দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি থানার সাহেবনগরে সিএএ বিরোধী বিক্ষোভে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত এক নাবালক-সহ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন তিন জন। বিক্ষুব্ধ জনতা একটি মারুতি ভ্যানে ভাঙচুর করেছে, একটি মোটরবাইকে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এলাকায় পুলিশ টহল দিচ্ছে।
ঘটনার সূত্রপাত বুধবার সকালে একটি বনধ ঘিরে। মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের ডাকা সিএএ-এনআরসি বিরোধী বনধ পালন করছিল ভারতের গণতান্ত্রিক নাগরিক মঞ্চ। সিএএ, এনআরসি এবং এনপিআরের বিরুদ্ধে গত ২০ ডিসেম্বর এই মঞ্চটি তৈরি হয়। সাহেবনগর বাজারের কাছে এই মঞ্চের জনা ষাটেক লোক মিছিল করে আসছিলেন। তখনই কয়েকটি মারুতি ভ্যান থেকে এলোপাথাড়ি গুলি চালানো শুরু হয়। অভিযোগ, তৃণমূলের স্থানীয় নেতা তহিরুদ্দিন মণ্ডলের নেতৃত্বেই এই ঘটনা ঘটেছে।
তৃণমূলের অভিযোগ, তারা গাড়ি নিয়ে যেতে চাইলে রাস্তা ছাড়েনি ওই মিছিল। আগে মিছিল থেকে তাদের উপরে আক্রমণ করা হয়। উত্তরে জব্বার বলেন, “প্রথমত আমাদের হামলার অভিযোগ মিথ্যা, দ্বিতীয়ত বেশ কয়েকটি মারুতি গাড়িতে পিস্তল-বোমা-সকেটবোমা নিয়ে ওরা ঘুরছিল কেন!”
এলোপাথাড়ি গুলিতে মৃত্যু হয়েছে আনারুল বিশ্বাস (৬৫) ও সালাউদ্দিন শেখের (১৭)। আনারুল স্থানীয় মসজিদের ইমাম। তাঁর ছেলে শাহরুল বিশ্বাস বলেন, “এলাকায় এনআরসি-বিরোধী বনধ পালন করা হচ্ছিল। সেজন্য সকাল থেকে বিভিন্ন মোড়ে দু’-দশ জন করে লোক ছিল। মসজিদের কাছে একটি মোড় থাকায় এখানে জনা পঞ্চাশ লোকের জমায়েত হয়েছিল। নমাজ শেষ হওয়ার পরে মসজিদ পরিষ্কার করে আমার বাবা তালা লাগাচ্ছিলেন দরজায়।
তখন তহিরুদ্দিন ও তার দলবল পাঁচ-ছ’টি মারুতিতে করে এসে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে, মনে হচ্ছিল সন্ত্রাসবাদী হামলা হচ্ছে। তার পঞ্চাশ মিটার দূরে পুলিশের গাড়ি ছিল, তাতে অন্তত ১৮-২০ জন পুলিশকর্মী ছিলেন। তাঁরা কিছু বলেননি। ঘটনার পরে পুলিশ পালিয়ে যায়।” ঘটনার পর থেকেই তহিরুদ্দিনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এব্যাপারে জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মুর্শিদাবাদের সাংসদ আবু তাহের খান বলেন, “এই ঘটনায় তৃণমূলের কেউ যুক্ত নয়। পুলিশ তদন্ত করছে।”
আনারুল বিশ্বাসের বুকে একটি গুলি লেগে তা পিঠ দিয়ে বেরিয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। প্রথমে বাইকে ও পরে অ্যাম্বুল্যান্সে করে গুলিবিদ্ধদের নিয়ে যাওয়া হয় নিকটবর্তী মুর্শিদাবাদ জেলা হাসপাতালে। সেখানে আনারুল বিশ্বাস ও সালাউদ্দিন শেখকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। আহত হয়েছেন বাহান্ন বছরের আব্দুল জব্বার, বছর বত্রিশের মিজানুর রহমান ও মকবুল শেখ। জব্বারের মাথার পিছনে লাঠি দিয়ে মারা হয়েছে বলে অভিযোগ। জব্বার জানিয়েছেন তিনি নিজে কংগ্রেস সমর্থক।
স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, তৃণমূল কংগ্রেস কোনও ভাবে জানতে পারে বুধবার জলঙ্গিতে যে মিছিল ও বনধ পালন করা হবে তার নেপথ্যে রয়েছে আসাদুদ্দিন ওয়াইসির দল মজলিস-ই-মুত্তেহাদিন মুসলিমিন বা মিম। এতে সায় ছিল না তৃণমূলের। তারা চাইছিল এরাজ্যে সিএএ বিরোধী আন্দোলন ও বিক্ষোভ হবে শুধুমাত্র তাদের নেতৃত্বে। তৃণমূলের নিষেধ না শুনে বুধবার সকালে সাহেবনগরে সিএএ বিরোধী বিক্ষোভ ও মিছিল শুরু হয়, পথ অবরোধ করা হয়। তাতেই তারা খেপে যায়।
গুলিতে আহত মিজানুর রহমানের বোন হীরা খাতুন বলেন, “আমরা কোনও পার্টি করি না। ওরা আমার ভাইকে কেন গুলি করল? এখানে সিএএ বিরোধী আন্দোলন চলছিল, তৃণমূল চাইছে এনআরসি হোক, তাই ওরা গুলি চালিয়েছে।” হীরার সুরে সুর মিলিয়েছেন এলাকার লোকজনও। তাঁরাও প্রশ্ন তুলেছেন সিএএ বিরোধী আন্দোলনে তৃণমূল কেন গুলি চালাল তা নিয়ে।
গুলি চলার কিছুক্ষণ পরে এলাকায় পৌঁছায় বিশাল পুলিশবাহিনী। খবর পেয়ে চলে আসেন জেলা পুলিশ সুপার অজিত সিং যাদব। এলাকায় শুরু হয় রুট মার্চ। পুরো এলাকা এখন থমথমে। এই ঘটনায় পুলিশ মুখ খুলছে না। তারা শুধু বলেছে, ‘তদন্ত চলছে’।