দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ মতুয়াদের অবহেলার অভিযোগ। তার জেরে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়েছেন শান্তনু ঠাকুর। পরিস্থিতি সামাল দিতে আসরে নামলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। বিজেপি সাংসদকে ফোন করেছেন তিনি। মতুয়াদের ‘অবহেলা’ নিয়ে কথা হয়েছে দু’ জনের।
মঙ্গলবার সন্ধেয় ঠাকুরবাড়িতে বৈঠক করবেন শান্তনু ঠাকুর। এটা ঘটনা, গত বছরের শেষের দিকে বিভিন্ন সাংগঠনিক জেলার নতুন সভাপতির নামের তালিকা প্রকাশ করে বিজেপি। সেই তালিকা প্রকাশের পর বিজেপির হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে নিজেদের সরিয়ে নেন বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার পাঁচ বিধায়ক। বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া, গাইঘাটার বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর, হরিণঘাটার বিধায়ক অসীম সরকার, রানাঘাট দক্ষিণের বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী ও কল্যাণীর বিধায়ক অম্বিকা রায়।
মতুয়াদের অভিযোগ ছিল, ভোটের সময় মতুয়াদের ব্যবহার করা হয়। দলের সাংগঠনিক পদে তাদের বসানো হয় না। অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের সাধারণ সম্পাদক সুখেন্দ্রনাথ গায়েন সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন, ‘এখন থেকে মতুয়ারা আর কোনও রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করবে না।’ এরপর বিজেপির অস্বস্তি বাড়িয়ে সোমবারই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছাড়েন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর।
শান্তনু ঠাকুরের পদক্ষেপে স্বাভাবিকভাবেই অস্বস্তিতে গেরুয়া শিবির। ক্ষোভ প্রশমনে আসরে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। ফোনে কথাও হয়েছে দু’জনের।
অন্যদিকে সুব্রত ঠাকুর বিজেপি-র হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছাড়ার পর সরাসরি সুব্রত ও শান্তনু ঠাকুরকে তৃণমূলে স্বাগত জানিয়েছিলেন মমতাবালা ঠাকুর।
বিজেপি-র হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছাড়ার বিষয়ে অবশ্য আর কোনও মন্তব্য করতে নারাজ তিনি।
এ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার মমতাবালার বক্তব্য ,, ‘আমি কিছু বলতে পারব না। এটা সম্পূর্ণ তাঁর এবং বিজেপি-র ব্যাপার।’ যদিও বিজেপি নেতাদের সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ ছাড়া এবং দলের বিরুদ্ধে মুখ খোলা প্রসঙ্গে মমতাবালা বলেন, ‘তাঁদের সৎ বুদ্ধি হোক। এর পরে বাজি ফাটাবে না বোমা ফাটাবে সেটা আমি বলতে পারব না।’
পাশাপাশি মতুয়া প্রসঙ্গে বিজেপি প্রসঙ্গে মমতাবালা বলেন, ঠাকুর বাড়িতে এসেছিলেন নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ কিন্তু, মতুয়াদের জন্য কিছুই করেননি। বিজেপি মতুয়াদের জন্য কিছুই করেননি। তবে গর্ব করে বলতে পারি, যা কিছু করার তা করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
একইসঙ্গে তিনি তৃণমূলের যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘যদি তৃণমূলের কেউ আসতে চান, তিনি আসতেই পারেন। আমাদের কোনও আপত্তি নেই। অনেকেই তৃণমূল ছেড়ে চলে গিয়েছেন আবার ফিরেও এসেছেন। তবে সিদ্ধান্ত নেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।’
সোমবারই রাজ্য বিজেপি-তে আর তাঁকে প্রয়োজন নেই, বলে দলের সমস্ত হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে যান শান্তনু ঠাকুর। ক্ষোভের সুরে দেশের সময় ডিজিটালকে তিনি বলেন, ‘আমাকে হয়ত আর ওঁদের প্রয়োজন নেই। তাই যেখানে আমার প্রয়োজনীয়তা নেই, সেখানে থেকে কী করব?’ জল্পনা উসকে তিনি বলেন, ‘আগামী দিনে কী পদক্ষেপ করব তা সাংবাদিকদের ডেকে জানাব।’
সে দিনই প্রশ্ন উঠেছিল তবে কি এ বার দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ল কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর? রাজ্য বিজেপি-র প্রতি কার্যত ক্ষোভের সুর শান্তনু ঠাকুরের গলায়। কেন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলি থেকে বেরিয়ে গেলেন তিনি? প্রশ্নের উত্তরে দেশের সময় ডিজিটালকে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যেখানে প্রয়োজনীয়তা নেই, সেখানে থেকে কী করব?’ তবে কি মতুয়া ভোটের দিকেই ইঙ্গিত করছেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী?
নির্বাচনের সময় কেন্দ্র এবং রাজ্য নেতৃত্ব যেভাবে মতুয়াদের মন জয় করতে উঠে পড়ে লেগেছিলেন, ভোট মিটতেই তা উধাও। এই অভিযোগ তৃণমূল শিবিরের তরফ থেকে একাধিকবার এসেছে। এ বার ঘুরপথে তেমনটাই বললেন খোদ বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর।
২০২১ সালে বাংলা থেকে চার সাংসদ মন্ত্রিসভায় জায়গা করে নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যেই রয়েছেন সাংসদ ও অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর । মতুয়া ভোট ব্যাঙ্ক ধরে রাখতেই বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে তাঁকে। এমনটাই অনুমান রাজনৈতিক মহলের একাংশের।শান্তনু মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে মমতাবালা বলেছিলেন, ‘শান্তনু মন্ত্রী হলে মতুয়াদের কোনও লাভ নেই।’
এই প্রতিবেদন লেখার মুহুর্ত পর্যন্ত ঠাকুরনগর ঠাকুর বাড়িতে শান্তনু ঠাকুররে সঙ্গে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক জন বিধায়ক এসে উপস্থিত হয়েছেন না তবে তাঁদের বৈঠক শুরু হয়নি ৷ বাকি আরও তিন বিধায়ক এসে পৌঁছায়নি বলে বিজেপি সূত্রের খবর৷