দেশের সময় বাগদা: ঠাকুমা বীণাপানিদেবীর ঘরে ঢুকতে বাধা পেয়ে জ্যাঠতুতো দাদা শান্তনু ঠাকুরের বিরুদ্ধে অনশনে বসেছিলেন। তখন থেকে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের নজর ছিল মধুপর্ণার দিকে। এবারে রাজনীতিতে আনকোরা ঠাকুর পরিবারের সদস্য মধুপর্ণা ঠাকুরকেই বাগদার উপনির্বাচনে টিকিট দিয়েছে তৃণমূল। বুধবার বনগাঁর মহকুমা শাসকের দফতরে গিয়ে মনোনয়ন জমা দিলেন তিনি।
নীল সাদা শাড়ি পরে সকালে জেলাশাসক দফতরে পৌঁছে গেছিলেন মধুপর্ণা। এদিন তাঁর সঙ্গে ছিলেন মা মমতাবালা ঠাকুর ও দলীয় নেতাকর্মীরা। নমিনেশন জমা দেওয়ার পরে আত্মবিশ্বাসী মধুপর্ণা বলেন, “সিট তো আমরা জিতে বসেই আছি, এটা জাস্ট একটা ফরমালিটি। লড়াইটা খুব কঠিন না। ১৩ তারিখে দিদির হাতে সিটটা তুলে দিতে পারব।”
আগামী ১০ জুলাই বাগদায় উপনির্বাচন।
অন্যদিকে বাগদা বিধানসভা আসনে উপনির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে বিজেপি। এর মধ্যেই প্রার্থী নিয়ে বিরোধ তুঙ্গে। বাগদার পদ্ম প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন বিজেপি কর্মীদের একাংশের মধ্য। দানা বেঁধেছে ।
বিজেপির প্রার্থীর নাম ঘোষণা হতেই উত্তপ্ত বাগদা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রার্থী বদল না হলে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করাবেন বিজেপি কর্মী সমর্থকরা এমনই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। আগামী ১০ তারিখ বাংলার চার কেন্দ্রে উপনির্বাচন। চারটি কেন্দ্রের মধ্যে অন্যতম বাগদা বিধানসভা।
সোমবার দুপুরে নিজেদের প্রার্থী হিসেবে বাগদায় বিনয় বিশ্বাসের নাম ঘোষণা করেছে বিজেপি। প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতেই বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে কর্মী সমর্থকরা। বাগদার হাই স্কুল ময়দানে বিজেপি কর্মী সমর্থকদের তরফে একটি অস্থায়ী আলোচনার সভা করা হয়। সমর্থকরা বলেন, ‘আমরা বাগদার ভূমিপুত্রকে প্রার্থী হিসেবে চেয়েছিলাম। কিন্তু দেখা গেল বহিরাগত প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। যাঁকে কোনওদিন দেখা যায়নি। আমরা এই প্রার্থী মানছি না।’
তাঁরা এও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রার্থী বদল না হলে তাঁরা কেউ বিজেপিতে ভোট দেবেন না। উলটে, বিজেপি সমর্থিত নির্দল প্রার্থী দাঁড় করানো হবে।বিজেপির যুব নেতা সমীর বিশ্বাস জানান, এর আগেও বহিরাগত প্রার্থী দেওয়া হয়েছিল। তাঁকে আমরা খেটে জিতিয়েছিলেন। কিন্তু, এরপর তিনি অন্য দলে চলে যান। এরপরেও সেই একই ভাবে বহিরাগত প্রার্থী দেওয়া হল। এটা আমরা চাই না। বিষয়টি নিয়ে বনগাঁ বিজেপি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দেবদাস মণ্ডল বলেন, ‘দল থেকে প্রার্থী ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। তিনি পদ্ম চিহ্নে লড়বেন। যাঁরা দলের অনুগত সৈনিক তাঁরা দলের প্রার্থীর হয়েই কাজ করবেন। কে বা কারা হুমকি দিয়েছে, হুমকির সামনে বিজেপি মাথানত করবে না।’
রাজনীতিতে নবাগতা মধুপর্ণাকে প্রার্থী করার পরে প্রচারে নেমে পড়েছে তৃণমূল। ঠাকুরবাড়ির এই তরুণ সদস্যকে নিয়ে মতুয়া ভোট একজোট করার আশায় বুক বেঁধেছে রাজ্যের শাসকদল। এদিকে বিজেপির মধ্যে গোষ্ঠীকোন্দল দেখা দিয়েছে। প্রার্থী নিয়ে বেজায় চটেছেন স্থানীয় বিজেপি কর্মীদের একাংশ। তাঁরা প্রার্থী বদলের দাবি জানিয়েছেন। গেরুয়া শিবিরের এই অন্তর্কলহের সুযোগ নিতে চাইছে তৃণমূলও।
প্রসঙ্গত, বাগদা কেন্দ্র থেকে এবার তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী করা হয়েছে মতুয়া ঠাকুর বাড়ির সদস্য মধুপর্ণা ঠাকুরকে। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সদস্য মমতা বালা ঠাকুরের কন্যা তিনি। এবারই রাজনীতিতে প্রথম পা রাখলেন তিনি। কিছুদিন আগেই তাঁর ঠাকুমা বড়মা বীণাপাণি ঠাকুরের ঘর দখল করার অভিযোগ তুলে বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের বিরুদ্ধে অনশন করেন তিনি।
২৬ বছরের তরুণী মধুপর্ণা সদ্য প্রাণিবিদ্যা নিয়ে স্নাতক হয়েছেন। প্রার্থী হিসাবে তৃণমূল তাঁর নাম ঘোষণার পরেই মধুপর্ণা জানিয়েছিলেন, তিনি রাজনীতিতে একেবারে আনকোরা হলেও রক্তে তাঁর রাজনীতি রয়েছে। নির্বাচনী ময়দানে নামতে তিনি একটুও দ্বিধাগ্রস্থ হননি। বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়ে তিনি কিছু ভাবছেন না এবং তাঁর জয় নিয়ে তিনি আত্মবিশ্বাসী, এমনই দাবি ‘বড়মা’র নাতনির। ১৩ জুলাই বাগদার আসন দলীয় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাতে তুলে দিতে পারবেন, এই ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত।