শুক্রবারই বাংলা পরিদর্শনে প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রী, সারা দেশ আছে বাংলার পাশে, সবরকম সাহায্য করা হবে, জানালেন মোদী

0
721

দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: বুধবার পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে বিধ্বংসী ঘুর্ণিঝড় উমফান। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করলেন, সারা দেশ আজ বাংলার পাশে। ওই রাজ্যকে সবরকম সাহায্য করা হবে।

ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলির মধ্যে রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা, মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি ও কলকাতা। এযাবৎ নথিভুক্ত বঙ্গোপসাগরের সাইক্লোনগুলির মধ্যে উমফান ছিল সবচেয়ে সাংঘাতিক। কলকাতার ওপর দিয়ে চার ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ঝড় বয়ে যায়। মারা যান অন্তত ১২ জন। বহু গাছ উপড়ে যায়। অনেক বাড়ির ক্ষতি হয়।

প্রধানমন্ত্রী এদিন টুইট করে বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের অনেক ছবি দেখলাম। সাইক্লোন উমফান ভয়ংকর ক্ষতি করেছে। এখন খুব কঠিন সময়। সারা দেশ বাংলাকে সংহতি জানাচ্ছে। ওই রাজ্যের মানুষের কল্যাণের জন্য প্রার্থনা করছি। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি যাতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে।”

অপর একটি টুইটে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিপর্যস্ত এলাকায় ন্যাশনাল ডিজাস্টার রিলিফ ফোর্স কাজ করছে। তাঁর কথায়, “প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় অফিসাররা পরিস্থিতির ওপরে নজর রাখছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে কেন্দ্রীয় সরকার।”

বুধবার দুপুর আড়াইটে থেকে পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে উমফানের ল্যান্ডফল হতে থাকে। তারপরেই কলকাতায় শুরু হয় ঝড়। বহু গাছ উপড়ে যায়। বিদ্যুতের লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সর্বনাশ হয়ে গেল।” পরে তিনি বলেন, করোনা অতিমহামারীর থেকেও উমফানে ক্ষতি হয়েছে বেশি।

মোট ক্ষতির পরিমাণ ১ লক্ষ কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তাঁর কথায়, “বহু এলাকা বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছে। সব যোগাযোগ ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।” ঝড়ের আগে পাঁচ লক্ষ মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে আনা হয়েছিল। কিন্তু রাজ্য সরকার আগে বুঝতে পারেনি, ঝড় এত মারাত্মক আকার ধারণ করবে।

বুধবার যখন আমপানে লন্ডভন্ড হয়ে যাচ্ছে বাংলার একটা বিস্তীর্ণ অংশ, তখনই কেন্দ্রের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবেদন ছিল, ‘মানবিকতার জায়গা থেকে বিষয়টা দেখবেন। এটা নিয়ে রাজনীতি চাই না।’ এরপর বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী ফের একবার কেন্দ্রীয় সাহায্যের প্রসঙ্গ তুলে বাংলার পরিস্থিতি নিজে এসে দেখার অনুরোধ জানান। এরপর সন্ধ্যাতেই খবর আসে, আগামীকাল অর্থাৎ শুক্রবারই রাজ্যে আসছেন প্রধানমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে আকাশপথে আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করবেন তিনি।

এদিন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকেও ফোনে ত্রাণ ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাবদ অর্থ সাহায্যের কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘৫০০ দিন বাদে টাকা পেলে লাভ নেই। দ্রুত দরকার। কোভিড-এর টাকা এখনও পাইনি। রাজ্যের ভাঁড়ারে এমনিই টান। তার উপর এই দুর্যোগ।’

বুধবার আমপানের দাপটের সময় তো দূর, রাতে বা এদিন সকালের দিক পর্যন্তও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের। আর তা নিয়েই প্রবল ক্ষোভ উগড়ে উঠল গোটা বাংলাজুড়ে। এমন নয় যে সেই ক্ষোভ তৃণমূলের পরিকল্পনা করে তৈরি। বহু আমজনতাই সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আক্রমণ করেছেন মোদী সরকারের উদ্দেশে।

বাংলার আমজনতার ক্ষোভ অবশ্য শুধু মোদী-অমিত শাহের দিকেই নয়, নিশানায় আছেন এরাজ্যের বিজেপি নেতা-বিজেপি সাংসদরাও। আমপানের ধ্বংসলীলার পর বাংলার বিজেপি নেতৃত্ব কেন কেন্দ্রের কাছে ‘জাতীয় বিপর্যয়’ ঘোষণা করছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, করোনার মধ্যে উম্পুনের দাপটে দিশাহারা বাংলার মানুষ। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হলে আগামী বিধানসভায় তার গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে। তাই দেরি না করে শীঘ্রই মমতার ডাকে সাড়া দিতে হল মোদীকে। যদিও পরিদর্শনের পর কেন্দ্রের তরফে কী সাহায্য আসে, সেটাই দেখার অপেক্ষায় রাজ্য সরকার।

Previous articleআমপানে অন্তত মৃত ৭২,আড়াই লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস, পরিস্থিতি দেখতে মোদীকে আহ্বান মুখ্যমন্ত্রীর
Next articleআজই সকাল ১০টা ১৫ নাগাদ আসছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী,মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আকাশপথে ঘুরে দেখবেন বাংলার আমপান-বিপর্যয়!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here