দেশের সময়ঃ ১৬ জুলাই— বনগাঁ পুরসভার আস্থা ভোটের চুড়ান্ত ফলাফল হাইকোর্টের উপরেই নির্ভর করে রইল। মঙ্গলবার এ ব্যাপারে দুপক্ষই আলাদা আলাদা বৈঠক করে। পরে দুপক্ষই দাবি করে যে তারাই জয়ী হয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে সরকারিভাবে কোনও বক্তব্য পাওয়া যায় নি। বিজেপি এ ব্যাপারে বুধবার গোটা বিষয়টি হাইকোর্টকে জানাবে। সেখান থেকে যা নির্দেশ জারি হবে, সেটাই এখন বনগাঁ পুরবোর্ডের ভবিতব্য বলে মনে করা হচ্ছে। গত জুন মাসে বনগাঁ পুরসভার মোট ১৪ জন তৃণমূল কাউন্সিলর দলের পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনে। এ ব্যাপারে পুরপ্রধান এবং উপ পুরপ্রধানের মোট ১৫ দিন সময়সীমা পার হয়ে গেলেও কোনও বৈঠকের আয়োজন না হওয়ায় বিদ্রোহী কাউন্সিলরেরা হাইকোর্টের দারস্থ হন। ইতিমধ্যে ওই ১৪ জন তৃণমূল কাউন্সিলর দলত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দেন। গত ১২ জুলাই হাইকোর্ট রায় দেয় যে, ৭ দিনের মধ্যে অনাস্থা প্রস্তাবের বিষয়ে বৈঠকের আয়োজন করে আস্থা ভোট করতে হবে। সেই অনুযায়ী, বিদ্রোহী কাউন্সিলরদের মধ্যে থেকে ৩ জন কাউন্সিলর বনগাঁর মহকুমা শাসককে চিঠি দিয়ে আজ বিকেল ৩ টেয় আস্থা ভোটের বিষয়ে বৈঠক করার প্রস্তাব জমা দেন। সেইমতো এদিন আস্থা ভোটের জন্য বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এদিকে, দলত্যাগী ১২ কাউন্সিলরদের মধ্যে এক মহিলা কাউন্সিলর দলের ২ কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে বনগাঁ থানায় অপহরণ, তোলা আদায় এবং আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখানোর অভিযোগ দায়ের করেন। এই পরিস্থিতিতে অভিযুক্ত ২ কাউন্সিলর হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেন। এদিন দুপুরে সেই মামলার প্রেক্ষিতে হাইকোর্টে আগাম জামিন না দিলেও তাদেরকে আগামী ২২ জুলাই পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা যাবে না বলে নির্দেশ দেয়। এদিন বৈঠক শুরু হয়ে গেলেও আদালতের রায়ের কোনও লিখিত কপি অভিযুক্ত কাউন্সিলরেরা পুলিশকে দেখাতে না পারায় ওই দুই কাউন্সিলরকে বৈঠকে অংশগ্রহন করার অনুমতি দেয় নি পুলিশ। প্রায় পৌনে ৪টে নাগাদ তারা পুলিশকে আইনজীবীর লিখিত চিঠি দেখালে পুলিশ তখন তাদেরকে বৈঠকে যাবার অনুমতি দেয়। এদিকে, বৈঠক শুরুর অনেক আগেই পুরসভায় হাজির হন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য সহ তাঁর পক্ষের ১০ জন কাউন্সিলর। তারমধ্যে কংগ্রেসের একমাত্র কাউন্সিলরও ছিলেন। তাঁরা পুরসভার নির্বাহী আধিকারিকের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলেও বিজেপি কাউন্সিলরেরা বৈঠকে হাজির না হওয়ায় পুরপ্রধান এবং তার পক্ষের কাউন্সিলরেরা ৩টে ২৫ মিনিটে বাইরে বেরিয়ে সাংবাদিকদের কাছে বলেন, 'যারা অনাস্থা এনেছিলেন, তারা কেউই এই বৈঠকে হাজির না থাকায় আমরা আস্থার পক্ষে জয়ী হয়েছি। পুরসভার নির্বাহী আধিকারিকের সামনেই গোটা ঘটনাটি ঘটেছে।' অন্য দিকে তখন বিদ্রোহী কাউন্সিলররা অভিযোগ করেন তাদেরকে গেটে তালা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে পুরসভার নীচের এক কক্ষ্যে।