দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ অবশেষে সুর নরম করল বেজিং।

লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা অঞ্চলে ভারত-চিন সেনাবাহিনীর মধ্যে যখন সংঘাতের পরিস্থিতি, একে অপরের চোখে চোখ রেখে শাসানি দিচ্ছে, তখন নয়াদিল্লি স্থিত চিনা রাষ্ট্রদূত সান উইদং বুধবার বরফ গলাতে বার্তা দিতে চাইলেন। তাঁর বক্তব্য, বিক্ষিপ্ত ভাবে যে মতান্তর তৈরি হয়েছে, তা যেন দু’দেশের মধ্যে সার্বিক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপর ছায়াপাত না করে। বরং পারস্পরিক আস্থা বাড়ানোই এখন সময়ের দাবি। তাঁর কথায়, “ড্রাগন ও হাতি পরস্পর হাত ধরে নাচছে-দু’দেশের জন্য সেটাই রাইট চয়েস।”

একই সঙ্গে এদিন বেজিংয়ে চিনের বিদেশ মন্ত্রকও সীমান্ত সমস্যা নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বলেছেন, সীমান্তে পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। তা ছাড়া আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ মিটিয়ে ফেলার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাও সীমান্তে রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ভারতের চিনা রাষ্ট্রদূত সান উইদং অবশ্য এদিন লাদাখে সংঘাতের পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেননি। তবে উইদং বোঝাতে চান, যদি কোনও মতান্তর থাকে তা হলে দু’পক্ষেরই আলোচনার মাধ্যমে তা মিটিয়ে ফেলা ভাল। এ ব্যাপারে পারস্পরিক বোঝাপড়ার যে মৌলিক নীতি রয়েছে, সেই অবস্থান ধরে রাখতে হবে। যার সার কথা হল, প্রতিবেশি এই দুই দেশ কেউ কারও শত্রু নয়।

তাঁর কথায়, “আমাদের মধ্যে যে মতান্তর রয়েছে তা সঠিক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে দেখতে হবে। সেই সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে তা তার সমাধান করা সম্ভব হয়।”

৬২ সালে চিনের সঙ্গে যুদ্ধের পর প্রথম বরফ গলানোর কাজটি করেছিলেন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী। ১৯৮৮ সালের ডিসেম্বর মাসে চিন সফরে গিয়ে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী লি পেঙ ও রাষ্ট্রপতি দেং জিয়াওপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন তিনি। দু’দেশই তখন অঙ্গীকার করে পঞ্চশীল নীতিতে পারস্পরিক সহাবস্থানেই দু’দেশের মঙ্গল। তার থেকে বেজিংয়ের সঙ্গে সীমান্ত বিবাদ নিয়ে নয়াদিল্লি যেমন ধারাবাহিক আলোচনা চালিয়ে গিয়েছে, তেমনই দু’পক্ষের বাণিজ্যিক সম্পর্কও ক্রমশ মজবুত হয়েছে।

শুধু তাই নয়, ২০০৫ সালে ভারত চিন প্রতিরক্ষা তথা কৌশলগত সম্পর্কেরও দরজা খুলেছে। সে বছর চিন সফরে গিয়ে তৎকালীন চিনা প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাওয়ের সঙ্গে এ ব্যাপারে বৈঠক করেছিলেন ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়।

মনে করা হচ্ছে, এ দিন সেই সমঝোতার দিকেই ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন ভারতে স্থিত চিনা রাষ্ট্রদূত। এ দিন একটি অনলাইন আলোচনা সভায় বক্তৃতা দিয়েছেন সান উইদং। কনফেডারেশন অব ইয়ং লিডার্স আয়োজিত সেই সভাতেই এই মন্তব্য করেছেন চিনা রাষ্ট্রদূত।

সেখানে তিনি বলেন, “একটা মৌলিক বিষয় আমাদের মেনে চলতে হবে। তা হল ভারত ও চিন পরস্পরকে বিপদে না ফেলে বরং সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে। তাই আমাদের উচিত একে অপরের উন্নতির খেয়াল রাখা এবং পারস্পরিক কৌশলগত সম্পর্কের আস্থা বাড়ানো।”

লাদাখে চিন-ভারত সংঘাতের পরিস্থিতিতে চিনা রাষ্ট্রদূতের এই সব মন্তব্য যে কূটনৈতিক ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ তা নিয়ে সন্দেহ নেই। কেন না এমন একটি পরিস্থিতিতে তিনি এ কথাগুলি বলেছেন যখন, লাদাখের প্যাঙ্গং সো, গালওয়াল উপত্যকা, দেমচোক, দওলত বেগ এলাকায় দুই দেশ বিপুল সেনা মোতায়েন করেছে। একে অপরের দিকে আগ্রাসী নজরে তাকিয়ে রয়েছে। গত কয়েকদিন দুই পক্ষই সেখানে তাদের সামরিক শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

এই পরিস্থিতিতে বুধবার চিনের বিদেশমন্ত্রকও ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে। চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেন, “ভারতের সঙ্গে সীমান্তে পরিস্থিতি স্থিতিশীল এবং তা নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রয়েছে।” তাঁর কথায়, “দুই দেশের দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে যে বোঝাপড়া হয়েছিল, সেই শর্তই আমরা কঠোর ভাবে মেনে চলছি।” এ ব্যাপারে সম্ভবত চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘরোয়া আলোচনার কথা বোঝাতে চেয়েছন ঝাও।

তিনি আরও বলেন, “আমাদের ভূখণ্ডের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষা করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দুই দেশের মধ্যে সীমান্তে নিজেদের মধ্যে আলোচনার জন্য সুনির্দিষ্ট মেকানিজম রয়েছে। আমরা সুষ্ঠু আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ মীমাংসা করতে সক্ষম।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here