দেশের সময় ওয়েব ডেস্কঃ লাল রংয়ের একটা মারুতি ইকো। এই গাড়িই ভর্তি করা হয়েছিল প্রায় আড়াইশো কেজি বিস্ফোরক দিয়ে। তারপর সেই গাড়ি চালিয়ে সোজাসুজি সিআরপিএফ কনভয়ে ঢুকে পড়েছিল জইশ-এর আত্মঘাতী জঙ্গি আদিল আহমেদ দার। প্রচণ্ড বিস্ফোরণ হয়েছিল কনভয়ে। তারপর প্রায় ২০০ মিটার জুড়ে শুধুই শহিদ জওয়ানদের দেহ। আহতদের চিৎকার, রক্ত ও বারুদের গন্ধের মিশ্রণ, এক বিভীষিকা। এই ঘটনার ১১ দিন পর ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা চিহ্নিত করলেন এই ঘাতক গাড়িকে। চিহ্নিত করা হয়েছে গাড়ির মালিককেও।
বিস্ফোরণের পরেই দুর্ঘটনাস্থল থেকে ঘাতক গাড়ির যেটুকু অংশ অবশিষ্ট ছিল, তা উদ্ধার করেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। সেই যন্ত্রাংশ নিয়ে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করার পরেই অবশেষে এই গাড়িকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির তরফে এ কথা জানানো হয়েছে সোমবার। পরীক্ষায় জানা গিয়েছে, ঘাতক গাড়িটি ছিল জি ১২বিএন১৬৪১৪০ ইঞ্জিন বিশিষ্ট মারুতি সুজুকি ইকো মডেল। চ্যাসি নম্বর এমএ৩ইআরএলএফ১এসওও১৮৩৭৩৫।
এনআইএ সূত্রে খবর, এই মিনি ভ্যানটি ২০১১ সালে জম্মু-কাশ্মীরের অনন্তনাগের হেভেন কলোনির বাসিন্দা মহম্মদ জলিল আহমেদ হাকানি কেনেন। তারপর সাতবার মালিকানা বদল হয়েছে ওই গাড়ির। এ বছরই ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে গাড়িটির মালিক ছিল বিজবেহারার বাসিন্দা মহম্মদ মকবুল ভাটের ছেলে সোপিয়ানের সিরাজ-উল-উলুমের ছাত্র সাজ্জাদ ভাট। কাশ্মীর পুলিশ সূত্রে খবর, বিস্ফোরণের পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছে সাজ্জাদ। কারণ ২৩ ফেব্রুয়ারি তার বাড়িতে গিয়ে সাজ্জাদের খোঁজ পাননি তদন্তকারী অফিসাররা।
সাজ্জাদ এই বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত, এমনটাই বক্তব্য তদন্তকারী অফিসাররা। সূত্রের খবর, সাজ্জাদ জইশ-ই-মহম্মদে নাম লিখিয়েছে। তার একটা ছবিও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বন্দুক হাতে দেখা যাচ্ছে সাজ্জাদকে। সাজ্জাদের খোঁজ শুরু করেছেন তাঁরা। তার খোঁজ পাওয়া গেলে এই হামলা সম্পর্কিত আরও অনেক তথ্য উঠে আসবে, এমনটাই মত তদন্তকারী অফিসারদের।
কিন্তু তারপরেও প্রশ্ন উঠছে। পুলিশ ও নিরাপত্তারক্ষীদের নজর এড়িয়ে অত পরিমাণ বিস্ফোরক কীভাবে জড়ো করা হলো, সেটা এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না তদন্তকারী অফিসাররা। তাঁদের ধারণা, শুধু কামরান, আদিল কিংবা সাজ্জাদই নয়, এই হামলার সঙ্গে আরও অনেকে যুক্ত ছিল। এখনও এই তদন্ত চলবে বলেই জানিয়েছেন তাঁরা।
ইতিমধ্যে কাশ্মীর যেন পরিণত হয়েছে এক দূর্গে। হামলার পরেই তো কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তারপর আবার ১০ হাজার জওয়ানকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। গোটা কাশ্মীর ছেয়ে ফেলা হয়েছে নিরাপত্তার চাদরে। যেখানেই জঙ্গির খবর পাওয়া যাচ্ছে, সেনা, সিআরপিএফ ও কাশ্মীর পুলিশ একসঙ্গে ‘সার্চ অ্যান্ড ডেসট্রয়’ অপারেশন চালাচ্ছেন। ইতিমধ্যেই কাশ্মীরের ডজনখানেক বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাতে জঙ্গিরা কোনও ভাবে সুবিধা না পায়।