দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ হাথরসকাণ্ডে বিজেপিশাসিত উত্তর প্রদেশের শাসনব্যবস্থা নিয়ে আবারও সরব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিলিগুড়ির ডাবগ্রাম ফুলবাড়িতে পথশ্রী প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বুধবারের পর বৃহস্পতিবার যোগী–রাজ্যের পুলিশের কাজকর্মের কড়া সমালোচনা করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর সখেদ প্রশ্ন, ‘উত্তর প্রদেশে শুধু নির্যাতিতাকে ধর্ষণই করা হয়নি, তাঁর দেহও পুড়িয়ে দেওয়া হল।
যদি কোনও অপরাধ হয়ে থাকে, পুলিশের উচিত তার তদন্ত করা। এটা কোন ধরনের শাসন? একজন নেতা বলেইছিলেন, মা আর মেয়ে দুজনকেই জ্বালিয়ে দাও।’
শুধু হাথরসের ঘটনাই নয়, কখনও দলিত, তো কখনও সংখ্যালঘু, অথবা কখনও আদিবাসীদের উপর অত্যাচার হয়েই চলেছে বলে অভিযোগ করেছেন মমতা। নাম না করে বিজেপির প্রতি তাঁর কটাক্ষ, ‘ভোট এলে বাইরে থেকে খাবার এনে দলিতের ঘরে বসে ওরা খাবার খায়।
- মঙ্গলবার তাঁর মৃত্যুর পর ‘চুপিসাড়ে’ দেহ সৎকার করে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
- হাসরথের তরুণীর বাড়িতে যেতে গিয়ে পুলিশের হাতে রীতিমতো নিগ্রহও হয়েছে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর।
- এবার বিজেপির ‘লোকদেখানো’ দলিত-প্রীতি নিয়ে আক্রমণ শানালেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আর এখন দলিতের উপর অত্যাচার করছে।’
এছাড়া উত্তরবঙ্গের সাতটি চা বাগান খোলা নিয়েও নাম না করে বিজেপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘ভোটের আগে রাজবংশীদের কত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, একটাও পূরণ করেনি। আবার ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি দেবে, আবার করবে না। উত্তরবঙ্গের জন্যও কত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সাতটি চা বাগান খুলে দেবে বলেছিল। খুলেছে? তিনবছর তো হয়ে গিয়েছে।
বলে এক আর করে এক। অথচ আমরা যা বলেছি তা করে দেখিয়েছি। মনে রাখবেন, কথার দাম মানুষের জীবনে সবচেয় বেশি।’ উত্তরবঙ্গ সফর শেষে বৃহস্পতিবার প্রশাসনিক বৈঠক সেরে কলকাতায় ফেরার আগেই ফুলবাড়িতে যান মুখ্যমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, গতকালই উত্তরবঙ্গের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী সুর চড়িয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘যাঁরা বাংলার আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে কথা বলেন, তাঁরা একটু উত্তরপ্রদেশের দিকে তাকান।’ সেইসঙ্গেই এ রাজ্যের বিজেপিকে আক্রমণ শানিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘কিছু গুন্ডা গোটা রাজ্যজুড়ে গুন্ডামি করে বেড়াচ্ছে। বিএসএফ দিয়ে বিভিন্ন প্রান্তিক জায়গায় ঢুকে মানুষকে চমকাচ্ছে। কিন্তু এটা বিএসএফ-এর কাজ নয়।’
নির্ভয়ার স্মৃতি উস্কে হাথরস গণধর্ষণকাণ্ড যোগী সরকারের মুখ পুড়িয়েছে। যোগীর পুলিশের বিরুদ্ধেই উঠেছে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করারও অভিযোগ। গোটা দেশজুড়ে হাথরস নিয়ে বিক্ষোভের মাঝেই বুধবার রাতেই উত্তরপ্রদেশের আজমগঢ় ও বুলন্দশহরে ধর্ষণের শিকার হয়েছে আরও দুই নাবালিকা। ঘটনা দেখে অনেকেই বলছেন, যোগী প্রশাসনের জন্য মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) অভিশপ্ত একটা দিন হয়ে থাকবে। কারণ, হাথরসের উনিশের তরুণী দিল্লির হাসপাতালে মারা গিয়েছেন মঙ্গলবার। বলরামপুরের বাইশের দলিতকন্যার মৃত্যুও মঙ্গলবার।
এনসিআরবি-র রিপোর্টেও দেখা যাচ্ছে, মহিলাদের সঙ্গে হওয়া অপরাধে দেশের শীর্ষে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ। ২০১৯-এ মহিলাদের উপর অপরাধের ক্ষেত্রে সেই রাজ্যে ৫৯ হাজার ৮৫৩টি মামলা রুজু হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কংগ্রেস শাসিত রাজস্থান, তৃতীয় স্থানে শিবসেনার শাসনাধীনে থাকা মহারাষ্ট্র। যদিও ২০১৯-এর অনেকটা সময় মহারাষ্ট্রে ক্ষমতায় ছিল বিজেপি সরকার। মহিলাদের উপর অ্যাসিড হানা, নারীদের অপহরণ ও শ্লীলতাহানির ঘটনা সব চেয়ে বেশি যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যেই। গত বছর শুধু উত্তরপ্রদেশেই ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৩০৬৫টি।
অন্যান্য গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রেও অন্তত সংখ্যার নিরিখে বাকি রাজ্যগুলোর তুলনায় উত্তরপ্রদেশ অনেক এগিয়ে। ২০১৯-এ সেখানে ৩৮০৬টি খুনের ঘটনা ঘটেছে, যা দেশের সর্বোচ্চ। স্বাভাবিক কারণেই ভোটের আগে বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশকেই নিশানা করছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তিনি ট্যুইটে লেখেন, হাথরসে এক দলিত তরুণীর সঙ্গে যে বর্বর ও লজ্জাজনক ঘটনা ঘটেছে, তার নিন্দার ভাষা নেই। ওই তরুণীর পরিবারের প্রতি সমবেদনা। আরও লজ্জাজনক হল, যেভাবে জোর করে, পরিবারের সম্মতি ছাড়াই ওই তরুণীর সত্কার করা হয়েছে, তা ভাবাই যায় না। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহকে বিঁধে তিনি বলেন, ‘যারা স্লোগান দেয় ও ভোটের জন্য প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দেয়, এই ঘটনা তাদের মুখোশ খুলে দিয়েছে।’