দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃ অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে আজ সন্ধেবেলাই তাঁকে উডল্যান্ডস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আট সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড তৈরি করে চিকিৎসা শুরু হয়। জানা গেছে, রক্তচাপ ওঠানামা করছিল বুদ্ধবাবুর, সেই সঙ্গে শ্বাসকষ্ট মারাত্মক ভাবে বেড়ে গিয়েছিল।
আইসিসিইউতে রেখে তাঁকে রক্ত দেওয়া হয়। রাত সাড়ে ৯টার পরে অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হয় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর। তবে তাঁর রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ অনেকটাই বেশি। সেটা কমাবার চেষ্টা চলছে।
বিকেল থেকে শ্বাসকষ্ট বাড়ছিল বুদ্ধবাবুর। সন্ধেবেলা সেটাই প্রবল হয়। সন্ধে ৭টা নাগাদ আলিমুদ্ধিনে খবর যায়। খবর পেয়েই তাঁর বাড়িতে ছোটেন চিকিৎসকরা। পারিবারিক ডাক্তার কৌশিক চক্রবর্তী উডল্যান্ডসে ভর্তি করার ব্যবস্থা করেন। ডঃ কৌশিক চক্রবর্তীর তত্ত্বাবধানে আট সদস্যের মেডিকাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রয়োজনে মেডিকাল বোর্ড আরও বাড়ানো হবে।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর চিকিৎসার দায়িত্বে রয়েছেন, ডঃ সোমনাথ মাইতি, ডঃ ফুয়াদ আলি, ডঃ রশি চক্রবর্তী, ডঃ এসবি রায়, ডঃ সৌতিক পান্ডা ও আরও তিন জন। আপাতত তাঁর রক্তচাপের মাত্রা ৬৫/৪০। শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণও খুব কম। প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসকরা মনে করছেন, তাঁর শ্বাসের সংক্রমণের কারণে রক্তচাপের এই হেরফের। প্রায় ১০ রকম রক্ত পরীক্ষা করা হচ্ছে তাঁর।
হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, বুদ্ধবাবুর রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা অনেকটাই কমে গেছে। আরও রক্ত দিতে হবে তাঁকে। তবে প্রথমে তাঁকে হাসপাতালে যে অবস্থায় আনা হয়েছিল, তার তুলনায় তিনি এখন অনেকটাই ভালো আছেন।
বুদ্ধবাবুর অসুস্থতার খবর পেয়ে রাতেই হাসপাতালে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, “ বুদ্ধবাবুর শারীরিক পরিস্থিতি আগের তুলনায় একটু ভাল। তাঁকে রক্ত দিতে হবে। উনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান, এটাই প্রার্থনা করছি।”
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ও। টুইট করে তিনি জানিয়েছেন, “উডল্যান্ডসের আইসিসিইউতে ভর্তি আছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাঁর শ্বাসের সমস্যা হয়েছিল। এখন তিনি কিছুটা ভালো, আমার সঙ্গে কথা বলতে পেরেছেন। ডাক্তারদের সঙ্গেও কথা বলেছি। যা যা করণীয় তাঁরা করছেন। ”
২০০৯ সাল থেকে বুদ্ধবাবুর সিওপিডি-র সমস্যা। যে কারণে তাঁকে প্লেনে চড়তে বারণ করেছিলেন চিকিৎসকরা। ২০১১ সালের পর শ্বাসকষ্ট এমন জায়গায় যায়, যে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের সিঁড়ি দিয়েও উঠতে পারতেন না উনি। ব্যবহার করতে হত লিফট। এমনও দিন গিয়েছে, বুদ্ধবাবুর কনভয় আলিমুদ্দিনে পৌঁছনোর পর দেখা যায় লিফট খারাপ, তখন পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে ফিরে চলে আসতে হয় তাঁকে।
গত আড়াই বছর ধরে গৃহবন্দী বুদ্ধবাবু। মাঝে শ্বাসকষ্টকে ছাপিয়ে গিয়েছিল চোখের সমস্যা। তখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছুটে গিয়েছিলেন বুদ্ধবাবুর বাড়িতে। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছিলেন, হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা করাতে। কিন্তু, রাজি হননি বুদ্ধবাবু। গত ৩ ফেব্রুয়ারি বামেদের ব্রিগেডে খানিকটা জেদ করেই এসেছিলেন। তবে গাড়ি থেকে নামেননি। ১৫ মিনিট থেকেই ফিরে যান।
কয়েকদিন আগেই অসুস্থ মুখ্যমন্ত্রীকে বাড়িতে দেখতে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। রাজ্যপালের সঙ্গে তাঁর যে ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল, তা দেখে প্রায় সকলেই বুঝতে পেরেছিলেন, শরীর একেবারেই ভালো নেই তাঁর। ইদানীং প্রায় সারাদিনই পোর্টেবল অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখতে হত তাঁকে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর চিকিৎসার জন্য পাঁচ ডাক্তারের মেডিক্যাল বোর্ড তৈরি হয়েছে।