভোট বাক্সে সাফল্য কী ভাবে আসবে সে বিষয়ে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে পরামর্শ দেন,কৌশল নির্ধারণ করে দেন।বিনিময়ে মোটা অংকের পারিশ্রমিকও নিয়ে থাকেন।সেই সূত্রেই এ দেশে এনআরসি ও সিএএ যে ভোট বাক্সে বিরোধীদের সাহায্য করবে সে বিষয়ে তিনি বিজেপি বিরোধী দলগুলোকে অবহিত করেছেন।সকলেরই হয়তো মনে থাকবে এ রাজ্যে তিনিই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে এনআরসি বিরোধী প্রচার তুঙ্গে তুলতে পরামর্শ দিয়েছিলেন রাজ্যে তিনটি বিধানসভা উপনির্বাচনের আগে।
এ বিষয়ে আমরা এই সময়ের বিশেষ প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করে বলেছিলাম ভোট প্রচারে প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শ মেনে তৃণমূল এনআরসি বিরোধিতাকেই তরুপের তাস করতে যাচ্ছে।উপনির্বাচনে তিনটি কেন্দ্রেই তৃণমূলের তুমুল জয় প্রমাণ করে দেয় প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শ সঠিক ছিল।এর পর গোটা দেশে এনআরসি ও সিএএ বিরোধী আক্রোশ যে ভাবে প্রতিফলিত হতে থাকে তাতে ভোট কুশলী হিসেবে প্রশান্ত কিশোর আর নিশ্চিত হয়ে যান যে এই বিষয়টা বিজেপিকে রীতিমতো বেগ দেবে।
সূত্রের খবর এ বিষয়ে তার মত নিতীশ কুমারের সঙ্গে মেলে না।নিতীশ কুমার দীর্ঘ দিনের পোড় খাওয়া রাজনীতিক।তাঁর মতে এ বিষয়ে চূড়ান্ত নিদান দেওয়ার সময় হয় নি।এই কারণে নিতীশ কুমার সংসদে সিএবিকে সমর্থন করেন।সিএবি সিএএ হয়ে যাবার পর,প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে নিতীশ কুমারের দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে।কেউ কেউ মনে করছেন দ্বন্দ্বটা ইচ্ছে করেই চরমে নিয়ে যান প্রশান্ত কিশোর কারণ পেশাদার ভোট কুশলী হিসেবে তিনি যে মত দিচ্ছেন নিজের দলে তা মান্যতা না পেলে তার পেশাদারি দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।তাই নিতীশ কুমারের সঙ্গে সম্পর্কটা তিনি নিজেই ছেঁটে ফেলতে চেয়েছিলেন বলে কারোর কারোর ধারনা।
এই জন্যই প্রকাশ্যে তিনি নিতীশ কুমারের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখতে শুরু করেন।সেই সূত্রে নিতীশের পক্ষে তাকে দলে রাখা আর সম্ভব ছিল না।এখন প্রশ্ন হোল প্রশান্ত কিশোর কী এবার শুধুই একজন ভোট কুশলী হিসেবে কাজ করবেন না কি তিনি কোন নতুন রাজনৈতিক দলে যোগ দেবেন?আ এই সূত্রেই তাঁর তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জল্পনা শুরু হয়ে গেছে।
এমতবস্থায় অনেকেই মনে করছেন প্রশান্ত সরাসরি দলে যোগ দিলে দলের কাজে আর বেশী করে মন দিতে পারবেন।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ বিষয়ে এক প্রস্ত কথা প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে সেরে রেখেছেন বলেও শোনা যাচ্ছে।তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হোল প্রশান্ত কিশোর তৃণমূলে যোগ দিলে কোন পদে যোগ দেবেন,তিনি তো আর যে কোন পদে যোগ দেবেন না।আর একটা বিষয় ভেবে দেখার তা হোল প্রশান্ত কিশোর মোটা টাকার বিনিময়ে পেশাদারি যে কাজ করেন দলের সদস্য হলে পেশা ও দলীয় কর্মী হিসেবে একই দক্ষতায় কাজ করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থাকছেই।তবে শোনা যাচ্ছে গোটা বিষয়টা নিয়ে ইতিমধ্যেই মমতা ও প্রশান্ত কিশোরের কথা হয়েছে।হয়তো প্রশান্ত কিশোর এখনই সরাসরি তৃণমূলে যোগ দেবেন না তবে তিনি যে আর বেশী করে এ রাজ্যে সময় দেবেন তা নিশ্চিত,এবং সেই বেশী সময় দিতে দিতেই হয়তো তার সঙ্গে তৃণমূলের সখ্য গভীর হবে,তৃণমূল যে প্রশান্ত কিশোরকে এখন আর বেশী গুরুত্ব দেবে তাও নিশ্চিত বলে তৃণমূলের ভেতরের খবর।
পেশাদার প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে তৃণমূলের দলীয় সম্পর্ক তৈরি হয় কি না সেটাই এখন দেখার অপেক্ষায় রাজ্যবাসী।