দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ করোনার থাবায় বদলাতে বাধ্য হয়েছে দুনিয়া। বদলেছে নিয়ম, রীতি–নীতি, পেশা, জীবন যাপন। এবার করোনার থাবা পড়ল ভারতের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনেও। এত বছরের রীতি ভেঙে যেতে চলেছে ২০২০ সালে।
করোনা আবহে এবছর সব সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানেই অনেক নিয়ম-নীতি মানতে হচ্ছে। একই রকমের নিয়ম মানতে হবে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানেও। শুক্রবার গাইডলাইন দিয়ে তা জানিয়ে দিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। এই গাইডলাইনে জানানো হয়েছে দিল্লির লালকেল্লায় প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান কিছুটা ছোট হচ্ছে। ঠিক তেমনই বাকি দেশের অর্থাৎ সব রাজ্য, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, জেলা এমনকি পঞ্চায়েত স্তরে কী ভাবে স্বাধীনতা দিবস পালন করা হবে, তারও গাইডলাইন দিল কেন্দ্র।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে জারি গাইডলাইনে বলা হয়েছে, প্রতি বছরের মতো এবছরও সারা দেশে স্বাধীনতা দিবস পালন করা হবে, তবে বর্তমানের করোনা সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে সব জায়গায় সামাজিক দূরতে মেনে চলতে হবে। মুখে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। স্যানিটাইজারের ব্যবহার বাধ্যতামূলক। এছাড়া কোথাও যাতে বড় জমায়েত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে প্রশাসনকে।
দিল্লিতে প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবসের দিন সকালে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পতাকা তোলেন প্রধানমন্ত্রী। এবারেও সেই অনুষ্ঠান হবে। তবে তা কিছুটা ছোট করা হয়েছে। অর্থাৎ এ বছর লালকেল্লার অনুষ্ঠান শুরু হবে প্রধানমন্ত্রীকে সশস্ত্র বাহিনী ও দিল্লি পুলিশের গার্ড অফ অনার দেওয়ার মাধ্যমে। তারপরে পতাকা উত্তোলন করবেন প্রধানমন্ত্রী। ভারতের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হবে। ২১ তোপের সেলামি দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। তারপর ফের একবার জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হবে ও তেরঙা বেলুন আকাশে ছেড়ে অনুষ্ঠান শেষ করা হবে।
কেন্দ্রের তরফে গাইডলাইন দিয়ে বলা হয়েছে রাষ্ট্রপতি ভবনে রাষ্ট্রপতি এবং সব রাজভবনে রাজ্যপালরা এই অনুষ্ঠান পালন করতে পারেন। তবে সব জায়গায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের জারি করা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এই গাইডলাইনে। সেখানে বলা হয়েছে, সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে সকাল ৯টার পরে পতাকা উত্তোলন হবে। রাজ্যের ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী পতাকা উত্তোলন করবেন। তাঁকে পুলিশ, আধা-সামরিক বাহিনী, হোম গার্ড, এনসিসির সদস্যরা গার্ড অফ অনার দেবেন। জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রীরা ভাষণ দেবেন।
তবে করোনা আবহে সব জায়গায় যেন জন-সমাগম কম হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাঁরা আসবেন, তাঁরা যেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেন, মাস্ক পরেন, স্যানিটাইজারের ব্যবহার করেন সেদিকে নজর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এইসব অনুষ্ঠানে করোনা যোদ্ধা অর্থাৎ ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্মান জানানোর জন্য তাঁদের আমন্ত্রণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া করোনাকে হারিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষদেরও আমন্ত্রণ জানানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রের তরফে।
রাজ্যগুলিকে যে নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে সেই একই নির্দেশিকা জেলাস্তর, মহকুমা স্তর ও পঞ্চায়েত স্তরের প্রশাসনকেও জানানো হয়েছে। অর্থাৎ সব জায়গায় অনুষ্ঠান হবে। কিন্তু তার আয়তন অনেক ছোট হবে। কেন্দ্রের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
এছাড়া স্বাধীনতা দিবসের দিন রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় জায়ান্ট স্ক্রিন ও মাইক বসিয়ে এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পুলিশ ও মিলিটারি ব্যান্ডের পারফরম্যান্স দেখানো হতে পারে বলে জানানো হয়েছে কেন্দ্রের গাইডলাইনে। বৃক্ষরোপণ করা যেতে পারে, কুইজ, গান, নাচ, দেশাত্মবোধক বক্তৃতার প্রতিযোগিতা হতে পারে ওইদিনে। সরকারের তরফে কোনও বিল্ডিংয়ের উদ্বোধন বা কোনও প্রকল্পের সূচনা হতে পারে বলেও জানানো হয়েছে গাইডলাইনে।
দেশের প্রতি ভালবাসা জানানোর জন্য সোশ্যাল মিডিয়াকেও ব্যবহার করা যেতে পারে বলে জানানো হয়েছে এই গাইডলাইনে। এছাড়া বাড়ির ছাদ থেকে কিংবা ব্যালকনি থেকে জাতীয় পতাকা উড়িয়েও এই দিন সেলিব্রেট করা যেতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আত্মনির্ভর ভারতের মন্ত্রকে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ারও বার্তা দেওয়া হয়েছে এই গাইডলাইনে।
প্রতি বছর লালকেল্লায় স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে ভিড় জমান হাজার হাজার মানুষ। পতাকা তুলে বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রী। এ বছর লালকেল্লায় উদযাপন হবে বটে! তবে করোনা–বিধি মাথায় রেখে নিমন্ত্রিত থাকছেন মাত্র ২৫০ জন। যাতে সামাজিক দূরত্ব–বিধি বজায় রাখা যায়। একথা জানাল আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া। প্রতি বছর আমন্ত্রিত থাকেন ৯০০ থেকে ১০০০ জন। এবার সেই তালিকায় কাটছাঁট।
প্রতিবার স্কুল পড়ুয়ারা তিরঙ্গার রঙের পোশাক পরে উপস্থিত থাকে লালকেল্লার অনুষ্ঠানে। এবার স্কুল পড়ুয়ারাও আর উপস্থিত থাকছে না স্বাধীনতা দিবস অনুষ্ঠানে। ন্যাশনাল ক্যাডেট কর্পস ছাড়া আর কারও থাকার অনুমতি নেই। পরিচ্ছন্নতার দিকে বাড়তি নজর রাখা হচ্ছে। লালকেল্লা চত্বরে স্যানিটাইজেশন পয়েন্ট থাকবে। সেখানে অতিথি এবং রক্ষীরা স্যানিটাউজ করে নিতে পারবেন। ১৫ আগস্ট লাল কেল্লায় কর্মরত পুলিশ এবং অন্যান্য নিরাপত্তারক্ষীরা পিপিই কিট পরে থাকবেন। জানালেন ডিসিপি (উত্তর) মণিকা ভরদ্বাজ।
স্বাধীনতা দিবসের বিকেলে প্রতিবছরই রাষ্ট্রপতি ভবনে আয়োজিত হয় অ্যাট হোম অনুষ্ঠান। এ বছর সেই অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচ্য বিষয় হবে দেশের করোনা যোদ্ধারা। জানা গিয়েছে, রাষ্ট্রপতি ভবনে আমন্ত্রণ পেতে পারেন স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব এবং চিকিত্সকরা। তবে কত জন আমন্ত্রিত হবে সেখানে, তাঁরা কে কে, কোন হলে আয়োজিত হবে অনুষ্ঠান এবং চা পরিবেশিত হবে কি না তা নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা এখনও হয়নি। সূত্রের খবর, অগস্ট মাসে দেশের করোনা পরিস্থিতির খতিয়ে দেখে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।