দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ভোটের মুখে ইস্তেহার প্রকাশ করে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ দুয়ারে রেশন পৌঁছে দেওয়া হবে বলে এদিন ঘোষণা করলেন তৃণমূলনেত্রী। তৃণমূলের নির্বাচনী ইস্তেহার প্রকাশ করে মমতা বলেন, ‘আমরা দুয়ারে দুয়ারে রেশন পৌঁছে দেব। বার্ষিক ৫ লাখ কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। বছরে চার মাস দুয়ারে সরকার করা হবে।’ পাশাপাশি, তফশিলি পরিবারকে বছরে ১ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। জেনারেল কাস্ট পরিবারকে মাসে ৫০০ টাকা করে দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মমতা।
তৃণমূলনেত্রী বলেছেন, ‘বাংলার বাজেট ৩ গুণ বেড়েছে। রাজ্যের মানুষের মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ বেড়েছে। ১ কোটি ৭৫ লাখ কর্মদিবস তৈরি হয়েছে। কৃষকবন্ধুদের ১০ হাজার করে টাকা দেব। বাংলা আবাস যোজনায় আরও ২৫ লাখ বাড়ি তৈরি করা হবে। প্রতি ব্লকে একটি করে আবাসিক স্কুল তৈরি করা হবে।’ মমতা বলেছেন, ‘১০০ দিনের কাজে আমরা এক নম্বরে। বাংলায় কমেছে বেকারত্ব। আমরা সবাইকে নিয়ে চলতে চাই। বাংলায় ভাগাভাগি হবে না।’
বিধবাদের জন্য এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘মে মাস থেকে বিধবাদের জন্য হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে।’ মমতা এদিন বলেন, ‘২০১১ সাল থেকে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ১১০ শতাংশ কাজ করেছি।’ যোগ্য পড়ুয়াদের জন্য ১০ লাখ টাকার স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড আনা হবে। চার শতাংশ সুদ দিতে হবে। এতে জামিনদার লাগবে না বলে জানিয়েছেন মমতা।
বিজেপি-কে নিশানা করে তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘বিজেপি উলটোপালটা মন্তব্য করছে। আমরা রাজনৈতিকভাবে লড়াই করব। যেখানেই যাচ্ছি, বাংলার মানুষ আমাদের সমর্থন করছেন। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হোক। বিরোধীরা কী কটাক্ষ করল, আমার কিছু যায় আসে না। আমার আঘাত লেগেছে, সবই কি ভাঁওতা? আমার অনেক কষ্ট হয়েছে। হাই লোডেড ভাইরাস বিজেপি। নোংরা রাজনীতি করছে ওরা।’ এদিনও মমতার মুখে খেলা হবে স্লোগান শোনা যায়। তিনি বলেন, ‘খেলা হবে, জেতা হবে। ২৭ মার্চ থেকে খেলা শুরু। জঙ্গলমহলে প্রথম ধাক্কা খাবে বিজেপি।’
কেন্দ্র সরকারকে বিঁধে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা সংকুচিত করে দিল্লিতে উপ রাজ্যপালের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। তাহলে নির্বাচিত সরকারের কাজ কী? কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে নিন্দা জানাচ্ছি।’
১১০ শতাংশ কাজ করে দিয়েছি, বার্ষিক ৫ লক্ষ কর্মসংস্থান করব: তৃণমূলের ইস্তেহার প্রকাশ
কালীঘাটের বাড়ি থেকে একুশের ভোটের নির্বাচনী ইস্তেহার প্রকাশ করলেনমুখ্যমন্ত্রী।
দেখুন এক নজরে:
২০১১ সালে ইস্তেহারে যা প্রতিশ্রুতি ছিল, তার ১১০ শতাংশ কাজ করেছি।
এই বাংলা বহু মনীষীদের পুণ্যভূমি।
আমাদের অনেক কাজ সারা বিশ্বে এক নম্বর হয়েছে।
ইউনাইটেড নেশনসে কন্যাশ্রী প্রকল্প এক নম্বর।
১০০ দিনের কাজে বাংলা এক নম্বর সারা দেশে।
লকডাউনে যখন ৪০ শতাংশ দারিদ্র্য বেড়েছে তখন বাংলায় ৪০ শতাংশ বেকার কমিয়েছি।
এমএসএমই-তে আমরা এক নম্বর। লক্ষ লক্ষ মানুষকে আমরা কাজ দিয়েছি।
