ইন্দ্রজিৎ রায়,শান্তিনিকেতন:

এবছর বিশ্বভারতীর ঐতিহ্যশালী শান্তিনিকেতন পৌষমেলা হবে কিনা তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ঘোর অনিশ্চয়তা। গত ৪ঠা জুন বিকালে শান্তিনিকেতনের লিপিকা প্রেক্ষাগৃহে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর আহবানে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মী, আধিকারিক সহ শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের সদস্যদের উপস্থিতিতে একটি দীর্ঘ বৈঠকের পর সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়,

এই যে আগামী ১৪২৬ সালের শান্তিনিকেতনের পৌষ উৎসবে ঐতিহ্যপূর্ণ অনুষ্ঠান, যথা ৭ই পৌষের সকালে ছাতিম তলায় ব্রম্ভ উপাসনা, পরলোকগত আশ্রমিকদের স্মরণ, মহর্ষি স্মারক বক্তৃতা, বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা ও বার্ষিকী দিবস উদযাপন, সমাবর্তন এবং শান্তিনিকেতন উপাসনা গৃহে খ্রিস্ট উৎসব যথা সমারোহে পালন করবে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু পৌষমেলা পরিচালনার দায়িত্ব এখন থেকে বিশ্বভারতীর পক্ষে নির্বাহ করা সম্ভব হবে না–এই কথা একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়ে বলা হয়েছে।
পরিবেশ আদালত সহ দেশের সংশ্লিষ্ট সব মান্য প্রতিষ্ঠানের পালনীয় শর্তাবলী পূরণ করে এই বিপুল আয়তনের মেলা এককভাবে পরিচালনা করার মতন উপযুক্ত পরিকাঠামোর বিশ্বভারতীর মত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নেই। তাই নিতান্ত নিরুপায় হয়ে এরকম একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে বলে জানিয়েছেন বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার।

উল্লেখ্য, বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার ফলে দূষণ ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করে পরিবেশ আদালতের দ্বারস্থ হন। পরিবেশের কথা মাথায় রেখে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ কয়েকটি কঠোর পদক্ষেপ নেন তারমধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য পৌষমেলায় ঐতিহ্যশালী আতশবাজি পোড়ানোর প্রদর্শনী বন্ধ।

মেলা প্রাঙ্গণে প্লাস্টিকের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেও কিছুটা হলেও সফল হয়েছিল মেলা কমিটি তৎসহ নানাবিধ প্রয়াস করেও গত বছর পর্যন্ত মেলা চালাতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু মেলায় আগত কিছু দর্শনার্থী ও খাবারের দোকান মালিকদের সচেতনতার অভাবে মেলা পরবর্তী দূষণের জন্য পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত বারবার পরিবেশ আদালতের দ্বারস্থ হন।

এই প্রেস বিজ্ঞপ্তি বের হওয়ার পরই শান্তিনিকেতনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। অধিকাংশ শান্তিনিকেতনবাসী, বিশ্বভারতীর পড়ুয়া, প্রাক্তনী তথা আশ্রমিকরা এই সিদ্ধান্তে যথেষ্টই ক্ষুব্ধ। তাদের বক্তব্য এত বড় একটি কর্মযজ্ঞ হলে সেখানে কিছু খামতি থাকবে বলাই বাহুল্য তাই বলে গোটা একটা মেলা যেখানে অনেক কুটির শিল্পী থেকে শুরু করে বাইরে থেকে আসা বিক্রেতারা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে এই মেলায় কিছু উপার্জন করবেন বলে তাদের কাছে এটি একটি বিশাল ধাক্কা। হোটেল ব্যবসায়ীদের এই মেলার সাথে প্রত্যক্ষ যোগ থাকায় তারাও বিপুল ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে ধারণা সকলের।

বিশ্বভারতী‌ সূত্রে জানা গেছে শান্তিনিকেতন পৌষমেলার সঞ্চিত অর্থ কতৃর্পক্ষের কোন তহবিলে জমা তো পড়েইনা উপরন্তু মেলা পরিচালনা করতে গিয়ে বিগত কয়েক বছর ধরে পরিবেশ দূষণ সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলা চলায় লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে বিশ্বভারতীর তহবিল থেকে, তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই এই সিদ্ধান্তে আসতে হয়েছে বলে খবর।

বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এককভাবে মেলা পরিচালনা করবেন না বলায় এখন দেখার বিষয় বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতি সহ হোটেল মালিক সংগঠন এবং অন্যান্য সংগঠন এগিয়ে এসে এই মেলাকে পরিচালনা করে আগামী দিনে পৌষমেলার ঐতিহ্য কে রক্ষা করার কথা ভাবেন কি না, যদি কোন সমাধান সূত্র বের হয় তাহলে তো ভালোই নাহলে কি অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে ঐতিহ্যবাহী একটি মেলবন্ধন উৎসব; বলবে সময়…।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here