দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দাউ দাউ করে জ্বলছে বাগবাজারের হাজার হাত বস্তির আগুন। উত্তুরে হাওয়ায় ক্রমেই সেই আগুন আরও ছড়িয়ে পড়েছে। সেই আগুন থেকে রেহাই পায়নি বাগবাজারে মা সারদার বাড়িও। সেই বাড়ির একাংশেও ছড়িয়ে পড়েছে সেই আগুন। এই আগুনের কবলে পড়ে ইতিমধ্যেই পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে শতাধিক ঝুপড়ি। তার ফলে গৃহহীন হয়ে পড়েছেন কয়েকশ মানুষ।

হাইলাইটস

  • বাগবাজারে ব্রিজের কাছে বস্তিতে বিধ্বংসী আগুন
  • ১২২ বছরের স্বামী বিবেকানন্দর প্রতিষ্ঠিত উদ্বোধন পত্রিকা অফিস পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে
  • কী কারণে আগুন লাগল, তা এখনও স্পষ্ট নয়


বাগবাজারের হাজার হাত বস্তির পশ্চিম দিকে রয়েছে মায়ের বাড়ি। বুধবার সন্ধেবেলা আগুন লাগার পরে তা ক্রমাগত ছড়িয়ে পড়তে থাকে। জানা গিয়েছে, মায়ের বাড়ির পিছনের অংশে উদ্বোধনী কার্যালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে আগুন। বইয়ের গুদামেও তা ছড়িয়ে পড়েছে। এই আগুনের গ্রাসে পড়ে লাইব্রেরি ও অনেকগুলি কম্পিউটার পুড়ে গিয়েছে বলে খবর। মায়ের বাড়িতে আগুন ছড়ানোর পরে স্থানীয় বাসিন্দা ও দমকল কর্মীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন মহারাজরাও।

এদিন সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ বাগবাজার ব্রিজের কাছে হাজার হাত বস্তিতে আগুন লাগে। কাছেই বাগবাজার উওমেন্স কলেজ। আগুন লাগার পরেই তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে। উত্তুরে হাওয়া থাকায় দ্রুত ছড়ায় আগুন। মুহূর্তের মধ্যে বেশ কয়েকটি বাড়ি পুড়ে যায়। খবর দেওয়া হয় দমকলে। ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয় দমকলের পাঁচটি ইঞ্জিন। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, অনেক দেরিতে দমকল এসে পৌঁছেছে।

তার ফলে আগুন আরও ছড়িয়ে পড়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছোয় দমকলের কমপক্ষে ২৭টি ইঞ্জিন ৷
এই এলাকা শ্যামপুকুর থানার মধ্যে পড়ে। তাই খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয় শ্যামপুকুর থানার পুলিশ। তাদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে বলে খবর। বস্তির ভিতরে একের পর এক গ্যাস সিলিন্ডার ফাটায় ও অনেক দাহ্য বস্তু থাকায় আগুন আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষে প্রায় আড়াই ঘণ্টা চেষ্টার পরে আগুন মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে খবর।


দমকলের তরফে জানানো হয়েছে, কী কারণে এই আগুন লেগেছে তা স্পষ্ট নয়। তবে আগুন লাগায় লক গেট ব্রিজ ও আশপাশের রাস্তায় যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। গিরিশ পার্ক থেকে সেন্ট্রাল এভিনিউ পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তার ফলে বিশাল যানজট গোটা উত্তর কলকাতা জুড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নামাতে হয়েছে র‍্যাফ।

খবর পেয়ে গঙ্গাসাগর থেকে দ্রুত বাগবাজারের উদ্দেশে রওনা দেন পুর প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বস্তিবাসীদের চারটি কমিউনিটি হলে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুরমন্ত্রী। এদিন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন স্থানীয় সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিধ্বংসী এই অগ্নিকাণ্ডের জেরে ১২২ বছরের স্বামী বিবেকানন্দর প্রতিষ্ঠিত ‘উদ্বোধন’ পত্রিকার অফিস পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। স্বামী অভিন্নানন্দ নামে এক মহারাজ জানান, ‘উদ্বোধন ভবনের চারতলায় ১৫ জন সন্ন্যাসী ও ১৫ কর্মী থাকতেন। সবাইকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু, উদ্বোধন প্রকাশনার পুস্তকের ভান্ডার প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। এরফলে ১২২ বছরের প্রাচীন পুস্তক সংখ্যা পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে’। এই অগ্নিকাণ্ডের ফলে মোট আর্থিক কত ক্ষতি হয়েছে তা সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। স্বামী অভিন্নানন্দের থেকে আরও জানা গিয়েছে, ‘চারতলা বাড়িটির এক ও দু’তলায় বইয়ের কাউন্টার,পত্রিকার অফিস,বইয়ের গুদাম পুড়ে গিয়েছে। তিন তলায় প্রকাশনার অফিস ছিল। সেটিও কী অবস্থায় রয়েছে পেয়েছে বোঝা যাচ্ছে না’।

দমকলের পাশাপাশি আগুন নেভানোর কাজে হাত লাগান স্থানীয়রাও। অগ্নিকাণ্ডের জেরে সংলগ্ন এলাকায় যান চলাচলে প্রভাব পড়ে। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের একাংশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলে প্রাথমিক সূত্রে জানা যাচ্ছে।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here