অন্বেষা বন্দ্যোপাধ্যায়: উত্তর কলকাতার নীলমণি মিত্র স্ট্রিটের ১৯/সি নম্বর বাড়ি। মিত্র বাড়ি নামে এক ডাকে চেনেন সকলে। শুধু এলাকায় নয়। কলকাতা শহরে বললেও ভুল হবে না। ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে সেই বাড়িতেই পুজো হচ্ছে দূর্গা মায়ের। একটু অন্য নিয়মে।
রাস্তা যাঁর নামে, সেই নীলমণি বাবুর ছেলে রাধাকৃষ্ণ মিত্র এই পুজো শুরু করেন। আড়িয়াদহ থেকে ভাগ্যের খোঁজে সুতানুটি অঞ্চলে আসেন এই পরিবারের জগন্নাথপ্রসাদ মিত্র। তিনিই বংশের প্রতিষ্ঠাতা। আদিপুরুষ বলা চলে। তাঁর পৌত্র দুর্গাচরণ মিত্র সিরাজদৌল্লা ও পরিবারের গয়না গড়াতেন। এছাড়াও তাঁর নুনের দেওয়ানি ছিল।
এই দুর্গাচরণের ভ্রাতুষ্পুত্র হলেন নীলমণি। তিনি নিজের সময়ে গণ্যমান্য ব্যক্তি ছিলেন। এই নীলমণির ছেলে রাধাকৃষ্ণ মিত্র পরিবারে দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন। ১৮০৭ সালে। রাধাকৃষ্ণের পঞ্চম বংশধরের কোনও ছেলে নেই। এখন তাই বাড়ির পুজোর দায়িত্ব নিয়েছেন মেয়েরাই। প্রধান দায়িত্বে বাড়ির বড় মেয়ে অনুসূয়া বিশ্বাস মিত্র ৷
এ বাড়ির দেবীর মুখ বাংলা ধাঁচের। অর্থাৎ চোখ মানুষের মতো। পুরনো ছাঁচ সংরক্ষণ করে রাখা রয়েছে। সেই ছাঁচেই প্রতি বছর গড়া হয় তিন চালার প্রতিমা। পিছনে মঠচৌড়ি। দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতীর পিছনে তিনটি অর্ধবৃত্ত। তার ওপর মাটির নকশা করা তিনটি মঠের চূড়ার আকৃতির চালি। দুর্গা, লক্ষ্মী ও সরস্বতীকে পরানো হয় ডাকের সাজ। কোঁচানো ধুতি পরেন কার্তিক, গণেশ। সিংহ ঘোড়ামুখ। প্রতিমার সাজসজ্জা করান পরিবারের সদস্যরাই।
এখানে চাল ও ফলের সঙ্গে মিছড়ি–মাখনের নৈবেদ্য দেওয়া হয়। অব্রাহ্মণ পরিবার বলে অন্নভোগ দেওয়ার রীতি নেই ৷ রান্না করা ভোগের বদলে কাঁচা আনাজে হলুদ মাখিয়ে সাজিয়ে দেওয়া হয় ভোগের থালা। সব শেষে পানের খিলি। পান পাতার শিরা দিয়ে তৈরি খিলি। দেখতে অনেকটা ঝাড়বাতির মত। তাই বলা হয় ঝাড়খিলি। ফুলের পাপড়ির আকারে চারপশে সাজানো থাকে নানা রকম পানমশলা।
পদ্ম নয়, ১০৮টি নীল অপরাজিতা ফুলে সন্ধিপুজো হয় মিত্র বাড়িতে। দশমীর দিন কাঁধে চেপে গঙ্গার ঘাটে যান ‘বাড়ির মেয়ে’। সেখানে বাড়ির অন্য মেয়েদের যাওয়ার নিয়ম নেই ৷এ ভাবেই ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে মিত্র বাড়িতে পুজো হচ্ছে দূর্গা মায়ের।