দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ পশ্চিমবঙ্গ: সোনার গয়না কিনতে ক্রেতাদের কথা চিন্তা করেই নতুন আইন এনেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সোনার গয়নায় এ বার থেকে শুধু হলমার্ক নয়, থাকবে হুইড অর্থাত্, হলমার্ক ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন নম্বর । এই হুইড ছাড়া কোনও সোনার গয়না বিক্রি করা যাবে না বলেই জানিয়েছে কেন্দ্র। ফলে মাথায় হাত স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের। আগামী, ৩১ অগস্টের মধ্যে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র।
এই নতুন নিয়মে রীতিমতো বিপদের মুখে পড়তে চলেছেন ছোট-বড় হাতে গড়া সোনার কারিগররা। যাঁরা সামান্য মূল্যের বিনিময়ে ছোটখাটো কাজ করে সংসার চালিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে।
কী এই হুইড ? সাধারণত সোনার গয়না বিক্রি করতে গেলে হলমার্কের উপর নির্ভর করতে হয়। হলমার্ক সোনার গয়না মূলত ২২ ক্যারেট থেকে ২৪ ক্যারেট হয়ে থাকে। কেন্দ্রের নতুন নির্দেশে এই হলমার্ক সোনার গয়নায় বসবে হুইড, যার সাহায্যে, অনলাইনে কোডের মাধ্যমে ওই সোনার গয়নার সমস্ত তথ্য জমা আপলোড করা থাকবে। অর্থাত্, কোনো গয়নায় কত পরিমাণ সোনা রয়েছে কতটাই বা খাদ তা সহজেই অনুধাবন করা যাবে।
পাশাপাশি ওই সোনার গয়নার তথ্য নির্দিষ্টভাবে সরকারি দপ্তরে জমা হবে। ফলে ওই গয়না কোন দিনে কার কাছে বিক্রি হয়েছে বা কার কাছে কত সোনা মজুদ রয়েছে সেটাও জানা যাবে। এরফলে প্রতারণার হাত থেকে মুক্তি পাবেন ক্রেতারা।
কিন্তু এই হুইড কোড গ্রাহকের কাছে পৌঁছনো কেবল সময় সাপেক্ষ নয়, ছোট জিনিস বিক্রির ক্ষেত্রেও তা লোকসানের সামিল। কারণ এই নির্দেশিকা মানতে গেলে একটা সোনার জিনিস বিক্রি করতে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ দিন লাগবে।
এরই প্রতিবাদে সোমবার পথে নামেন হাজার হাজার স্বর্ণকর্মী। পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় বন্ধ থাকে সোনার দোকান। একাধিক স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য থেকে শুরু করে ছোট ছোট স্বর্ণকারেরাও এই বনধে অংশ নেন। সংশ্লিষ্ট মহলের আশঙ্কা, হুইড চালু হলে যেহেতু গয়নার সমস্ত তথ্য সরকারি ভাবে নজরদারিতে থাকবে ফলে সেক্ষেত্রে একদিকে যেমন গয়নায় খাদের পরিমাণ কমবে তেমন একই সঙ্গে বাড়তে পারে সোনার দামও। ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়বে গয়নার মজুরিও। তাতে সমস্যায় পড়তে পারেন মধ্যবিত্ত ক্রেতারা। অন্যদিকে, গয়নার দাম বাড়লে লভ্যাংশ কমতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।
গয়নায় হলমার্ক করার প্রক্রিয়াগত অসংখ্য ত্রুটি নিয়ে বীতশ্রদ্ধ ব্যবসায়ীরা তাঁদের অভিযোগ, হলমার্কের নিয়মে আপত্তি নেই। কিন্তু তা কার্যকর করার পদ্ধতি এতটাই ত্রুটিপূর্ণ যে, স্বর্ণ শিল্পমহলের রাতের ঘুম উড়েছে। কখনও ঠিক সময়ে গয়না দেওয়া যাচ্ছে না ক্রেতাকে। কখনও
বিপুল লোকসান গুনছেন বিক্রেতা। দোষ না-থাকলেও বহু ক্ষেত্রে ক্রেতার ক্ষোভের মুখে পড়ছেন। নিয়ম কার্যকর করতে গিয়ে বহু ছোট দোকানের ব্যবসা চালানোই কঠিন হয়েছে পড়েছে৷
ব্যবসায়ীদের ক্ষোভের সঙ্গে জানিয়েছেন, ২৬ জুন প্রতিটি গয়নায় হলমার্ক বাধ্যতামূলক করেছে কেন্দ্র। সেপ্টেম্বর থেকে হলমার্ক আইন ভাঙার অভিযোগে শাস্তির মুখে পড়তে পারেন তাঁরা। অথচ আইন মানার প্রক্রিয়াতেই গলদ রয়েছে। ক্রেতার স্বার্থ রক্ষা করতে আনা ব্যবস্থাটি বহু ক্ষেত্রে সেই উদ্দেশ্য তো পূরণ করছেই না। উল্টে অকারণে বিক্রেতার বিশ্বাসযোগ্যতা কেড়ে নিচ্ছে।
স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমিটির এক কর্ণধারের কথায়, অনেক আগেই হলমার্ক চালু করেছি। এতে গয়নার মান নিয়ে ক্রেতার বিশ্বাস অর্জন সম্ভব। কিন্তু বর্তমান পদ্ধতিতে বিশ্বাস ভাঙছে।তিনি জানান, হলমার্কের পরে বিআইএস পোর্টালে প্রকাশিত তথ্যের সঙ্গে মূল গয়নার ওজনের ফারাক থাকার অভিযোগ উঠছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে হলমার্ক গয়নায় সোনার মান নিয়েও।
বনগাঁর ছোট-মাঝারি গয়না ব্যবসায়ীদের সংগঠন বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পি সমিতির কর্ণধার বিনয় সিংহ এবং কল্যাণ তারনের কথায়, ‘‘হলমার্ক ব্যবস্থা কার্যকরের সমস্যায় ব্যবসা চালানোই অসম্ভব হচ্ছে। সময় লাগছে বেশি। গয়নার নিরাপত্তা নষ্ট হচ্ছে।’’ সব থেকে সঙ্কটে ছোট দোকানগুলির৷