দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শুক্রবার সাত সকালে হায়দরাবাদে চার ধর্ষকের এনকাউন্টারে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই ফের তাজা হয়ে গেল ওয়ারঙ্গলের স্মৃতি! কারণ, নেপথ্যে সেই এক পুলিশ কর্তা। সাইবারাবাদের বর্তমান পুলিশ কমিশনার ভিসি সাজ্জানার।

২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসের ঘটনা। সাজ্জানার তখন ওয়ারঙ্গল পুলিশের কমিশনার। এক কলেজ পড়ুয়ার উপর অ্যাসিড ছোঁড়ার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত শ্রীনিবাস, হরিকৃষ্ণ ও সঞ্জয়ের ঠিক এভাবেই পুলিশ এনকাউন্টারে মৃত্যু হয়েছিল।

অ্যাসিড আক্রান্ত ছাত্রী কাকাতিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে পড়তেন। তাঁর উপর অ্যাসিড ছোড়ার ঘটনায় সেবারও উত্তাল হয়ে উঠেছিল ওয়ারঙ্গল থেকে শুরু করে গোটা অন্ধ্রপ্রদেশ।

অভিযুক্তরা গ্রেফতার হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে ঠিক এভাবেই এক সকালে জানা গিয়েছিল, ওয়ারঙ্গলের মামনুরে পুলিশ এনকাউন্টারে মারা গিয়েছে তিন জনই। মানবাধিকার কর্মীরা অবশ্য সে ঘটনার সমালোচনা করেছিলেন।

১৯৯৬ ব্যাচের আইপিএস অফিসার সাজ্জানার বরাবরই কড়া পুলিশ কর্তা বলে পরিচিত। তেইশ বছরের চাকরি জীবনে প্রচুর ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্বও সামলেছেন তিনি। এক সময়ে রাজ্য গোয়েন্দা দফতরের ইন্সপেক্টর জেনারেল পদেও ছিলেন এই পুলিশ কর্তা।

অন্ধ্রপ্রদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল তখন নকশাল তথা মাওবাদী সমস্যা কবলিত। সে সময়ে বহু নকশাল ও মাওবাদী নেতাকে গ্রেফতার করেছিলেন সাজ্জানার। তার মধ্যে অন্যতম ছিল নকশাল নেতা নঈমুদ্দিন ওরফে নঈমের এনকাউন্টার। হায়দরাবাদের উপকণ্ঠে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছিল নঈমের।
গত সপ্তাহের বুধবার হায়দরাবাদে তরুণী পশু চিকিৎসককে গণধর্ষণ করে আগুনে জ্বালিয়ে মারার নৃশংস ঘটনায় ফের সামনে এল সাজ্জানারের নাম।

শুধু নাম সামনে এল বলা ভুল, সোশ্যাল মিডিয়ায় তো রীতিমতো হিরো হয়ে উঠেছেন তিনি। এই ভাবেই মারা উচিৎ ছিল ধর্ষকদের, সাজ্জানারের নেতৃত্বে এই এনকাউন্টারই সেরা বিচার তাদের জন্য। — এমনটাই বলছেন নেটিজেনদের একটা বড় অংশ। এবং তাঁদের মুখে বারবার ঘুরে আসছে এই নামটাই। ভিসি সাজ্জানার। যাঁর কড়া বিচার থেকে রেহাই পেল না নৃশংস অপরাধীরা।

পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন কাকভোরে তদন্তের জন্য ঘটনার পুনর্নির্মাণ করতে এনএইচ ৪৪-এ পৌঁছেছিল পুলিশের দল। গত সপ্তাহের বুধবার সেখানেই গণধর্ষণ করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল তরুণী পশু চিকিৎসককে। পুলিশের দাবি, সেখানে যাওয়ার পরেই পালানোর চেষ্টা করে অভিযুক্তরা। তখনই তাদের গুলি করে মারা হয়।

গত সপ্তাহের বুধবার রাত ৯টা ২০ নাগাদ, হায়দরাবাদে এনএইচ ৪৪-এর ওপর পেশায় পশুচিকিৎসক ওই ২৬ বছরের তরুণীর স্কুটির চাকা পাংচার করে দিয়েছিল অভিযুক্তরা। তার পরের এক ঘণ্টার মধ্যেই তাঁকে গণধর্ষণ করে পুড়িয়ে মারে তারা।

এই ঘটনায় তদন্তে নেমে, দু’দিন পরে, শুক্রবার চার জন অভিযুক্তকেই গ্রেফতার করে পুলিশ। মহম্মদ আরিফ, জল্লু শিবা, জল্লু নবীন ও চিন্তাকুন্তা চেন্নাকেশাভুলু নামের এই চার অভিযুক্তকে শনিবার ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়েছিলেন তেলঙ্গানার শাদনগরের ম্যাজিস্ট্রেট। তেলঙ্গানার চেরাপল্লীর সেন্ট্রাল জেলে ছিল তারা। অভিযুক্তরা স্বীকার করে, তরুণী যাতে চিৎকার না করতে পারেন, সে জন্য তাঁর গলায় জোর করে মদ ঢেলে দিয়েছিল তারা। এমনকি তরুণীকে পোড়াতেও তাঁরই স্কুটির পেট্রোল ঢালা হয়েছিল বলেও স্বীকার করেছে তারা। ফার্স্ট ট্র্যাক কোর্টে তাদের বিচার হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

সারা দেশের মানুষ ফেটে পড়েছিল ক্ষোভে, প্রতিবাদে। দেশের নানা প্রান্তে বিক্ষোভ দেখিয়ে ধর্ষকদের ফাঁসির দাবি তুলেছিলেন অনেকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে দাবি করেছিলেন গণহত্যার। এ সবের মধ্যেই শুক্রবার কাকভোরে খবর এল এনকাউন্টারের। পুলিশের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় নিহত চার ধর্ষকই।

এর পরেই হায়দরাবাদ পুলিশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সকলে। আর সে প্রশংসার পুরোভাগে রয়েছেন ভিসি সাজ্জানার। তাঁরই নেতৃত্বে ফের এনকাউন্টারে মরলো চার ধর্ষক। ১১ বছর আগে, ওয়ারঙ্গলের সেই অ্যাসিড-অপরাধীর মতোই সাক্ষী হয়ে থাকল হায়দরাবাদের এই ঘটনা৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here