তাদের কে পুরসভার নির্বাহী আধিকারিকের ঘরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না৷উত্তেজনা ছড়ায় এর জেরে৷ শুরু হয় পুলিশের সাথে বসচা,উত্তেজিত বিজেপি সমর্থদের উপরে চড়াও হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী৷ এই ঘটনার পর বিকেল পৌনে ৪টে নাগাদ বিজেপির ১১ জন কাউন্সিলর পুরসভায় প্রবেশ করে নির্বাহী আধিকারিকের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন। পরে তাঁরা দাবি করেন, পুরপ্রধান এবং তাঁর অনুগামীরা কেউ এই বৈঠকে উপস্থিত না হওয়ায় তাঁরা অনাস্থার পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহন করে জয়ী হয়েছেন। সেই বৈঠকের রেজুলেশনে নির্বাহী আধিকারিক সাক্ষরও করেছেন। সেই কাগজ তাঁরা আজ মহকুমা শাসকের পাশাপাশি বুধবার হাইকোর্টেও জমা দেবেন। এরপর হাইকোর্ট যা সিদ্ধান্ত নেবে তা তাঁরা মাথা পেতে নেবেন বলে জানান। এ ব্যাপারে এদিন নির্বাহী আধিকারিক গৌরাঙ্গ বিশ্বাসকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চান নি। তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এ ব্যাপারে বলেন, 'নিয়ম অনুযায়ী বিজেপি কাউন্সিলরেরা নির্ধারিত সময়ে বৈঠকে হাজির না থাকায় আমাদের কাউন্সিলরেরা পুরপ্রধানের উপর আস্থা রাখায় বনগাঁ পুরসভায় পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্যর নেতৃত্বে পুরনো পুরবোর্ডই থাকছে।'পুরসভার বাইরে ধুন্ধুমার চলছে বিজেপি সমর্থক আর পুলিশ বাহিনীরআস্থা ভোটকে কেন্দ্র করে এদিন সকাল থেকেই পুরসভার ৫০০ মিটারের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। উত্তর এবং দক্ষীন ২৪ পরগনার বিভিন্ন থানা এলাকা থেকে পুলিশ র্যাফ বাহিনী মোতায়েন করা হয়। হাজির ছিল জল কামানও যদিও শেষ পর্যন্ত বড় কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটায় তার কোনও কিছুই ব্যবহার করতে হয় নি। বিকেল ৪টে নাগাদ কিছুটা উত্তেজনা তৈরি হওয়ায় জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ একটি স্ট্যান্ট গ্রেনেড ফাটায়। পুলিশকে হালকা লাঠি চার্জও করতে হয়। অবশেষে বিজেপি, তৃণমূল দুই দলের নেতৃত্বদেরকে দেখাগেল তাদের কর্মী সমর্থকদের কে নিয়ে উল্লাস করতে করতে ফিরে যেতে৷কিন্তু বনগাঁর সাধারন মানুষ এর আগে কখনও এমন ঘটনার সাক্ষীছিলেন না, তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, তাদের পরিচিত বনগাঁর সংস্কৃতি এটা নয়! ইছামতীর তীরে বিভূতিভূষণের শান্ত স্নিগ্ধ শহর ফিরে পেতে চান তারা৷ফিরে পারবেনকি আর কোন দিন?এটাই এখন বনগাঁর মানুষের লাখটাকার প্রশ্ন..ঘুরছে সকলের মুখেমুখে। ———————————