লিখছেন~ দেবন্বিতা চক্রবর্তী,
আজ শিবরাত্রী, ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশীতে সারা দেশে ধুমধাম করে পালিত হয় শিবরাত্রী । ভোলানাথের মাথায় উপোস করে নিয়মমাফিক চার প্রহরে দুধ জল ঢালেন মেয়েরা ৷কারন জিঞ্জাসা করলেই এক নিমেষে দেঁতো হাসি দিয়ে অনেকে বলবেন , শিবশম্ভুর মতো শান্তশিষ্ট, পত্নীনিষ্ট , ও সর্বদা ধ্যানমগ্ন স্বামী কাম্য সব মেয়েদের, তাই এই পুজো ৷ মোটেই তা নয় ,পুরাণ ঘাটলেই জানা যায় শিবরাত্রীর আসল ইতিহাস ।
প্রথম কারন হিসাবে বলা যায় শিব হলেন আদি ও অনন্ত শক্তির আধার , কেন এমন বলা হয়? প্রশ্ন উঠতেই পারে আমরা সবাই এটুকু জানি, বর্তমান ,অতীত বা ভবিষ্যৎ যাই হোক না কেন কোনো কিছুই প্রশ্নের উর্ধে নয়, এমনকি ভগবান শিব ও এর থেকে পার পান নি ৷ পুরাকালে ভগবান শ্রীবিষ্ণুর নাভী থেকে জন্ম নিলেন শ্রী ব্রহ্মা ৷ ঠিক হল ব্রহ্মা জগৎ সৃষ্টি করবেন আর বিষ্ণু পালন করবেন , সবই চলছিল প্ল্যান অনুযায়ী , হঠাৎ দুজনের মধ্যে প্রবল বাকবিতন্ডা শুরু হয়ে গেল ।কে বেশী শক্তিশালী? এই নিয়ে ৷
তাই যারা এখনকার সমাজিক ও প্রশাসনিক ভাবমূর্তি কে দোষী স্বাবস্ত্য করছেন তারা জেনে রাখুন এই বিবাদ আজকের নয় , জগৎ তৈরীর সময় থেকেই এই পরিস্থিতি শুরু হয়েছে স্বয়ং ভগবান দের দ্বারা ৷ যাইহোক , দুজন যখন প্রায় হাতাহাতি থেকে যুদ্ধের দিকে যাবেন ঠিক করেছেন তখন তাঁরা দেখলেন তাদের সামনে এক জ্যোতির আবির্ভাব হল, যার আদি নেই, অন্ত নেই , এক তীব্রশক্তি তাদের অবিভূত করছে ।
তাঁরা বিহ্বল হয়ে গেলে বজ্রকন্ঠে দৈববানী হল যে তাঁরা পরস্পর মূর্খের ন্যায় বিবাদ করছেন , পৃথিবী সৃষ্টি ও পালনের জন্য এই আদি শক্তি ই তাদের তৈরী করেছেন , তিনিই শৈবশক্তি ,রুদ্রদেব । তৎক্ষনাৎ কনফিউশন ক্লিয়ার করে বিষ্ণু ও ব্রহ্মা শিবের রুদ্রমূর্তিকে শান্ত করার জন্য পুজো শুরু করলেন এই পুজোই আজকের মহা শিবরাত্রী পুজো বলে অভিহিত ৷
কি ভাবলেন গল্প শেষ? তা নয় ….আরও কারন আছে এই দিনটি পালন করার ৷ যেমন
দ্বিতীয় কারনটি আমাদের বাঙালীদের জন্য গ্রহন যোগ্য । পুরাণ বলছে ,এই দিন শিব লিঙ্গ হিসাবে প্রথম প্রকাশ পেয়েছিলেন ৷ শিব ও পার্বতীর বিবাহের দিনটিও এটি , সারা বছর বারোটি শিবরাত্রী পরে , কিন্ত ফাল্গুনের এই দিনটি মহাদেবের বিবাহের দিন বলে মনে করা হয় ৷আর তাই কুমারী মেয়েরা এই দিন শিবের পুজো করলে তাদের তাড়াতাড়ি বিয়ের যোগ আসে বলেও বিশ্বাস অনেকের ৷ নেপালে প্রতি বছর এই দিনটিতে শিব ও পার্বতীর বিবাহ দেওয়া হয় ও প্রতি ঘরে ঘরে তাদের ঘোরানো হয় ৷ মহাকাল এখানে পশুপতি হিসাবে পুজিত হন ৷
তৃতীয় কারন টি হল ……আমরা সবাই জানি সমুদ্রমন্থনের সময় দেবতা ও অসুরের ক্ষমতার প্রদর্শনে যখন কালকূট নামের বিষ উঠতে শুরু করল , বিশ্বসংসার বিষের জ্বলায় জ্বলতে শুরু করল, তখনই আবার ভোলে বাবা এলেন বিশ্বকে বিষমুক্ত করতে । হাকের কোষে বিষ নিয়ে তা তিনি আকন্ঠ পান করে নীলকন্ঠ হয়েছিলেন আজকের দিনে , তার সাধের ত্রিলোক কে আজকের দিনেই বিষমুক্ত করেছিলেন বলে এই ” শিবের মহা রাত্রী ” পুজো করা হয় ৷
এছাড়াও বলা হয় উত্তর গোলার্ধের তিথি নক্ষত্রের এমন বিশেষ এক সহাবস্থান হয় আজকের দিনে যা জপ ,তপ বা সাধনার এক বিশেষ পথ প্রদর্শত করে ৷ এই তিথিটি হিন্দুদের কাছে খুবই পবিত্র বলে গন্য হয় ৷
আজকের দিনটিতে মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র বা শৈব মন্ত্রে জপের দ্বারা মোক্ষ লাভ ও সম্ভবপর হয় বলে অনেকের মত ৷ অনেকেই বিশ্বাস করেন যে আজকের দিনের পুজোতে আধ্যাত্মিকতার ও অন্যান্য অনেক সাধনার ফল শুভ হয় ও মানসিক শক্তি উজ্জীবিত হয় ৷
তাই কেউ যদি শিবরাত্রী পালন করাটা নিতান্ত মেয়েদের পুজো বলে হাসি ঠাট্টা বা মজা করে উড়িয়ে দিতে চায় তাহলে তাদের জন্য বলব শিবপুরানটা এক বার পড়েনিলে ভাল হয়৷