দেশের সময়:-যে কেউ জানেন এ রাজ্যের অবাঙালি ভোট মূলত বিজেপির বাক্সেই পড়ে।হিন্দিভাষি মানুষজনদের মধ্যে বিজেপির একটা স্বাভাবিক গ্রহন যোগ্যতা আছে।সেই কারণেই আসানসোল,খড়গপুর,ঝাড়খন্ড লাগোয়া অঞ্চল থেকে শুরু করে কলকাতার বড়বাজার এলাকাকে বিজেপির শক্ত ঘাঁটি বলে ধরা হয়।তবে এবার সেই শক্ত ঘাঁটিতে ভাগ বসাতে মমতা বন্দ্যপাধ্যায় এক কৌশলি চাল দিয়ে রেখেছেন,যে চালের অস্বস্তি কাটাতে পারছে না বিজেপির রাজ্য নেতারা।মুখে যে যাই বলুন না কেন,রাজনীতিতে যে শেষ বিচারে কৌশলি হওয়ার দরকার আছে তা অস্বীকার করতে পারবেন না কেউই।আর সেই কারণেই মমতার কৌশলি চালে বেকায়দায় পড়া বিজেপির রাজ্য নেতারা এখন ঘুরিয়ে নৈতিকতার প্রসঙ্গ তুলতে চাইছেন,বলছেন অযৌক্তিক সুবিধা পাইয়ে দিয়ে ভোট বাড়াতে চাওয়া অনৈতিক।যুক্তি-তর্ক যাই হোক মমতার চাল যে ফল দিতে পারে তা একান্তে মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন বিজেপির নেতারাও।এবার রাজ্য সরকারি কর্মীদের চিরাচরিত ছুটির নিয়ম বদলে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন ছট পুজোতে একদিনের বদলে দুদিন ছুটি ঘোষণা করে দিয়েছিল।আপাতভাবে বিষয়টিকে খুব সাদামাটা সিদ্ধান্ত বলে মনে হলেও এর পেছনে রয়েছে গভীর রাজনৈতিক চাল।খুব গভীর ভাবে চিন্তা করেই মমতা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।তিনি জানতেন এটা নিয়ে বিরোধীরা আবার সরব হবে,প্রশ্ন উঠবে যে সরকার ধর্মঘট করা আটকাতে কোমড় বেধেঁ রাস্তায় নামে এই যুক্তি দিয়ে যে, ধর্মঘটের ফলে কর্ম দিবস নষ্ট হয়,সেই সরকারই কীভাবে একের পর এক পুজো পার্বণে সরকারি ছুটির মেয়াদ বাড়িয়েই যাতে থাকেন?যুক্তি ও নৈতিকতার মাপকাঠিতে বিচার করলে প্রশ্নটাকে একেবারে ফেলে দেওয়া যায় না,কিন্তু মমতা জানেন গড়পরতা মানুষজন যুক্তি ও নৈতিকতা দিয়ে রাজনীতির বিচার করে না,মানুষ বোঝে তার কী কী ফায়দা সরকার দিচ্ছে সেটাই।ছট পুজোকে গুরুত্ব দিয়ে দুদিন ছুটি দেওয়া,তারপর মুখ্যমন্ত্রী নিজে গঙ্গার ঘাটগুলোতে পরিদর্শনে গিয়ে বুঝিয়ে দিলেন তিনি অবাঙালিদের সঙ্গেও আছেন।তাদের উত্সব-আনন্দকে গুরুত্ব দিয়ে মমতা আসলে তাদের মন জয় করতে চেয়েছেন।চতুর রাজনীতিক মমতা জানেন এই সময়ে জিএসটি লাঘু হওয়ায় অনেক ছোট ছোট অবাঙালি ব্যবসায়ী বিজেপি সরকারের উপর রেগে আছেন,মমতা তাদের কাছে টানার প্রয়াস করলেন সুকৌশলে।বড় বাজারে গিয়ে এক অবাঙালি জমায়েতে তিনি জানতে চেয়েছেন ব্যবসা কেমন চলছে?ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকে জানিয়েছেন খুব খারাপ অবস্থা তাদের।মমতা এই অংশের আস্থা অর্জন করতে চেয়েছেন,দুদিন ছটপুজোর ছুটি ও পুজোয় অবাঙালি হিন্দিভাষি মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মমতা কিন্তু বিজেপির ভোট বাক্সে ধাক্কা দেওয়ার কাজটা সেরে রখলেন।সরকারি উদ্যোগে রাম নবমি পালন,দশেরা উত্সবের আয়োজন,হনুমান মন্দির তৈরির পরিকল্পনা সবই আসলে অবাঙালি ভোট ব্যাঙ্ক নিজের দিকে টানার লক্ষ্যেই মমতা করে গেছেন।ছট পুজোর দুদিনের ছুটি ঘোষণা আসলে সেই পরিকল্পনার বৃত্তকে সম্পূর্ন করল।বিজেপির নেতারা অনেক দেরিতে এটা ধরতে পেরে এখন বলছেন যে ঘুষ দিয়ে বিজেপির ভোট কেনা যাবে না,তারা মনে মনে ঠিক জানেন মমতার চালে তারা বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেছেন।অবাঙালি মানুষজনকে পাশে পেতে সরকার এমনকী কোর্টের রায়কেও মান্যতা দেয় নি,তাই কোর্ট সরকারকে তিরস্কার করতে পারে।তারপরেও মমতার সরকার সেটা করেছে খুব ভেবে চিন্তেই করেছে,কারণ মমতা জানেন কোর্ট তাদের বিরুদ্ধে বললেও তাঁর ফায়দা তিনি ভোটে পাবেন,অবাঙালি মানুষরা নিশ্চয়ই ভাববেন যে সরকার তাদের পুজোর আয়োজন করতে কোর্টের সঙ্গেও পাঙ্গা নিতে পারে সেই সরকার তাদের সরকার,তাকেই ভোট দেওয়া উচিত।এটা ভেবেই মমতার যাবতীয় চাল।কোর্ট ভোট দেয় না,ভোট দেয় মানুষ তাই কোর্টের চেয়ে মানুষকে কব্জা করাই মমতার মূল লক্ষ্য।এভাবে মানুষকে কব্জা করার মধ্যে সততা নৈতিকতা আদর্শ থাকে কিনা সে প্রশ্ন তুলে কোন লাভ নেই,কারণ সবাই জানেন সব যুদ্ধের মত ভোট যুদ্ধেও শেষ পর্যন্ত যে জেতে সেই সিকান্দার।আপাতাত মমতার চালে রাজ্যের শাসক দল সেদিকে অনেকটা এগিয়ে গেল তা বলাই বাহুল্য।