দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ প্রশান্ত কিশোরকে দল থেকে বহিষ্কার করল জেডিইউ।
টুইট করে সঙ্গে সঙ্গে যার জবাবও দিয়েছেন প্রশান্ত। নীতীশকে উদ্দেশ করে তিনি বলেছেন, “আপনি যাতে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর পদ ধরে রাখতে পারেন সে জন্য আমার শুভেচ্ছা রইল। ভগবান আপনার মঙ্গল করুন”।
Thank you @NitishKumar. My best wishes to you to retain the chair of Chief Minister of Bihar. God bless you.🙏🏼
— Prashant Kishor (@PrashantKishor) January 29, 2020
আপাত দর্শনে দু’জনের মধ্যে বনিবনার অভাব হচ্ছিল গত কয়েক মাস ধরেই। বিশেষ করে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন নিয়ে সংযুক্ত দলের সভাপতি তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সঙ্গে প্রকাশ্যেই মতান্তর হচ্ছিল দলের সহ সভাপতি প্রশান্ত কিশোরের। তা বাড়তে বাড়তে গতকাল চরমে পৌঁছয়। নীতীশ কুমার ফাঁস করে দেন যে, বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি অমিত শাহর কথাতেই প্রশান্ত কিশোরকে দলে নিয়েছিলেন তিনি। এমনকি নীতীশ এও দাবি করেন, প্রশান্তের জন্য তাঁকে চিঠি লিখেছিলেন অমিত শাহ। সেখানেই থেমে না থেকে নীতীশ আরও বলেছিলেন, প্রশান্ত যদি জেডিইউ-তে থাকতে চায় তো ভাল, যদি না থাকতে চায় তো আরও ভাল।
এরপরই নীতীশকে মিথ্যাবাদী বলে তীব্র সমালোচনা করেন প্রশান্ত। তার পর যা হওয়ার তাই হয়েছে। বুধবার বিকেলে সংযুক্ত জনতা দলের তরফে ঘোষণা করে দেওয়া হয় যে, প্রশান্ত কিশোরকে জেডিইউ থেকে বহিষ্কার করা হল।
সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধন বিল পাশ হওয়া ইস্তক প্রশান্ত তার বিরোধিতা করছেন। এ ব্যাপারে ধারাবাহিক ভাবে সমালোচনা করছেন মোদী সরকারের। তাঁর দাবি ছিল, নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাক সংযুক্ত জনতা দলও। দলের সহ সভাপতি হিসাবে সেই দাবি তোলার তাঁর অধিকারও ছিল। কিন্তু বিহারে বিজেপির সঙ্গে জোট সরকারে থেকে যা নীতীশ কুমারের পক্ষে সম্ভব নয়। ফাটল শুরু হয় সেখান থেকেই। তারপর প্রশান্ত নীতীশকে মিথ্যাবাদী বলায় মঙ্গলবার রাত থেকে জেডিইউ-র মধ্যে প্রশান্ত বিরোধী বিদ্রোহ শুরু হয়ে যায়। অজয় অলোকের মতো জেডিইউ নেতারা প্রকাশ্যে বলতে শুরু করেন, প্রশান্ত কিশোর হল করোনা ভাইরাসের মতো। ওর কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। নইলে জেডিইউ-র সহ সভাপতি হয়েও একটা লোক কীভাবে কখনও তৃণমূল, কখনও ডিএমকে, কখনও বা আম আদমি পার্টির জন্য ভাড়া খাটে!
তবে পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, গোটা ঘটনার নেপথ্যে অনেক খেলা, অনেক অঙ্ক রয়েছে। দিল্লি ভোটে আম আদমি পার্টির জন্য কৌশল নির্ধারণের বরাত নিয়েছেন প্রশান্ত। দিল্লির নির্বাচনে বিহারীদের ভোট একটা বড় ফ্যাক্টর। প্রায় পঁচিশ লক্ষ বিহারী রয়েছেন দিল্লিতে। প্রশান্ত হয়তো চেয়েছিলেন, নীতীশ কুমার নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের প্রতিবাদ করুন। তা হলে তা দিল্লিতে বিহারী ভোটারদেরও প্রভাবিত করবে। কিন্তু প্রশান্তের ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য দলের স্বার্থ ছাড়তে চাননি সংযুক্ত জনতা দলের নেতারা। তা ছাড়া বড় কথা হল, বিহারে নীতীশের সরকার বিজেপির সমর্থনের উপর নির্ভরশীল। নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের বিরোধিতা করলে সরকার পড়ে যেতে পারে। জেডিইউ নেতারা প্রশ্ন তোলেন, প্রশান্তের জন্য কেন তা করতে যাব আমরা? তাঁদের পাল্টা এও প্রশ্ন, এর আগে নীতীশ কুমার যখন লালু প্রসাদের হাত ছেড়ে বিজেপির হাত ধরেছিল, তখন তো পরামর্শদাতা ও মধ্যস্ততাকারীদের অন্যতম ছিলেন প্রশান্তই। ফলে বিজেপি নিয়ে তাঁর যদি ছুঁৎমার্গ থাকে তা হলে তো আগেই ওর দল ছাড়ার কথা ছিল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকের কথায়, প্রশান্তের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খা হয়তো অসীম। আবার নীতীশ কুমারেরও রাজনীতিতে বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব রয়েছে। এই সব খেলা পুরোটাই সিরিয়াস নাকি লোক দেখানো তাও গ্যারান্টি দিয়ে বলা যাবে না।