লকডাউনে যাঁরা চলে এসেছিলেন, তাঁদের খাদ্য দিয়েছি, চাকরিও দিয়েছি।
আমরা সবাইকে নিয়ে চলতে চাই। বাংলায় কখনও ভাগাভাগি হয়নি। ভবিষ্যতেও হবে না বলে বিশ্বাস করি।
বামপন্থী বন্ধুদের কাছে অনুরোধ, তাঁরা ‘নো ভোট টু বিজেপি’ বলছেন তার জন্য অভিনন্দন। কিন্তু তাঁরা তো ক্ষমতায় আসতে পারবে না। তাই তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ ভোট যেন নষ্ট না করে তৃণমূলকে দেন।
বাংলার মানুষের গণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকার রক্ষায় আমরণ পাশে থাকব। এটা আমার সঙ্কল্প ও অঙ্গীকার।
বাংলার মেয়ে হিসেবে আমি আমার জীবন বাংলা মায়ের চরণে উৎসর্গ করেছি।
আমি যখন রেলমন্ত্রী ছিলাম তখন মেট্রো প্রোজেক্ট আমার করে দেওয়া। আমি টাকাও রেখে গিয়েছিলাম।
মে মাস এলে ১০ বছর হবে আমাদের। এক বছর কোভিডের জন্য কাজ করা যায়নি। সবার ক্ষতি হয়েছে।
লকডাউনের মধ্যে আমাদের রাজস্ব আদায় বেড়েছে।
বাংলার মানুষের গড় আয় দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। কৃষকদের আয় বেড়েছে তিন গুণ।
বাংলাকে পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে গড়ে তোলার এবং ৩৫ লক্ষ মানুষকে চরম দারিদ্রে থাকা মানুষকে তুলে আনার লক্ষ্য নিয়েছি।
এই রাজ্যের বেকারদের নতুন দিশা দেখা দেখাতে বেকারত্বের হার অর্ধেক করব বার্ষিক পাঁচ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরির মাধ্যমে।
সরকারে এসে আমরা লক্ষ লক্ষ বিধবা, প্রবীণ মানুষ এবং প্রতিবন্ধীকে মে মাস থেকে এক হাজার টাকা করে ভাতা দেব।
বছরে দু’বার করে দুয়ারে সরকার হবে। মানুষের সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
মানুষকে রেশন নিতে যেতে হবে না। দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে দেব।
আরেকটা প্রকল্পের পরিকল্পনা করেছি। বাংলার প্রতিটি জেনারেল কাস্টের পরিবারকে বার্ষিক ছ’হাজার টাকা ও এসটি, এসসি, ওবিসি পরিবারকে বছরে ১২ হাজার টাকা দেওয়া হবে। এটা পকেটমানির মতো। খাদ্য বিনামূল্যে পাচ্ছে। স্বাস্থ্য বিনামূল্যে পাচ্ছে। এটা পকেটমানি।
অনেক সময়ে বাড়ির মেয়েদের হাতে পয়সা না থাকলে বিপদে-আপদে অসুবিধা হয়। তাই জন্য এটা করছি।
আগামী দিন বাংলার ছাত্র-যুবকদের স্বাবলম্বী করতে, তাঁদের শিক্ষার সুবিধা করে দেওয়ার জন্য সকল যোগ্য পড়ুয়াদের নতুন স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হবে। ক্রেডিট লিমিট ১০ লক্ষ টাকা। মাত্র চার শতাংশ সুদে তা দেওয়া হবে। এর জন্য তাঁকে কিছু জামিন দিতে হবে না। রাজ্য সরকার তাঁদের জামিনদার হবে।
কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, খাদ্যসাথী চলবে। স্বাস্থ্যসাথী চলবে। প্রয়োজনে আরও সরল করা হবে সব পদ্ধতি।
কৃষক বন্ধুরা আগে পাঁচ হাজার টাকা পেতেন। এখন তাঁরা ছ’হাজার টাকা করে পান। তাঁদের বছরে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।
১০ লক্ষ নতুন এমএসএমই ইউনিট গঠন করব।
বাংলা আবাস যোজনায় ৩৩.৭ লক্ষ বাড়ি তৈরি করেছি। আরও ২৫ লক্ষ বাড়ি তৈরি হবে। মূলত অনগ্রসর শ্রেণির জন্য।
মাহিষ্য, তিলি, তামুল, সাহা—যাঁরা ওবিসি হিসবে স্বীকৃত নয় কিন্তু মণ্ডল কমিশনের তালিকাভুক্ত। তাঁদের ওবিসি স্টেটাস পরীক্ষা ও প্রস্তাব করার জন্য এসটিএফ গঠন করা হবে। যাতে তাঁরা ওবিসি সুযোগ-সুবিধা পেতে পারেন।
পাহাড়ে যাতে শান্তি থাকে তরাই-ডুয়ার্স-পাহাড়ের মধ্যে স্পেশাল ডেভেলপমেন্ট বোর্ড গঠন করব।