দেশের সময় ওয়েব ডেস্কঃ পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় নিহত জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মোমবাতি মিছিলে হাঁটবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার বিকেল চারটের সময় মিছিল শুরু হবে হাজরা মোড় থেকে। যাবে মেয়ো রোডের গান্ধীমূর্তির পাদদেশ পর্যন্ত।
ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর কেন্দ্রীয় সরকার কর্মসূচি বাতিল না করায় সমালোচনায় মুখর হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশ্ন তুলেছিলেন দেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয় নিয়েও। জানা গিয়েছে কাশ্মীরে বড়সড় জঙ্গি হামলা হতে পারে তা গোয়েন্দা রিপোর্টে সতর্ক করা হয়েছিল। নবান্ন থেকে বেরনোর সময় শুক্রবার সন্ধে বেলা সরাসরি বলে দিয়েছিলেন, “অজিত দোভালে কী করছিলেন?” বিশদে তদন্ত না করে কোনও একটি দেশকে দোষারোপ করা ঠিক হবে না বলেও মন্তব্য করেছিলেন মমতা। শনিবার ফের রাস্তায় নামছেন তিনি।
পুলওয়ামা কাণ্ডের পর যখন কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার সরাসরি পাকিস্তানকে কাঠগড়ায় তুলছে এবং কূটনৈতিক ভাবে ইসালামাবাদকে একঘরে করে দেওয়ার চেষ্টা করছে তখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলওয়ামায় আধা সামরিক বাহিনীর উপর ভয়ঙ্কর জঙ্গি হানার পর পরই হামলার দায় স্বীকার করেছিল জইশ ই মহম্মদ। যাদের মাস্টারমাইন্ড মাসুদ আজহার থেকে শুরু করে তামাম জঙ্গি ঘাঁটি রয়েছে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে।
তার পর রাত পোহাতেই নাম না করে পাকিস্তানের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শুক্রবার জানিয়ে দেন, শহিদদের বলিদান ব্যর্থ হতে দেব না। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠকের পর সরকার জানিয়ে দেয়, পাকিস্তানকে বন্ধু হিসাবে যে সরকারি মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হল। পরে দুপুরে ঝাঁসিতে এক সভা থেকেও নাম না করে পাকিস্তানের সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে এও জানিয়ে দেন, পুলওয়ামার ঘটনার পর দেশের মানুষের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। সরকার সেই ভাবাবেগ অনুধাবন করতে পারছে। কখন, কোথায়, কবে প্রত্যাঘাত করা হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে সেনাবাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।
সন্দেহ নেই প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্যে স্পষ্ট ফারাক ধরা পড়ছে। কিন্তু কৌতূহলের বিষয় হল, কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই মন্তব্য করলেন।
এ ব্যাপারে বিজেপি মুখপাত্ররা বলছেন, পুলওয়ামার ঘটনা নিয়েও রাজনীতি করছেন মমতা। তিনি সংখ্যালঘুদের তুষ্ট করার জন্য এতটাই মরিয়া যে পুলওয়ামার ঘটনার পর পাকিস্তানের উপর দোষারোপেও তিনি আপত্তি জানাচ্ছেন।
যদিও মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, পুলওয়ামার ঘটনা নিয়ে রাজনীতি শুরু করে দিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রীই। এ দিন তিনি আরও বলেন, পুলওয়ামায় যা হয়েছে তা নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ওই মর্মান্তিক ঘটনা নিয়েও রাজনীতি শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উচিত ছিল এ দিনের সরকারি অনুষ্ঠান বাতিল করে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে দেওয়া।
পর্যবেক্ষকদের মতে, মমতা পোড় খাওয়া রাজনীতিক। তিনি হয়তো তুষ্টীকরণের রাজনীতি করার জন্য তদন্তের প্রসঙ্গ তোলেননি। ইতিমধ্যেই অবশ্য পুলওয়ামার ঘটনার পর অনেকের মনে হচ্ছে, এটাও কোনও ষড়যন্ত্র নয় তো? কারণ, গোয়েন্দা সূত্রে আগাম খবর থাকা সত্ত্বেও, এই ভয়ঙ্কর জঙ্গি হানা কেন আটকানো গেল না সেটা বড় প্রশ্ন। বিশেষ করে পাঠানকোটে বায়ুসেনা ছাউনি এবং উরিতে সেনা ছাউনিতে হামলার পর সরকার কেন সতর্ক হয়নি সেই প্রশ্নও উঠছে। বস্তুত, উনিশের ভোটের আগে পাকিস্তানের সঙ্গে একটা যুদ্ধ বাধানোর চেষ্টা হতে পারে বলে জল্পনা রাজনৈতিক শিবিরে অনেক আগে থেকেই ছিল। সম্ভবত, মমতা সেই সন্দেহ মানুষের মধ্যে আরও জাগিয়ে তুলতে চাইছেন।
পুলওয়ামা কাণ্ডের পর যখন কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার সরাসরি পাকিস্তানকে কাঠগড়ায় তুলছে এবং কূটনৈতিক ভাবে ইসালামাবাদকে একঘরে করে দেওয়ার চেষ্টা করছে তখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।